গপ গপ করে তারা গিলছে রাক্ষুসে ব্ল্যাক হোল, দিনে তিন বার ভূরিভোজ, অবাক হয়ে দেখল নাসা
চৈতালী চক্রবর্তী
প্রচণ্ড ‘খাই খাই’ স্বভাব এই দৈত্যাকার ব্ল্যাক হোলের। তার খিদে যেন আর মিটছেই না। হাতের কাছে যাকে পাচ্ছে, গিলে খাচ্ছে। চৌহদ্দির মধ্যে কোনও তারা ধরা দিলে একেবারে অস্থি-মজ্জায় চিবিয়ে ফেলছে। মহাকাশের এই রাক্ষসকে লেন্সের ভিতরে বন
প্রচণ্ড ‘খাই খাই’ স্বভাব এই দৈত্যাকার ব্ল্যাক হোলের। তার খিদে যেন আর মিটছেই না। হাতের কাছে যাকে পাচ্ছে, গিলে খাচ্ছে। চৌহদ্দির মধ্যে কোনও তারা ধরা দিলে একেবারে অস্থি-মজ্জায় চিবিয়ে ফেলছে। মহাকাশের এই রাক্ষসকে লেন্সের ভিতরে বন্দি করতে বহু বছর ধরেই চেষ্টা করছিল মার্কিন মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র নাসা। শেষমেশ ধরা দিল সে। নাসার চন্দ্রা এক্স-রে অবজ়ারভেটরি (Chandra X-ray Observatory) এবং ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির (ESA) এক্সএমএম নিউটন (XMM-Newton) বড় বড় চোখ করে দেখল, কী ভাবে গ্যালাক্সির ভিতরে ঘাপটি মেরে থেকে নিজের শিকার ধরছে এই ব্ল্যাক হোল। সেই সঙ্গে মহাকাশে ছড়িয়ে দিচ্ছে উজ্জ্বল আলোর স্রোত।
পৃথিবী থেকে ২৫ কোটি আলোকবর্ষ দূরে এই রাক্ষুসে ব্ল্যাক হোলের ঠিকানা। বিজ্ঞানীরা নাম রেখেছেন জিএসএন-০৬৯ (GSN-069) নাসা এর আগে আবিষ্কার করেছিল দু’টি স্টেলার-মাস (Steller-Mass) ব্ল্যাক হোল, যারা আড়ে বহরে সূর্যের প্রায় দ্বিগুণ। এই ব্ল্যাক হোলটিও বিশালাকৃতি। আকারে-আয়তনে চারটে চাঁদের সমান। এর খিদেও সর্বগ্রাসী। শুধু নক্ষত্র নয়, গ্যালাক্সির কাছাকাছি চলে আসা যে কোনও মহাজাগতিক বস্তুকে নিজের দিকে বিপুল অভিকর্ষজ বলের ক্রিয়ায় টেনে নেওয়ার ক্ষমতা রাখে সে।
[caption id="attachment_142861" align="aligncenter" width="642"] এক্স-রে বিচ্ছুরণ ঘটাচ্ছে ব্ল্যাক হোল[/caption]
দিনে তিন বার ভুরিভোজ সারে মহাকাশের এই রাক্ষস
ইএসএ-র জ্যোতির্বিজ্ঞানী জিওভান্নি মিনিউত্তি বলেছেন, ‘‘কৃষ্ণগহ্বর বা ব্ল্যাক হোলের সমসময় একটা খাই খাই ভাব থাকে। এরা সাধারণত কোনও গ্যালাক্সির মাঝখানে অর্থাৎ কেন্দ্রে (Center) অথবা গ্যালাক্সির চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। জিএসএন-০৬৯ গ্যালাক্সির মাঝে বসে উদরপূর্তি করে চলেছে। এমন রাক্ষুসে খিদে আমরা এর আগে কখনও দেখিনি।’’
সাধারণত দেখা যায়, যে কোনও গ্যালাক্সির মাঝে থাকা ব্ল্যাক হোলের অভিকর্ষ টান সাঙ্ঘাতিক হয়। ঘন জমাট বাঁধা গ্যাসের মেঘ, কাছে এসে পড়লে ওই রাক্ষুসে ব্ল্যাক হোলগুলি তাদের জোরালো অভিকর্ষ বলের টানে সেগুলিকে গিলে নেয়। সেগুলি আর ব্ল্যাক হোল থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না। খিদে মিটলে তার ভিতর থেকে উজ্জ্বল আলোর বিচ্ছুরণ দেখা যায়। যেগুলি আসলে প্রচণ্ড শক্তিশালী এক্স-রে বা গামা-রশ্মির স্রোত। যতক্ষণ এই খাবার প্রক্রিয়া চলে, ততক্ষণ এই তড়িৎ-চুম্বকীয় তরঙ্গ বেরিয়ে আসতে থাকে গ্যালাক্সি থেকে এবং মহাশূন্যে ভেসে বেড়ায়। খাওয়া শেষ হয়ে গেলে, এক্স রে নির্গমনও বন্ধ হয়ে যায়। তখন আলোর দপদপানি নিভে যায়।
https://www.youtube.com/watch?time_continue=72&v=MML43A-3Am8
৫৪ দিন ধরে আলো ছড়িয়েছে এই কৃষ্ণগহ্বর
নাসা ও ইএসএ-র অবজ়ারভেটরিতে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে একবার ধরা দেয় জিএসএন-০৬৯। তার পর থেকে লাগাতার এই গ্যালাক্সির পিছু নিয়েছেন মহাকাশবিজ্ঞানীরা। স্পেনের ইউরোপিয়ান স্পেস অ্যাস্ট্রোনমি সেন্টারের গবেষক রিচার্ড স্যাক্সটন জানিয়েছেন, দু’টো এক্স-রে অবজ়ারভেটরিতেই এই ব্ল্যাক হোলের লাগাতার আলোক বিচ্ছুরণ ধরা দিয়েছে। একটানা ৫৪ দিন ধরে। যা অবিশ্বাস্য।
মহাকাশবিজ্ঞানীদের কথায়, সাধারণত কোনও তারা কাছে এসে পড়লে তাকে গিলে খেতে এমন ধরণের রাক্ষুসে ব্ল্যাক হোলের সময় লাগে এক থেকে দু'-তিন বছর। কোনও তারাকে যদি ব্ল্যাকহোল গিলে খেত, তা হলে আলোর ঝলসানি দেখা যেত এক থেকে দু'-তিন বছর ধরে। এক্ষেত্রে আলোর ছটা দেখা গেছে ৫৪ দিন ধরে। এতএব শুধু তারা নয়, প্রচণ্ড গ্যাসীয় কোনও পিণ্ডকেও খেয়ে চলেছে এই ব্ল্যাক হোল। যার কারণে তীব্র চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, যে তীব্র গতিতে এক্স-রে নির্গত হচ্ছে য়েটা ২০ গুণ বেশি উজ্জ্বল। ২.৫ মিলিয়ন ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রা তৈরি হচ্ছে।
জিএসএন-০৬৯ কে বলা হচ্ছে সুপারমাসিভ ব্ল্যাক হোল। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এর ভিতরে একটা সংঘর্ষ চলছে। গ্যাসীয় মেঘ এবং তারার একে অপরকে ধাক্কা মারছে। যার ফলে জোরালো তড়িৎ-চৌম্বকীয় তরঙ্গ বা ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভ তৈরি হচ্ছে। সেটাই ধরা দিয়েছে নাসা ও ইএসএ-র শক্তিশালী টেলিস্কোপে।
আরও পড়ুন:
https://www.four.suk.1wp.in/news-nasa-satellite-spots-a-mystery-thats-gone-in-a-flash-2019/