শেষ আপডেট: 5th August 2022 14:01
দ্য ওয়াল ব্যুরো: কেন্দ্রে সরকার গঠনের সময়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi) সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার কথা বলেছিলেন। কিন্তু সেই শর্ত কি বাস্তবেই কায়েম রয়েছে?
শুক্রবার নয়াদিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata wrote letter to Modi)। সেই বৈঠকের পর এখনও পর্যন্ত দ্বিপাক্ষিক আলোচনা সম্পর্কে দিদি নিজে কিছু বলেননি। তবে তাঁর সচিবালয়ের তরফে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে সংবাদমাধ্যমকে। প্রধানমন্ত্রীকে ওই চিঠিটি লিখেছেন মুখ্যমন্ত্রী (Mamata Banerjee)। তাতে তিনি জানিয়েছেন, কেন্দ্রের থেকে রাজ্যের বকেয়া পাওনা রয়েছে ১ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি। গত ৩১ জুলাই পর্যন্ত প্রকৃত বকেয়া পাওনা ছিল ১ লক্ষ ৯৬৮ কোটি টাকা। মমতার প্রশ্ন, এতো টাকা বকেয়া থাকলে তিনি রাজ্য চালাবেন কী ভাবে?
কেন্দ্রের কাছে কোন কোন খাতে রাজ্যের পাওনা রয়েছে তা পুরো একটি তালিকা করে প্রধানমন্ত্রীকে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাতে তিনি জানিয়েছেন, একশ দিনের কাজ, প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা এবং প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা খাতে বকেয়া পাওনা রয়েছে ১৭, ৯৯৬ কোটি টাকা। অথচ এই সব প্রকল্প রূপায়ণে কেন্দ্র যে যে শর্ত দিয়েছে, যে ভাবে সঠিক বাস্তবায়নের কথা বলেছে তা অনুসরণ করেছে রাজ্য। কিন্তু তার পরেও টাকা মেটানো হচ্ছে না। এতে গ্রামে দুর্ভোগ বাড়ছে।
এখানে বলে রাখা ভাল, বাংলায় বিজেপির অভিযোগ কেন্দ্রের অনুদানে চলা এই প্রকল্পগুলির নাম বদল করেছে রাজ্য। তাই টাকা আটকে রেখেছে দিল্লি। শুভেন্দু অধিকারীরা যখন এ কথা বলছেন, তখন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আবার একুশে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে বলেছিলেন, দিল্লির কাছে ভিক্ষে চাইবে না বাংলা। আমরা নিজেদের রাজ্যের প্রকল্পের জন্য টাকার ব্যবস্থা নিজেরাই করে নেব।
পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, শুভেন্দু ও অভিষেক দুজনেই চরম অবস্থানের কথা বলছেন। এই দুটোর কোনওটাই বাস্তবের ধার ঘেঁষে যাচ্ছে না। কেন্দ্র যেমন শুধু প্রকল্পের নাম বদলের জন্য টাকা আটকে রাখতে পারে না। গরিব মানুষের স্বার্থ বিবেচনা করে যোজনার টাকা বরাদ্দ করে দেওয়াই সঠিক পথ। তার সমান্তরালে দ্বন্দ্ব মেটানোর কাজ চলতে পারে। আবার দিল্লির ভিক্ষে চাই না বলাও অতি-রোমান্টিসিজম। কারণ, রাজ্যের আর্থিক দৈন্য যে ভয়াবহ তা সরকারের অলিন্দে সকলেরই জানা।
মুখ্যমন্ত্রী এদিন প্রধানমন্ত্রীকে যে হিসাব দিয়েছেন তাতে দেখা যাচ্ছে, কেন্দ্রের কাছে সব থেকে বেশি টাকা পাওনা রয়েছে সমগ্র শিক্ষা মিশন খাতে। এই খাতে বকেয়া পাওনা হল ১৫ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা। তবে দিদির চিঠিতেই পরিষ্কার যে ওই টাকা শুধু চলতি আর্থিক বছর বা গত আর্থিক বছরের জন্য বকেয়া নয়, তা ২০১১-১২ আর্থিক বছর থেকে বকেয়া রয়েছে। একই ভাবে নবান্নের দাবি, পিছিয়ে পড়া এলাকার উন্নয়ন খাতে ২০১৪ সাল থেকে বকেয়া রয়েছে ২৩৩০ কোটি টাকা। এরই পাশাপাশি বুলবুল, আমফান ও ইয়াস ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষতিপূরণের জন্য ৪৩ হাজার টাকা পাওনা রয়েছে বলে রাজ্যের দাবি।
প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের অবশ্য বক্তব্য, রাজ্যের বকেয়া পাওনা কোনওভাবেই ১ লক্ষ কোটি টাকা নয়। রাজ্য ইচ্ছামতো অঙ্ক সাজিয়ে দেখিয়েছে। বিশেষ করে ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষতিপূরণ খাতে রাজ্য যে হিসাব দিয়েছে তার সঙ্গে বাস্তবের যোগ নেই। কেন্দ্রের প্রতিনিধি দল গিয়ে হিসাব করে দেখেছে ক্ষতিপূরণের জন্য এর অনেক কম টাকা লাগবে। সেই টাকার কিস্তি ইতিমধ্যে রাজ্যকে পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া সমগ্র শিক্ষা মিশন খাতে বাংলায় বিশেষ কাজ হয়নি বলে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের দাবি। তাঁদের বক্তব্য, ওই প্রকল্প খাতে কোনওভাবেই বকেয়ার অঙ্ক ১৫ হাজার কোটি টাকা হবে না। কেন্দ্র রাজ্য বৈঠক করলে প্রকৃত হিসাব বেরিয়ে আসবে।
ডেঙ্গিতে আর মৃত্যু নয়!জেলাশাসকদের গাপ্পি মাছ চাষে জোর দিতে বললেন রাজ্যের মুখ্যসচিব