কংগ্রেস থেকে সিপিএম হয়ে বিজেপি, হেমতাবাদের বিধায়কের রাজনৈতিক জীবন অনেক লম্বা
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ঠিক যেন গত পঞ্চায়েত ভোটের সময়ের পুরুলিয়ার বলরামপুরের ছবি। রাঢ় বাংলার সেই জেলায় যে ভাবে ত্রিলোচন মাহাতো, দুলাল কুমারদের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়েছিল, সোমবার সকালে দেখা গেল একই ভাবে একটি দোকানের টালির চাল থেকে ঝুলছে উত্তর দিনাজপু
শেষ আপডেট: 13 July 2020 06:19
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ঠিক যেন গত পঞ্চায়েত ভোটের সময়ের পুরুলিয়ার বলরামপুরের ছবি। রাঢ় বাংলার সেই জেলায় যে ভাবে ত্রিলোচন মাহাতো, দুলাল কুমারদের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়েছিল, সোমবার সকালে দেখা গেল একই ভাবে একটি দোকানের টালির চাল থেকে ঝুলছে উত্তর দিনাজপুরের হেমতাবাদের বিজেপি বিধায়ক দেবেন্দ্রনাথ রায়ের দেহ। সাদা ফুলহাতা শার্ট, নীল লুঙ্গি, গলায় ফাঁসের সঙ্গে সঙ্গে বাঁ হাতটাও দড়ি দিয়ে বাঁধা। এই মৃত্যু নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজ্য রাজনীতিতে তোলপাড় পড়ে গিয়েছে। তবে রহস্যজনক ভাবে মৃত বিধায়কের রাজনৈতিক জীবন অনেক লম্বা। তিরিশ বছরের বেশি সময় ধরে রাজনীতিতে ছিলেন তিনি।
১৯৭৭ সালের ২১ জুন যখন জ্যোতি বসু প্রথম বামফ্রন্টের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিচ্ছেন, তরুণ দেবেন্দ্রনাথ রায় তখন কংগ্রেস করতেন। এরপর প্রথম বামফ্রন্টের অপারেশন বর্গা কর্মসূচি গাঁয়ে গাঁয়ে বাস্তবায়িত হওয়ার ফলে আটের দশকের গোড়ায় বাম আন্দোলনের স্রোতে গা ভাসান তিনি। যোগ দেন সিপিএমে।
সেই শুরু সিপিএম কর্মী হিসেবে হেমতাবাদে কাজ করা। শুধু তিনি নন। তাঁর স্ত্রীও সিপিএমের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। নয়ের দশকে দেবেন্দ্রনাথবাবুকে পঞ্চায়েতে প্রার্থী করে সিপিএম। হেমতাবাদের বিন্দোল গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান হন তিনি। টানা তিনবার পঞ্চায়েত প্রধান হন দেবেন্দ্রনাথবাবু।
পঞ্চায়ে

তের কাজকর্ম করার মধ্যেই সমবায় আন্দোলনে যুক্ত হন রহস্যজনকভাবে মৃত বিধায়ক। বিশেষত কৃষক সমবায় আন্দোলন গড়ে তোলার কাজে সিপিএম তাঁকে ব্যবহার করেছিল সেই সময়ে। এরপর পঞ্চায়েতের দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে রায়গঞ্জ ব্লকের মোহিনীগঞ্জ কৃষি সমবায়ের ম্যানেজারের দায়িত্বে যান তিনি। সেই সময়ে তাঁর স্ত্রীকে বিন্দোল পঞ্চায়েতের প্রধান করে সিপিএম।
গ্রামীণ বাম আন্দোলনের মূল দুটি স্তম্ভই পঞ্চায়েত এবং কৃষি সমবায়। স্বাভাবিক ভাবে দুটি জায়গাতেই দেবেন্দ্রনাথবাবু ছাপ রেখেছিলেন দীর্ঘদিন যাবৎ। এলাকায় জনপ্রিয়ও ছিলেন। ১৬-র ভোটে তাঁকে বাম-কংগ্রেস জোট প্রার্থী হিসেবে টিকিট দেয় সিপিএম। প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সির জেলায় জিততে অসুবিধা হয়নি দেবেন্দ্রনাথবাবুর। কিন্তু গত বছর অনেকের সঙ্গেই বিজেপি সদর দফতরে চলে যান তিনি। যোগ দেন গেরুয়া শিবিরে।
সিপিএম সূত্রে জানা যাচ্ছে, পঞ্চায়েত ও সমবায় নিয়ে থাকলেও তাঁকে কখনওই দলীয় কমিটির উঁচু জায়গায় স্থান দেওয়া হয়নি। এমনকি দলের লোকাল কমিটি বা জোনাল কমিটিরও সদস্য ছিলেন না তিনি। সাধারণ পার্টি সদস্য হিসেবেই কাজ করতেন। তবে ২০১৬ সালে বিধায়ক হওয়ার পর, ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসের জেলা সম্মেলন থেকে তাঁকে জেলা কমিটির সদস্য করা হয়েছিল। বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর তাঁকে বহিষ্কার করে সিপিএম।
চিরকালই কম কথার মানুষ ছিলেন দেবেন্দ্রনাথবাবু। বিধানসভার অধিবেশন কক্ষেও তাঁকে বিশেষ সরব হতে দেখা যায়নি। দক্ষিণবঙ্গের এক সিপিএম বিধায়ক তাঁর মৃত্যুর খবর পেয়ে বলেন, "উনি চিরকালই কম কথা বলতেন। বিজেপিতে যোগ দেওয়ার সপ্তাহখানেক আগে ওঁর সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল লেনিন সরণির তালতলার জিডি হাসপাতালে। উনি আমায় দেখে হাসলেনও। কিন্তু ওঁর কিছু টাকা পয়সা কম পড়েছিল। সেটা আমায় বলেননি। চিকিৎসা না করিয়েই ফিরে গিয়েছিলেন। পরের দিন বিধানসভায় গিয়ে আমি জানতে পারি হাজার পাঁচেক টাকা কম পড়ায় উনি ওইদিন চিকিৎসা না করিয়েই ফিরে এসেছিলেন।"
বহিঃষ্কার করলেও দীর্ঘদিনের কর্মী তথা সমবায় আন্দোলনের নেতার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছে সিপিএম। দলের রাজ্য কমিটির সদস্য তথা উত্তর দিনাজপুর জেলার সম্পাদক অপূর্ব পাল বলেন, "যে ভাবে দেহ উদ্ধার হয়েছে তা যথেষ্ট সন্দেহজনক। এর পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হওয়া উচিত।"