শেষ আপডেট: 1st August 2020 06:24
দ্য ওয়াল ব্যুরো, হাওড়া: ঘুড়ির সুতো বিশেষ করে চাইনিজ মাঞ্জার সুতো আটকে প্রাণ হারাচ্ছে পাখি এমনকি গাছও। ঘুড়ি সুতো গলায় আটকে লোকজন মারাত্মক আহত হয়েছেন বিভিন্ন জায়গায়। কলকাতার মা উড়ালপুলেও মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটেছিল। এবার সামনে এল হাওড়ার শিবপুর জগদীশচন্দ্র বসু ভারতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের একটি গবেষণায়। বিশেষ করে এই ঘটনা আরও বেড়েছে করোনা পরিস্থিতির মধ্যে। একথা জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
লকডাউন এবং আংশিক লকডাউনের জেরে তো বটেই একই সঙ্গে করোনার আশঙ্কা থাকায় লোকজন অনেকটাই গৃহবন্দি। ক্লাবে যাওয়া ও মাঠে খেলতে যাওয়া বন্ধ। এই অবস্থায় সময় কাটানোর জন্য ঘুড়ি ওড়ানোর প্রবণতা বেড়েছে। গঙ্গার ওপারে মেটিয়াবুরুজ অঞ্চল এবং বি গার্ডেন সংলগ্ন নাজিরগঞ্জ ও অন্যান্য এলাকা থেকে ঘুড়ি কেটে এসে পড়ছে বি গার্ডেনে। সেই ঘুড়ির সুতোয় আটকে পড়ছে পাখিরা। মারা যাচ্ছে অনেক পাখি। উদ্যানের অধিকর্তা কণাদ দাস জানান, “উদ্যানে ৮৪টি প্রজাতির পাখি আছে। যার মধ্যে বাদুড় পেঁচাও রয়েছে যারা রাতের অন্ধকারে চাইনিজ মাঞ্জা সুতোয় আটকে পড়ে বিপদে পড়ছে। এ ছাড়া দিনের বেলাতেও পাখিরা বিপদে পড়ছে। উদ্যান কর্মীরা দেখতে পেলেই ছুটে যান উদ্ধার করতে।”
[caption id="attachment_245844" align="aligncenter" width="1280"] সুতোয় আটকে গেছে পাখি। (নীচে) উদ্ধার করছেন কর্মীরা।[/caption]
শুধু পাখিদের নয়, মাঞ্জার সুতোয় প্রাণ যাচ্ছে গাছেরও। ২০১৭ সালে এই উদ্যানের বিজ্ঞানীরা দেখেন যে লতা গুল্মে ঢাকা পড়ে সূর্য্যের আলো ঠিক মতো পাচ্ছে না অনেক গাছ। ফলে সেগুলো মারা যাচ্ছে। উদ্যানের বিজ্ঞানী বসন্ত সিংহ জানান, লতাগাছ এমনি এমনি উঠতে পারে না যদি কোনও অবলম্বন না পায়। উদ্যানে দেখা যাচ্ছে যে কেটে আসা ঘুড়ির লম্বা সুতোকে অবলম্বন করে এক গাছ থেকে অন্য গাছে পৌঁছে যাচ্ছে লতানে উদ্ভিদ। উদ্যানের রাস্তার আশেপাশে এ ধরনের সুতো দেখলে ছিঁড়ে ফেলে দেওয়া হয়। কিন্তু যেখানে বন হয়ে রয়েছে সে সব জায়গায় সুতো সরানো সম্ভব হয় না।
[caption id="attachment_245847" align="aligncenter" width="1280"]
বৃক্ষজাতীয় গাছ ঢেকে গেছে লতাগাছে। পাচ্ছে না সূর্যের আলো।[/caption]
কর্তৃপক্ষের মতে যেখানে চিনা মাঞ্জা সুতো সরকার থেকে ব্যান করা হয়েছে সেখানে কী ভাবে এগুলো বিক্রি হচ্ছে সে ব্যাপারে প্রশাসনের আরও সজাগ হওয়া উচিত। না হলে মানুষ তো বটেই পাখি, অন্য বন্যপ্রাণী এবং গাছপালাও ভবিষ্যতে বিপদে পড়বে।
[caption id="attachment_245848" align="aligncenter" width="738"]
সুতো বেয়ে উঠছে গাছ।[/caption]
প্রকৃতিপ্রেমিক প্রীতম চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ঘুড়ি ওড়াতে আগে ব্যবহার করা হত তুলোর তৈরি সুতো যা বেশ পড়ে থাকলে কিছু দিন পরে নস্ট যায়। কিন্তু বর্তমানে ঘুড়ি ওড়াতে যে চাইনিজ মাঞ্জা সুতো ব্যবহার করা হচ্ছে তা সহজে পচে নষ্ট হচ্ছে না। নষ্ট হতে অনেক সময় লাগছে। যার ফলে এই বিপত্তি। এবিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো উচিত।”