শেষ আপডেট: 20th January 2022 10:15
দ্য ওয়াল ব্যুরো: কোভিড থেকে সরকারি কর্মচারীদের সুরক্ষা দিতে প্রথম ঢেউয়ের সময় থেকে সতর্ক রাজ্য সরকার। গোড়ার দিকে সপ্তাহে একদিন স্যানিটাইজ করার জন্য বন্ধ থাকত নবান্ন। দ্বিতীয় ঢেউ যখন প্রবল আকার নিয়ে আছড়ে পড়েছিল বাংলায়, সেই সময়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, সপ্তাহে দু’দিন বন্ধ থাকবে নবান্ন। শনি-রবি এমনিই বন্ধ থাকে। তা ছাড়াও আরও দু’দিন বন্ধ। সেই দু’দিন নবান্ন স্যানিটাইজ হয়। ফলে নবান্নের সরকারী কর্মচারীদের কাজ করতে হয় মাত্র তিনদিন। কিন্তু বিকাশ ভবন, নব মহাকরণ, রাইটার্স বিল্ডিং, খাদ্য ভবন, অরণ্য ভবন, পরিবেশ ভবনের মতো সরকারি দফতরগুলিতে এই বিধি কার্যকর নয়। ফলে সেখানে সপ্তাহে পাঁচ দিন কাজ। এ নিয়েই সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে চাপা অসন্তোষ। অনেকেই প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না। তবে ঘরোয়া আলোচনায় নবান্নের বাইরের সরকারি কর্মচারীরা স্পষ্ট করেই বলছেন, সুরক্ষার প্রশ্নে বিমাতৃসুলভ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে চলছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার। তাঁদের বক্তব্য, স্বাস্থ্য সুরক্ষার প্রশ্নে দু’দিন করে নবান্ন বন্ধ থাকছে। তাহলে কি অন্য দফতরে যাঁরা কাজ করেন তাঁদের সুরক্ষার প্রয়োজন নেই? নাকি সরকারের প্রধান সচিবালয় বলেই এত যত্নশীল মনোভাব? দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় থেকে সপ্তাহে দু’দিন করে নবান্ন বন্ধ থাকার বিধি এখনও কার্যকর রয়েছে। এও বলে রাখা ভাল, যখন কোভিড প্রায় শূন্য হয়ে গিয়েছিল সেই সময়েও দু’দিন করে বন্ধ থাকত নবান্ন। যদিও রাজ্য সরকার বিধি বেঁধে দিয়েছে সরকারি দফতরে ৫০ শতাংশ হাজিরায় কাজ চালাতে হবে। কর্মচারীদের একটা বড় অংশের বক্তব্য, এর ফলে বাড়তি সুবিধা পাচ্ছেন নবান্নে কর্মরতরা। তাঁরা ৫০ শতাংশ হাজিরার সুবিধাও পাচ্ছেন সঙ্গে সপ্তাহে দু’দিন বন্ধের সুবিধাও পাচ্ছেন। যাতে দেখা যাচ্ছে, এমন অনেক কর্মচারী আছেন যাঁরা সপ্তাহে একদিন অফিস গেলেই হয়ে যাচ্ছে। যদিও কাজের কারণে, নবান্নের কয়েকটি দফতর রোস্টার মেনে ৫০ শতাংশ কর্মী নিয়ে কাজ করছে। অনেকের মতে, নবান্নের চাইতেও বিকাশ ভবন, পূর্ত ভবন, স্বাস্থ্য ভবনে প্রতিদিন অনেক বেশি মানুষের সমাগম হয়। তাই সেগুলিতে অনেক বেশি সুরক্ষাবিধি প্রয়োজন। স্বাস্থ্য ভবনের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। এ ব্যাপারে রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজয় কুমার সিনহা বলেন, “এ নিয়ে কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। তবে অনেকেই তা প্রকাশ্যে বলতে পারছেন না। কারণ তাঁরা দেখেছেন, আমরা বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলন করায় দূরদূরান্তে বদলি করে দেওয়া হয়েছে। সরকারের প্রতিহিংসাপরায়ণ মানসিকতার জন্যই তাঁরা মুখ ফুটে কিছু বলছেন না।” কর্মচারী সংগঠনগুলির রাজ্য স্টিয়ারিং কমিটির সাধারণ সম্পাদক সংকেত চক্রবর্তী বলেন, 'আমরা কাজ করতে চাই না এমনটা নয়। সেই মানসিকতাও আমাদের নেই। কিন্তু সুরক্ষার প্রশ্নে যখন নবান্ন স্যানিটাইজ হয় তখন অন্য দফতরগুলিতেও সরকারের উচিত সেই পদক্ষেপ নেওয়া। যাতে জীবাণুনাশের কাজ করা যায়।' তিনি আরও বলেন, 'এই সরকার ছুটি দিতে পারলেই বাঁচে। আমরা মহার্ঘ ভাতার দাবি করলেও সরকার ছুটি দেয়।' মুখ্যমন্ত্রীর নাম না করে সঙ্কেতবাবু বলেন, 'উনি নবান্নকে দু’দিন বন্ধ রাখছেন অন্য কারণে। কারণ, নবান্নের গুটি কয়েক অফিসারকে উনি বিশেষ সুবিধা দিতে চান।' পড়ুন দ্য ওয়ালের সাহিত্য পত্রিকা 'সুখপাঠ'