শেষ আপডেট: 15th January 2022 15:14
দ্য ওয়াল ব্যুরো: করোনা পরিস্থিতিতে চার পুর নিগমের ভোট পিছিয়ে দেওয়ায় হাইকোর্ট ও রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানিয়ে টুইট করেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। দিন কয়েক আগেই করোনা পরিস্থিতিতে এই ভোট পিছিয়ে দেওয়া হোক বলে নিজের ব্যক্তিগত মত জানিয়েছিলেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ। এদিন কোর্ট ও কমিশনকে ধন্যবাদ দেওয়ার পাশাপাশি তিনি সংশ্লিষ্ট সকলকে মনে করিয়ে দেন, ৩ সপ্তাহে সংক্রমণের হার ৩ শতাংশের নীচে আনতে হবে। আরও যোগ করেন, 'করোনার বিরুদ্ধে লড়াই শক্তিশালী করা এখন বেশি প্রয়োজন।' অভিষেক টুইট করার আগে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য ভোট পিছনোর সিদ্ধান্তের পুরো কৃতিত্ব দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদককে দেন। টুইটে তিনি বলেন, ‘জননেতা ও ছাত্র-যুবদের নয়নমণি অভিষেকের দাবিকে মান্যতা দিতে চলেছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। করোনা আবহে পিছিয়ে যাচ্ছে চার পুরসভার ভোট!’ তৃণমূল শিবিরের এই প্রতিক্রিয়া থেক বিরোধীরা মনে করছে, ভোট পিছনো নিয়ে অভিষেকের প্রস্তাব দলেরই কৌশল ছিল। করোনার সংক্রমণ যেভাবে বাড়ছিল তাতে ভোট পিছনোর দাবিতে সিলমোহর দিতে পারে আদালত, অনুমান করেছিল তৃণমূল নেতৃত্ব। নবান্ন থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারে বারে বলছিলেন, ওমিক্রনে বিপদ কম হলেও অনেক দ্রুত ছড়ায় এবং কিছুদিনের মধ্যে গ্রাফ ঊর্ধ্বগামী হবে। এই পরিস্থিতিতে সব বিরোধী দলই নির্বাচন কমিশনের কাছে দাবি জানিয়েছিল ভোট পিছতে হবে। ফলে আদালত ও কমিশনের ভোট পিছনোর দাবিতে সহমত হওয়া ছিল সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু জনমনে এই ধারণাই বদ্ধমূল হয়েছে যা টুইটে দাবি করেছেন তৃণাঙ্কুর। তা হল, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রস্তাবে সায় দিয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। আরও পড়ুন: অভিষেকের কথায় ফোসকা পড়ছে কেন? প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী কটাক্ষের সুরে বলেন, "এটাও সাজানো ঘটনা।" তিনি আরও বলেন, মোদী সরকার ও দিদি সরকারের মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই। এঁরা প্রশাসন, নির্বাচন সবটাই নিজেদের মতো সাজিয়ে নেন। সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, “ভাইপোর কথাতেই ভোট পিছিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এটা সাজানো চিত্রনাট্য।” রাজনৈতিক মহল মনে করছে, ভোট পিছনো নিয়ে জেদাজেদির রাস্তায় হেঁটে শেষ পর্যন্ত আদালতের চাপে কমিশন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হলে শাসক দলের নৈতিক পরাজয় হত। জয় হতো বিরোধীদের। এবং ভোটের জন্য তৃণমূল করোনারও তোয়াক্কা করে না, এই অভিযোগ মান্যতা পেয়ে যেত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভোট পিছনোর সিদ্ধান্তে শাসক দলের লাভ দেখছে রাজনৈতিক মহল। প্রথমত, কলকাতার মতো, চার পুরনিগমেও বিরোধীরা ভালে অবস্থায় নেই। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে নির্বাচনে ভোটদানের হার সামান্য হলে বোর্ড দখল করেও বিজয়ের গৌরব দাবি করতে পারত না শাসক দল। সেখানে দলের সাধারণ সম্পাদক করোনাকালে অন্তত মাস দুয়েকের জন্য নির্বাচন সহ যাবতীয় রাজনৈতিক কর্মসূচি বন্ধ রাখার প্রস্তাব দিয়ে দলের মুখই উজ্জ্বল করলেন। ভোট পিছনোর প্রস্তাবে শনিবার সায় দেয় নবান্নও। রাজ্য সরকারের তরফে আদালতে মতামত দেওয়ার সময় অনেক বিষয় মাথায় রেখে অবস্থান ঠিক করতে হয়। চার পুর নিগমের পর রাজ্যের বাকি পুরসভাগুলিতে ভোট হওয়ার কথা। ফলে ভোট পিছনোর প্রস্তাবে সায় দেওয়ার আগে নবান্নকে সব দিক বিবেচনায় রাখতে হয়েছিল, যাতে ভবিষ্যতে সরকারের অবস্থানকে কেউ আদালতে হাতিয়ার করতে না পারে। সেই কারণে, রাজ্য সরকারের তরফে বারে বারে কোর্টে বলা হয়, ভোটের নির্ঘণ্ট প্রকাশিত হয়ে গিয়েছে। এখন নির্বাচনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত যা নেওয়ার রাজ্য নির্বাচন কমিশন নেবে। রাজ্য সরকারের কিছু করনীয় নেই। তাৎপর্যপূর্ণ হল, অভিষেক টুইটে আদালত ও কমিশনকে ধন্যবাদ দিয়েছেন। রাজ্য প্রশাসন সম্পর্কে নীরব থেকেছেন। এই নীরবতাও কৌশলী সিদ্ধান্ত বলে মনে করছে বিরোধীরা। পড়ুন দ্য ওয়ালের সাহিত্য পত্রিকা 'সুখপাঠ'