শেষ আপডেট: 17th January 2020 08:47
দ্য ওয়াল ব্যুরো: আরপিএসজি গ্রুপের সঙ্গে সংযুক্তিকরণ হয়ে গিয়েছে মোহনবাগান প্রাইভেট লিমিটেডের। ৮০ শতাংশ শেয়ার গিয়েছে গোয়েঙ্কাদের হাতে। অন্যদিকে ২০ শতাংশ শেয়ার থাকছে বাগান কর্তাদের হাতে। জানানো হয়েছে ক্লাবের নামের সঙ্গে যুক্ত হবে এটিকের নাম। অর্থাৎ হয় এটিকে মোহনবাগান কিংবা মোহনবাগান এটিকে নাম হবে। এখানেই আপত্তি সবুজ-মেরুন সমর্থকদের। কেন ক্লাবের সঙ্গে এটিকের নাম যোগ হচ্ছে। যেখানে ক্লাবের শেয়ার কিনল আরপিএসজি গ্রুপ।
এখন প্রশ্ন হল মোহনবাগানের মতো ১৩০ বছরের ঐতিহ্যশালী ক্লাবের সঙ্গে কেন যুক্ত হল মাত্র ৬ বছর আগে তৈরি হওয়া একটা ক্লাবের নাম। আরপিএসজি গ্রুপের নাম যুক্ত হলে কোনও সমস্যা ছিল না বাগান সমর্থকদের। কারণ এর আগে দীর্ঘদিন মোহনবাগানের সঙ্গে ইউবি গ্রুপের গাঁটছড়া থাকায় ম্যাকডাওয়েল নাম যোগ করে খেলেছে। এখানে একটা জিনিস জানা দরকার। সেটা হল, এএফসি-র নতুন নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, কোনও ফুটবল ক্লাব তাদের নামের সঙ্গে কোনও ব্যবসায়িক সংস্থার নাম জুড়তে পারবে না। চুক্তি হলেও নতুন নামে ক্লাবের নাম যুক্ত করতে হবে। সেটা না হলে কোনও এএফসি টুর্নামেন্ট খেলতে পারবে না সেই ক্লাব।
তাহলে যদি মোহনবাগানের সঙ্গে আরপিএসজি গ্রুপের নাম যুক্ত হত, তাহলে কী সমস্যা হত?
ধরা যাক সামনের মরসুমে আইএসএল চ্যাম্পিয়ন হল মোহনবাগান। তাহলেই তারা সরাসরি এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলার সুযোগ পাবে। কিন্তু আরপিএসজি মোহনবাগান নাম থাকায় সেখানে তারা খেলতে পারবে না। আইএসএল বা ভারতের অন্যান্য টুর্নামেন্টে এই নিয়ম এখন নেই। কিন্তু হতে কতদিন। আর আইএসএলে আরপিএসজি মোহনবাগান নামে খেলবে, অথচ এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এটিকে মোহনবাগান নামে খেলবে, সেটা তো সম্ভব নয়। তার জন্যই এই সংযুক্তি। পড়শি ক্লাব ইস্টবেঙ্গলও কিন্তু কোয়েস ইস্টবেঙ্গল নাম নিয়ে এএফসির কোনও টুর্নামেন্ট খেলতে পারবে না। সেক্ষেত্রে তারা অন্য কোনও সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করলেও নামের ক্ষেত্রে কোনও ক্লাবের নামই যোগ করতে হবে, ব্যবসায়িক সংস্থার নাম নয়।
এবার আসছে আবেগের কথা। এই সংযুক্তির বিরুদ্ধে যাঁরা বলছেন, তাঁদেরও যুক্তির যথেষ্ট বৈধতা রয়েছে। কী রকম?
একটা ১৩০ বছর পুরনো ক্লাব, যারা স্বাধীনতার আগে খালি পায়ে বুট পরা ব্রিটিশদের হারিয়েছে, তাদের ক্লাবের ঐতিহ্য, আভিজাত্য, আবেগটা সবার থেকে বড়। ক্লাবের পালতোলা নৌকো, জার্সির সবুজ-মেরুন রঙটাই লক্ষ লক্ষ লোকের ভালবাসার রসদ। কোনও কর্পোরেট সংস্থার ঝাঁ চকচকে কফিশপ বা জিমনাশিয়াম সেই জায়গা নিতে পারে না। ক্লাবের সঙ্গে অন্য কোনও নাম, কিংবা জার্সি-লোগোতে বদল তাঁরা মেনে নেবেন কেন? তাই নেমে আসছে প্রতিবাদ। আর শুধু সমর্থকরাই নন, প্রতিবাদ করছেন এই ক্লাবকে নিজের সবটা দেওয়া প্রাক্তন ফুটবলার থেকে শুরু করে কমিটি মেম্বাররাও।
বৃহস্পতিবার সংযুক্তির পরেই এক সাক্ষাৎকারে আরপিএসজি গ্রুপের চেয়ারম্যান সঞ্জীব গোয়েঙ্কা বলেছেন, "...দুটি ফুটবল ক্লাব একসঙ্গে এসে একটা নতুন মিলিত পরিচয় হবে। এই নতুন ফুটবল ক্লাবের নামে এটিকে ও মোহনবাগান দুটি নামই থাকবে।" অর্থাৎ তিনি কি বলতে চাইলেন, নতুন একটা ক্লাবের জন্ম হল। নাহলে বারবার "নতুন ফুটবল ক্লাব" এই কথাটা তিনি বলবেন কেন? এই সংযুক্তিকরণের সময়েও তিনি এবং উৎসব পারেখ কেন এটিকের জার্সি গায়ে মোহনবাগানের জার্সি হাতে ধরে ছবি তুললেন। কেন সবুজ-মেরুন জার্সি পরলেন না? তাহলে কোন ক্লাবকে তাঁরা বেশি গুরুত্ত্ব দিচ্ছেন? এটিকে না মোহনবাগান?
যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে পরিবর্তন দরকার। ফুটবলেও সেই পরিবর্তনটা অবশ্যম্ভাবী। ইনভেস্টর না এলে কোনও ফ্যান-বেসড ক্লাব এগিয়ে যেতে পারে না। আর কেউ আর্থিক সাহায্য করলে সে ক্লাবের শেয়ার কিনবে, বা ক্ষমতা নিজেদের দখলে নেবে সেটাই দস্তুর। এগুলো যেমন সত্যি, তেমনই সত্যি একটা ক্লাবের ঐতিহ্য, আবেগ, গর্ব, সম্মান, ভালবাসা। কোনও কিছুর বিনিময়েই যা বিকিয়ে দেওয়া যায় না। আপস করা আর মাথা নুইয়ে দেওয়ার মধ্যে বিস্তর ফারাক। আর সেরকম হলে তো প্রতিবাদ হবেই। গোষ্ঠপাল সরণী থেকে কিন্তু ইতিমধ্যেই অনেক সবুজ-মেরুন জার্সিধারীরা হাঁটা দিয়েছেন বাড়ির দিকে। চোখে জল নিয়ে তাঁরা বলছেন, ক্লাবটাই নেই। আর খেলা দেখে কী করব? টুটুবাবুরা শুনছেন তো!