শেষ আপডেট: 8th June 2020 03:10
বিস্ফোরক মহুয়া: টেন্ডার এড়াতে কম টাকার কাজ করছে পঞ্চায়েত, অর্ধেক টাকা খরচই হচ্ছে না
দ্য ওয়াল ব্যুরো: এত দিন বিরোধীরা অভিযোগ করতেন, তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েতগুলি বড় অঙ্কের কোনও প্রকল্পই নেয় না, পাছে টেন্ডার ডাকতে হয়! কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেসের কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্রই তা নিয়ে পঞ্চায়েতগুলির বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিলেন। চার দেয়ালের মধ্যে কোনও দলীয় সভায় নয়। একেবারে হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিয়েছেন এই সাংসদ। ফেসবুকে ভিডিও বার্তা পোস্ট করে মহুয়া স্পষ্ট বলেছেন, অর্ধেক পঞ্চায়েত পাঁচ লক্ষের বেশি টাকার কোনও প্রকল্পে হাতই দেয় না। কারণ টেন্ডার ডাকতে হবে। এতদিন পর্যন্ত বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, গ্রামে গ্রামে পঞ্চায়েতগুলিতে লুঠ চলছে। টেন্ডারবিহীন কাজের মধ্যে দিয়ে কাটমানির রমরমা চালাচ্ছেন শাসকদলের নেতারা। মহুয়ার এই বক্তব্য শুনে তাঁদের অনেকেই বলছেন, তৃণমূলের সাংসদই জনসমক্ষে মেনে নিয়েছেন টেন্ডারের ভয়ে বড় কাজে হাত দেয় না পঞ্চায়েতগুলি। https://www.facebook.com/MahuaMoitraOfficial/videos/705634140269770/ মহুয়া ওই ভিডিও বার্তায় বলেছেন, চতুর্দশ অর্থ কমিশনের টাকা বহু জায়গায় খরচই হয়নি। কয়েকদিনের মধ্যে পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের টাকা ঢুকে যাবে। সেই টাকা খরচ হলে তাঁর লোকসভা কেন্দ্রের ৮২টি পঞ্চায়েতে অন্তত একটিও কাঁচা রাস্তা থাকার কথা নয় বলে দাবি মহুয়ার। কৃষ্ণনগরের সাংসদ বলেন, গড়ে প্রতিটি পঞ্চায়েত বছরে এক কোটি ২০ লক্ষ টাকা করে পায়। অর্থাৎ পাঁচ বছরে পায় প্রায় ছ'কোটি টাকা। তিনি এও বলেন, এর মধ্যে বেশ কিছু আইএসজিপি রয়েছে। আইএসজিপি-র পুরো কথা ইনস্টিটিউশনাল স্ট্রেনদেনিং অফ গ্রাম পঞ্চায়েতস। অর্থাৎ প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে পঞ্চায়েত কাঠামোকে শক্তিশালী করে তোলা। এই প্রকল্প বাবদ কিছু পঞ্চায়ত বছরে দু'কোটি টাকা পায়। অর্থাৎ পাঁচ বছরে ১০ কোটি টাকা। তাঁর কথায়, এই টাকা সঠিক ভাবে খরচ হলে অনেক কাজ হয়ে যায়। পরিকল্পনার যে অভাব রয়েছে তা স্পষ্ট করে দেন তৃণমূল সাংসদ। মহুয়া আরও বলেন, রাজ্য সরকার ২০১৪ সালে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল পাঁচ লক্ষ টাকার বেশি কাজ হলে ই-টেন্ডার ডাকতে হবে। কিন্তু সেই পরিকাঠামো যে বহু জায়গায় গড়ে ওঠেনি সে কথা অকপটে বলে দিয়েছেন তিনি। যদিও বিরোধীদের বক্তব্য, ই-টেন্ডারের ব্যবস্থা ইচ্ছাকৃত ভাবেই বাস্তবায়িত করা হয়নি। সেটা হলে গ্রামে গ্রামে রাস্তা হত, নিকাশি ব্যবস্থা গড়ে উঠত। স্থানীয় তৃণমূল নেতার টালির বাড়ি রাতারাতি মার্বেলের হত না। যদিও ওই ভিডিও বার্তায় মহুয়া বলেছেন এটা তিনি কোনও দলকে বলছেন না বা বিরোধী ও মিডিয়ার খোরাকের জন্য বলছেন না। তিনি বলছেন মানুষকে সতর্ক করতে। সাংসদের মুখে এ কথা শুনে আবার অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, তাহলে কি দলের পঞ্চায়েত প্রধানদের বিরুদ্ধেই সাধারণ মানুষকে খেপিয়ে দিতে চাইলেন মহুয়া? পঞ্চায়েত ব্যবস্থা নিয়ে তৃণমূল সাংসদের এ হেন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানতে যোগাযোগ করা হয়েছিল রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে। তিনি বলেন, "আমি ফেসবুক করি না। তাই ফেসবুকে কে কী বললেন তার জবাব দেওয়া সমীচীন হবে না। আমি আমার দফতরকে বলব খোঁজ নিতে। তারপর প্রতিক্রিয়া দেব।" মহুয়া আরও বলেছেন, "পঞ্চায়েতের কাজ মানে শঙ্কর সিংয়ের বাড়ি পর্যন্ত ৬০ মিটার রাস্তা কিংবা শঙ্কর সিংয়ের বাড়ি থেকে রুকবানুর রহমানের বাড়ি পর্যন্ত ৬০ মিটার রাস্তা করা নয়। বড় রাস্তা করতে হবে। নিকাশি, সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট, শৌচালয় তৈরি, স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরির ইউনিট গড়ার কাজের মতো বড় প্রকল্প নিতে হবে।" উপর তলা থেকে রিভিউ হবে বলে অনেক পঞ্চায়েত সাড়ে তিন লক্ষ টাকার বেশি কাজে হাতই দেয় না বলে অভিযোগ সাংসদের। এদিন মহুয়ার মন্তব্য নিয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, "আমরা তো কবে থেকেই বলছি তৃণমূলের পঞ্চায়েত মানেই লুঠের রাজত্ব। মহুয়া মৈত্র তৃণমূলের সাংসদ। ওঁরাই এখানে সরকারে। সুতরাং সব দায়িত্ব ওঁদেরই নিতে হবে।"