সুপার সাইক্লোন ‘আমফান’ ধেয়ে আসছে রাজ্যের দিকে, কী ভাবে সৃষ্টি হয় ঘূর্ণিঝড়ের, কেমন তার গঠন
দেবার্ক ভট্টাচার্য্য
শক্তি বাড়িয়ে সুপার সাইক্লোনে পরিণত হয়েছে ঘূর্ণিঝড় আমফান। প্রচন্ড গতিতে তা ধেয়ে আসছে রাজ্যের দিকে। আমফানের অক্ষের গতিবেগ বর্তমানে ২৩০ কিলোমিটার। মধ্য বঙ্গোপসাগরে আসতে আসতে আমফানের অক্ষের গতিবেগ আরও বেড়ে ২৫০ থেকে ২৬০ কিলো
শক্তি বাড়িয়ে সুপার সাইক্লোনে পরিণত হয়েছে ঘূর্ণিঝড় আমফান। প্রচন্ড গতিতে তা ধেয়ে আসছে রাজ্যের দিকে। আমফানের অক্ষের গতিবেগ বর্তমানে ২৩০ কিলোমিটার। মধ্য বঙ্গোপসাগরে আসতে আসতে আমফানের অক্ষের গতিবেগ আরও বেড়ে ২৫০ থেকে ২৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে বলেই জানিয়েছে আলিপুর।
বুধবার পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপ ও বাংলাদেশের হাতিয়া দ্বীপের মধ্যে ল্যান্ডফল হওয়ার কথা এই সুপার সাইক্লোনের। ল্যান্ডফলের সময় আমফানের গতিবেগ ১৯৫ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা। আর সেরকম হলে পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রতিদিনই বৈঠক করছে কেন্দ্র ও রাজ্য। একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে আমফানের মোকাবিলা করার জন্য।
কিন্তু কী এই ঘূর্ণিঝড়? কীভাবে তা সৃষ্টি হয়? কী তার গঠন?
সোজা ভাষায় বলতে গেলে নিম্নচাপ বিশিষ্ট ঝড়কে ঘূর্ণিঝড় বলে। সাধারণত সমুদ্রের জলের উপরিভাগের তাপমাত্রা ২৬ ডিগ্রি বা তার বেশি হলে নিম্নচাপ তৈরি হয়। তাপমাত্রা যত বাড়তে থাকে, সমুদ্রের জল তত বাষ্পীভূত হয়। বাষ্পীভূত হয়ে তা উপরের দিকে উঠতে থাকে। ফলে একটা শূণ্যস্থানের সৃষ্টি হয়। চাপের সমতা রক্ষার জন্য আশেপাশের উচ্চচাপ যুক্ত অঞ্চল থেকে শীতল বায়ু সেই শূণ্যস্থানের দিকে ছুটে আসে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের দিকে ছুটে আসা এই দ্রুত ও ঘূর্ণায়মান বায়ুপ্রবাহকে ঘূর্ণিঝড় বলে।
ঘূর্ণিঝড় মূলত দু’ধরণের হয়।১) ক্রান্তীয় অঞ্চলের ঘূর্ণিঝড়, ২) নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের ঘূর্ণিঝড়।
নিরক্ষরেখার ৫ ডিগ্রি থেকে ২০ ডিগ্রি উত্তর ও দক্ষিণে যে ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয় তাকে ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় বলে। বঙ্গোপসাগরের উপর তৈরি হওয়া ঘূর্ণিঝড় হলো এই ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়। ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ ও শক্তি নতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের ঘূর্ণিঝড়ের থেকে বেশি হয়ে থাকে।
এই ঘূর্ণিঝড়ের একটা নির্দিষ্ট গঠন রয়েছে।ঝড়ের চোখ: ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রকে বলা হয় ঝড়ের চোখ। এটি সাধারণত ১০ থেকে ১০০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধ যুক্ত হয়।
মেঘের দেওয়াল: কেন্দ্রের চারপাশে মূলত কিউমুলোনিম্বাস মেঘের যে আস্তরন তৈরি হয়, তাকে মেঘের দেওয়াল বলা হয়। এটি ১০ থেকে ২০ কিলোমিটার বিস্তৃত একটি অঞ্চল। এখানে ঝড়ের গতি সবথেকে বেশি হয়।
স্পাইরাল ব্যান্ড: মেঘের দেওয়ালকে ঘিরে থাকে দুটি স্পাইরাল ব্যান্ড। এই ব্যান্ডগুলি কয়েকশ কিলোমিটার দীর্ঘ হয়। উপগ্রহ চিত্রে এগুলিকে গ্যালাক্সির মতো দেখায়। এই ব্যান্ডগুলিকে রেন ব্যান্ড বা ফিডার ব্যান্ডও বলা হয়।
বহিঃসীমা অঞ্চল: ঘূর্ণিঝড়ের সবথেকে বাইরের অঞ্চলকে বহিঃসীমা অঞ্চল বলা হয়। এই অঞ্চলই সবথেকে আগে স্থলভাগে আঘাত করে।
ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ অনুযায়ী এর পাঁচটি ভাগ রয়েছে। ট্রপিক্যাল সাইক্লোন: ঝড়ের গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার হলে তাকে ট্রপিক্যাল সাইক্লোন বলে।
সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম: যখন ঝড়ের গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ থেকে ১১৭ কিলোমিটার হয়।
ভেরি সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম: এ ক্ষেত্রে ঝড়ের গতিবেগ ঘণ্টায় ১১৮ থেকে ১৬৫ কিলোমিটার হয়।
এক্সট্রিমলি সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম: যখন ঝড়ের গতিবেগ ঘণ্টায় ১৬৬ থেকে ২২০ কিলোমিটার হয়।
সুপার সাইক্লোন: ঝড়ের গতিবেগ ২২০ কিলোমিটারের বেশি হলে তাকে সুপার সাইক্লোন বলে।