শেষ আপডেট: 1st June 2023 02:53
নওসাদ পারছেন, বাইরন পারেননি, দ্য ওয়াল এটাই লিখেছিল
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বিধানসভার মূল ফটকের বাইরে দাঁড়িয়ে বৃহস্পতিবার তিনি যখন বলছেন, ‘তৃণমূলে যাব না, যাওয়ার প্রশ্নই নেই, লক কিয়া যায়ে..’- সেই প্রত্যয় দেখার মতো!
তাঁর পার্টি কার্যত হঠাৎ গজিয়ে ওঠা। একুশের ভোটের কয়েক মাস আগে তৈরি হওয়া দল আইএসএফ। সেই দল বাম-কংগ্রেসের সঙ্গে যংযুক্ত মোর্চায় জুড়েছিল। পরে কংগ্রেসের সঙ্গে বৈরিতা হলেও সিপিএম তথা বামেদের সঙ্গে ফুরফুরা শরিফের সখ্য অটুট ছিল। ওই মোর্চার একমাত্র বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকি। এখন বিধানসভায় তিনিই একমাত্র অবিজেপি, অতৃণমূল বিধায়ক।
বিধানসভায় সেই সংখ্যাটা এক থেকে দুই হয়েছিল ২ মার্চ। অনেকে ভেবেছিলেন, সাগরদিঘির বাইরন বিশ্বাস বিধানসভায় গিয়ে নওসাদকে সঙ্গত করবেন। ঝাঁঝ বাড়াবেন। কিন্তু তিন মাস পূর্ণ হওয়ার আগেই বাইরন দলবদল করে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে বসে বাকিদের মতোই ভাঙা রেকর্ড বাজানোর মতো করে বলেছেন, ‘উন্নয়নের জন্যই তৃণমূলে শামিল হলাম।’
দলবদল এখন বাংলার রাজনীতিতে নতুন কিছু না। ‘শুধু যাওয়া আসা, শুধু স্রোতে ভাসা’ চলছেই। তারমধ্যেও দু’বছর ধরে উল্টো স্রোতে সাঁতরে যাচ্ছেন নওসাদ। বৃহস্পতিবার নওসাদ বলেছেন, ‘বিধায়ক হিসাবে শপথ নেওয়ার দিন থেকে আমায় প্রলোভন দেওয়া শুরু হয়েছিল। টাকা, মন্ত্রিত্ব—সব কিছুর টোপ দেওয়া হয়েছিল। আমি টলে যাইনি। যাবও না।’
কত টাকার টোপ? জবাবে ভাঙড়ের বিধায়ক বলেছেন, ‘বিরাট অঙ্ক। বিরাট বিরাট।’ তারপর সন্ধেবেলা একটি টক শোয়ে নওসাদ ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করে বলেন, ‘সেই টাকার অঙ্ক আর কে প্রস্তাব দিয়েছিল সেসব যদি এখন বলি, তাহলে কুণাল ঘোষের চাকরি থাকবে না।’
নওসাদ এখানেই থামেননি। ধ্রুপদী মার্ক্সীয় রাজনীতির আপ্তবাক্য আওড়ে বলেছেন, ‘ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স করার জন্য তো রাজনীতি করতে আসিনি। রাজনীতিতে এসেছি সমাজব্যবস্থা বদলানোর লক্ষ্যে।’ যেন সুমনের সেই গান—‘দিন বদলের খিদে ভরা চেতনায়!’
লোকাল ট্রেনের কামরায় রাজনীতি চর্চা এখনও রুটিন। সেই চর্চা কখনও বচসাতেও গড়ায়। কিন্তু সেসব আলোচনাতেও এখন একটা কথা প্রায়ই শোনা যায়—কাউকে বিশ্বাস করা যায় না। কে কখন কোন দলে যাবে কেউ বলতে পারবে না।
তিন মাসে সাগরদিঘির ‘বিশ্বাস’ ভাঙলেন বাইরন। নওসাদকে কীভাবে বিশ্বাস করবেন মানুষ?
ফুরফুরার এই পীরজাদার বক্তব্য, ‘দু’বছর তো আপন গতিতে বয়ে চলেছি। আরও তিন বছর পারব। ভাঙড়ের মানুষের সঙ্গে বিশ্বাস ঘাতকতা করব না। আমি আর বাইরনদা এক নই।’
বাংলায় কংগ্রেস তুলনায় ছোট দল। খুবই ছোট। কিছু জেলার কয়েকটি পকেটে তাদের শক্তি। কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ সব বুথে একজন করেও কর্মী পাওয়া মুশকিল। বাইরন সেই দল থেকে জিতেও জার্সি বদল করেছেন। দ্য ওয়াল-এ তাঁর তৃণমূলে যোগদানের একদিন পরেই লেখা হয়েছিল, রাজনীতিতে এখন মতাদর্শের কোনও বালাই নেই। ছোটদলের জার্সিতে লড়াইয়ের মানসিকতাটাই চলে যাচ্ছে। নওসাদের পার্টি আরও ছোট। তিনি এখনও পর্যন্ত উল্টো স্রোতে সাঁতরানোর কথাই বলে চলেছেন।
বাইরন আর নওসাদ যে এক নন সেই হিসেব কষতে হবে আগামী বিধানসভার সময়ে। ততদিন পর্যন্ত নওসাদকে বাংলার কোটি কোটি চোখ নজরে রাখবে—ছোট দলে থেকে শেষ পর্যন্ত চোয়ালটা শক্ত রাখতে পারেন কিনা।
ছোট দলে থেকে লড়াইয়ের মানসিকতাই চলে যাচ্ছে, শুধু তৃণমূলকে দোষ দিয়ে কী লাভ!