দ্য ওয়াল ব্যুরো: বিপর্যয় মোকাবিলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের প্রস্তুতির অভাব ছিল বলে অভিযোগ করে শনিবার তীব্র সমালোচনা করলেন লোকসভায় কংগ্রেস দলনেতা অধীর চৌধুরী। সেই সঙ্গে তিনি প্রশ্ন তুললেন, উমফান আছড়ে পড়ার আগেই সেনাবাহিনীর সঙ্গে কথা বলে আগাম সাহায্য চেয়ে রাখা হয়নি কেন! শুধু তাই নয়, কলকাতায় বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের জন্যও রাজ্য সরকারের অব্যবস্থাকে দায়ী করেছেন অধীরবাবু। তাঁর কথায়, সিইএসসি-কে একচেটিয়া কারবার করার সুযোগ কে করে দিয়েছে? এক তরফা বিদ্যুৎ মাশুল বাড়ানো হলে কারা চুপ করে থাকে, তা কি মানুষ জানে না!
এ দিন সন্ধ্যায় অধীরবাবু বলেন, উমফান কবে, কখন, কতটা গতি নিয়ে আছড়ে পড়বে সেই পূর্বাভাস আবহাওয়া দফতর পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে দিয়েছিল। এ জন্য তাদের অভিনন্দন। সেই তথ্য পাওয়ার পর সরকারের দায়িত্ব ছিল আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখা। বিপর্যয় ঠেকানো যায় না তা আমিও জানি। কিন্তু ক্ষতি যাতে কম হয় সে জন্য আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখা রাজ্য সরকারের কর্তব্য ছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বীকার করুন বা না করুন, তাঁর প্রস্তুতির অভাব ছিল। এটা এখন দিনের আলোর মতো স্বচ্ছ। অথচ দেখছি উনি দায় স্বীকার না করে মানুষের উপর দায় চাপাচ্ছেন। বলছেন, শান্ত থাকতে।
শুধু অধীরবাবু নন, উদ্ধার কাজে দেরি হওয়ায় রাজ্য সরকারের সমালোচনা করেছেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষও। বিপরীতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন বারবার বলেছেন, এটা রাজনীতি করার সময় নয়। অনেকে দেখছি এই বিপদের সুযোগ নিয়ে রাজনৈতিক উস্কানি দিচ্ছেন। আমি সাধারণ মানুষকে বলছি, উস্কানির ফাঁদে পা দেবেন না। দয়া করে ধৈর্য্য রাখুন। সরকার চেষ্টার ত্রুটি রাখছে না।
এরই পাশাপাশি এ দিন সেনাবাহিনীর সাহায্যের জন্য আবেদন জানায় রাজ্য সরকার। তার পর বিকেল থেকে কলকাতা ও শহরতলির রাস্তায় ভেঙে পড়া গাছ সরিয়ে রাস্তা পরিষ্কার করতে নেমে পড়েন সেনা জওয়ানরা।
এ ঘটনার পরই শনিবার সন্ধ্যায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের সমালোচনায় নামেন অধীরবাবু। তিনি বলেন, “মানুষের বিপদ নিয়ে রাজনীতি করা আমার চরিত্রে নেই। বাংলার মানুষ জানে তা কে করেন এবং করেছেন। কিন্তু বাংলায় লক্ষ লক্ষ মানুষ যখন বিপদে পড়েছেন, সরকারের অব্যবস্থার জন্য তাঁদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে, তখন একজন জনপ্রতিনিধি হিসাবে আমি চুপ করে বসে থাকতে পারি না। এক বার নয়, একশ বার বলব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার আগাম প্রস্তুতি নিতে ব্যর্থ হয়েছেন।”
প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির কথায়, ঝড় চলে যাওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে শুনেছি যে বাংলার সর্বনাশ হয়ে গেল। তিনি তো জানতেন কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে আশা করি তিনি এটুকু জানতেন যে রাজ্য সরকারের একার ক্ষমতায় দ্রুত উদ্ধার কাজ সম্ভব নয়। তা হলে তিনি সে দিনই কেন সেনা ডাকেননি। কেন তিন দিন পর ডাকলেন, যখন দেখলেন তিনি আর পারছেন না। এই তিন দিন কলকাতার মানুষের যে দুর্ভোগ হল তার দায় কার? আর কলকাতাতেই যদি এই পরিস্থিতি হয় তা হলে মফস্বল ও দুই চব্বিশ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরের মানুষের কী অবস্থা তা আন্দাজ করা যাচ্ছে। তাঁর কথায়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উচিত ছিল ওড়িশার থেকে শিক্ষা নেওয়া। ওরা ফণীর সময় সাড়ে পনেরো লক্ষ মানুষকে ত্রাণ শিবিরে সরিয়েছিল। বাংলায় ৬ লক্ষ মানুষকে সরাতেই হিমশিম খেয়ে গেছে সরকার।
এখানেই থামেননি অধীরবাবু। তিনি সিইএসসি-র প্রসঙ্গও টেনে আনেন। লোকসভায় কংগ্রেস দলনেতা বলেন, মুখ্যমন্ত্রী এখন বলছেন, সিইএসসি বাম জমানায় বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্ব পেয়েছিল। কিন্তু আপনার জমানায়ও তো ওরা একচেটিয়া কারবার করে গিয়েছে। এক তরফা বিদ্যুৎ মাশুল বাড়িয়েছে। কই কখনও তো কিছু বলতে শুনিনি। ফলে মানুষ যে এখন বিক্ষোভে নেমেছেন সেটাই স্বাভাবিক। তাঁদের দুর্ভোগ সরকারের কারণেই বেড়েছে। সরকারের এই ব্যর্থতা মানুষের মনে থাকবে।