শেষ আপডেট: 18th May 2020 03:26
পশ্চিম মেদিনীপুরের আনন্দপুরে গ্রামের বাইরে অস্থায়ী তাঁবুতে কোয়ারেন্টাইন সেন্টার, গ্রামবাসীদের স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত, সানন্দে মানছেন শ্রমিকরা
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ফিরেও ফেরা হচ্ছে না। এত দিন পরে গ্রামে ফিরেও মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে পারছেন না রবীন্দ্রনাথ মণ্ডল। তিনি একা নন। কোয়েম্বত্তুর ও চেন্নাই থেকে ফেরা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার আনন্দপুর থানার পোড়াকাটা ও পাচরা এলাকার সব শ্রমিকের একই অবস্থা। বাড়ির বাইরে অস্থায়ী তাঁবুতে তাঁদের থাকতে হচ্ছে। গ্রামবাসীদের নিদান সেটাই। পরিবারের স্বার্থে গ্রামে ফেরা মানুষজন তা মানছেন সানন্দে।
পেটের টানে সুদূর কোয়েম্বত্তুরে পাড়ি দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ মণ্ডল। গ্রামে ফিরেছেন সম্প্রতি তবে স্ত্রী ও মেয়ের কাছে যেতে পারছেন না। পাঁচ বছরের ছোট্ট অনুষ্কা দূর থেকেই বাবার সঙ্গে কথা বলছে।
বাড়িতে ফিরে এলেও তাঁদের গ্রামে ঢুকতে দিচ্ছেন না স্থানীয় বাসিন্দারা। ফেরার পর ১৪ দিন গ্রামের বাইরে তাঁদেরকে কাটাতে হবে বলে তাঁরা ‘নির্দেশ’ দিয়েছেন। তবে ‘নির্দেশ’ দিয়েই দায় সেরেছেন এমন নয়। গ্রামের মানুষের উদ্যোগে তৈরি হয়েছে অস্থায়ী বাড়ি। রং-বেরঙের কাপড়ে তৈরি সেই অস্থায়ী ‘বাড়ি’। সেখানে বাইরে থেকে আসা প্রত্যেককেই চোদ্দো দিন কাটাতে হচ্ছে।
তমাল নদীর পাড়ে জাম বাগানে তৈরি হয়েছে অস্থায়ী ক্যাম্প তৈরি করে দিয়েছেন গ্রামের লোকেরা। কেশপুর থানার পড়াকাটা গ্রামের আটজন বাসিন্দার অস্থায়ী ঠিকানা এখন এটাই। তাঁরা থাকতেন তামিলনাড়ুর কোয়েম্বত্তুরে।
দু’ লক্ষ তিরিশ হাজার টাকা গাড়ি ভাড়া দিয়ে সম্প্রতি মেদিনীপুর এসে পৌঁছেছে ৩০ জন শ্রমিকের একটি দল। জেলার আনন্দপুর থানার আটজন। বাকিরা দাসপুর ও ঘাটাল এলাকার বাসিন্দা। এঁরা প্রত্যেকেই স্বর্ণশিল্পের সঙ্গে যুক্ত।
এ রাজ্যে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁদের প্রত্যেকের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। তার পরে তাঁদের হোম কোয়ারেন্টাইনের নির্দেশ দিয়ে গ্রামে পাঠানো হয়েছে। তবে বাড়িতে তাঁরা ফিরছেন না। গ্রামের মানুষের স্বার্থে তো বটেই এতে তাঁদের নিজেদের স্বার্থও রয়েছে। তাই তাঁরা গ্রামের বাইরে থাকবেন ১৪ দিন। এতে তাঁদের পরিবারও সুরক্ষিত থাকবে।
পশ্চিম মেদিনীপুরের মোহনপুর ব্লকের রামপুরহাট গ্রামের বাইরে তাঁবু খাটানো হয়েছে বাইরে থেকে আসা মানুষজনের জন্য। ওই গ্রামের ১৬০ জন বাইরে রয়েছেন। তাঁরা বিভিন্ন জায়গা থেকে গ্রামে ফিরছেন। সম্প্রতি দিল্লি থেকে ফিরেছেন পাঁচজন। গ্রামের মানুষের স্বার্থে তাঁরাও ১৪ দিন গ্রামের বাইরে কাটাচ্ছেন।