শেষ আপডেট: 26 July 2023 10:18
সাত বছর আগের ঘটনা। তখন রাজ্যে জনস্বাস্থ্য কারিগরী মন্ত্রী ছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তাঁর অফিস ছিল নব মহাকরণে। যে অফিসে বসে অবিরাম দেখা যায় গঙ্গাকে। সুব্রতবাবু সেদিকে তাকিয়ে বলতেন, “২০২৪ সালের মধ্যে এই গঙ্গার জলই আমরা বাড়ি বাড়ি পাঠাব। কলকাতার মানুষ ট্যাপের মাধ্যমে জল পেয়ে গেছে। জেলাগুলো এখনও পায়নি”।
২০২৩ সালের অর্ধেক পেরিয়ে গিয়েছে। বেলা শেষের দিকে এগোচ্ছে বছরটা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) এবার ঠ্যালা দিলেন ‘জলকে চল’। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, ২০২৪ সালের মে মাসের যত বেশি সম্ভব গ্রামীণ পরিবারের বাড়িতে নলবাহিত জল (piped water) পৌঁছে দিতে হবে। অর্থাৎ যাঁদের বাড়ি জেলায়, যেখানে নলের মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি পরিস্রুত জল এখনও পৌঁছয়নি, তাঁদের দ্রুত সুরাহা দিতে চাইছে সরকার। বাংলার বিস্তীর্ণ অংশজুড়ে আর্সেনিক ও ফ্লোরাইডের সমস্যার নিরিখে যা খুব জরুরিও বটে।
নদী ও জলাশয়ের জলকে (surface water) পরিস্রুত করে বাড়ি বাড়ি ট্যাপের মাধ্যমে পাঠানোর জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের ‘জল স্বপ্ন’ প্রকল্পে ঋণ দিয়েছিল এশীয় উন্নয়ন ব্যাঙ্ক (ADB) ও বিশ্ব ব্যাঙ্ক (World Bank)। তা ছাড়া মনমোহন জমানা থেকে কেন্দ্রের একটা প্রকল্প ছিল। যার নাম ছিল ন্যাশনাল রুরাল ড্রিঙ্কিং ওয়াটার মিশন (National Rural Drinking Water Mission)। পরে নরেন্দ্র মোদী তার পোশাক বদলে নাম দেন—জল জীবন মিশন (Jal Jeevan Mission)। মোদীরও স্লোগান হল, চব্বিশ সালের মধ্যেই ‘হর ঘর নল কা জল’ পৌঁছে দিতে হবে। প্রকল্প বাবদ এখন কেন্দ্র ও রাজ্য ৫০:৫০ অনুপাতে টাকা খরচ করে।
কিন্তু কেন দেরি হল?
উত্তর খুঁজতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে—
(১) শুধু বাংলায় নয় অনেক রাজ্য এখনও পর্যন্ত ৬০ শতাংশ কাজ করতে পারেনি। ছোট রাজ্যগুলি ২০২৪ সালের মধ্যে লক্ষমাত্রা পূরণ করতে পারবে ঠিকই, কিন্তু বড়দের চাপ রয়েছে।
(২) সবচেয়ে বড় কারণ কোভিড-বাধা। কোভিডের জন্য প্রায় দু’বছর পুরোদমে কাজ করা যায়নি। ফলে সব রাজ্যই পিছিয়ে পড়েছে লক্ষ্যমাত্রা পূরণের থেকে। তাছাড়া এই প্রকল্প রাজ্যে বাস্তবায়ন করা হবে কিনা তার সিদ্ধান্ত নিতে গিয়েও বেশ কিছুটা সময় নিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার।
(৩) শ্রমিক সমস্যা। অবশ্য মঙ্গলবার মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের সচিব সুরেন্দ্র গুপ্তা ও জেলা শাসকদের পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, খরচ বাড়ানো হোক। শ্রমিক সমস্যা মেটাতে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। যত শীঘ্র সম্ভব এই কাজ শেষ করতে হবে।
জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরও আরও সক্রিয় হয়েছে বলে খবর। ইতিমধ্যে জলস্বপ্ন প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়িত করতে ৫৮৩ জন ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ করা হয়েছে। যাঁরা ম্যাপিং থেকে শুরু করে সবটাই দেখছেন। সূত্রের খবর, দফতর প্রায়োরিটি এরিয়া চিহ্নিত করে এবার কাজ দ্রুত এগোনোর কথা ভাবছে।
আরও পড়ুন: প্রথম অনাস্থা প্রস্তাবে কী বলেছিলেন নেহরু, কতজন প্রধানমন্ত্রী আস্থা ভোটে গদি হারান