দ্য ওয়াল ব্যুরো: অনেকেই বলছেন, হালফিলের রাজনীতি বড্ড কর্কশ। আগের মতো জম্পেশ স্লোগান নেই। রাজনীতির চাপানউতোর তো থাকবেই, কিন্তু মজাটা এক্কেবারে নেই।
কিন্তু বিষ্যুদবার বিকেলটা ছিল যেন মরীচিকার মতো। জল দেখা না গেলেও যেন মরুদ্যানের মতো কিছু চিকচিক করল তৃণমূল ভবনের হলঘরে। বাংলায় বসবাসকারী হিন্দিভাষীদের উদ্দেশে বক্তৃতা দিচ্ছেন মমতা। পুরোটাই হিন্দিতে। দিদি যেমন হিন্দিতে বলেন। আর সেই বক্তৃতায় মণি-মুক্তোর মতো ছড়িয়ে পড়ল কত কথা।
এমনিতে পুরোদস্তুর রাজনৈতিক বক্তৃতা। তার মাঝেই মমতা বোঝানোর চেষ্টা করছিলেন, তিনি অনেকের থেকে ভাল হিন্দি বলেন। তাঁর কথায়, "কেয়া মেরেকো হিন্দি শিখায়েগা ইয়ে। হাম তো ইসিকো কান পাকাড়কে হিন্দি শিখা দেগা।"
এর পরই দিদি বোঝাতে চান, আসলে অবাঙালিদের সঙ্গেও তাঁর আবেগ ও আন্তরিকতার সম্পর্ক। সেই সূত্রেই তিনি বলেন, “গুরু নানকের জন্মদিনে আমার বাড়িতে ওরা হালুয়া পাঠায়। আর বিহারীদের কাছে তো আমি লিট্টি চেয়ে খাই। চাপাটি চেয়ে খাই।”
দেখুন ভিডিও।
https://www.youtube.com/watch?v=lpEt3ZsuBjM&feature=youtu.be
দিদির মুখে এ কথাগুলো শুনে ঘনঘন হাততালি পড়ছিল। হতে পারে তাতেই আরও আবেগ বিহ্বল হয়ে ওঠেন দিদি। বলেন, “আর হামারা যো সাথী হ্যায়, যো হামকো লেকে চলতে হ্যায়, উসকে ঘরসে হামারে লিয়ে পুরি আতে হ্যায়।” পুরির কথা উঠতেই, সামনে থেকে কেউ প্রশ্ন করেন, ‘দিদি আপ ঠেকুয়া খাতে হ্যায়?’
মমতা বলেন, “আরে ঠেকুয়া হাম জাদা খাতা হ্যায়। লেকিন সবসে আচ্ছা ঠেকুয়া বানাতে হ্যায় হামারা সিকিউরিটি দ্বিবেদী, অউর হামারা ড্রাইভার বীরেন্দরজি।” দিদির কথায়, "তো হামারা জিন্দেগিকা স্টিয়ারিং জিসকে হাত মে হ্যায়... ও লোগ কেয়া সোচে কে মেরা জিন্দেগি কা কাহানি কেয়া হ্যায়! কভি হাম সোচা হামারা যো গাড়িকা স্টিয়ারিং চালাতে হ্যায়, কৌন হ্যায়, যো হামারা সিকিউরিটি দেতা হ্যায়, ও কৌন হ্যায়!"

অবাঙালিদের জমায়েতে মমতা যে এদিন আবেগ ঢেলে দিতে চেয়েছেন তা অনুষ্ঠানের পরতে পরতে স্পষ্ট ছিল। যদিও সেই জমায়েত বড় ছিল না। তৃণমূল ভবনের হলঘরে যে দু-পাঁচশো লোক ধরে, ততটাই। তবে দিদির বার্তা ছিল বৃহত্তর অবাঙালি জনগোষ্ঠীর উদ্দেশে।
পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, এবার ভোটে বিজেপির মোকাবিলায় যে বহিরাগত স্লোগান তুলেছে তৃণমূল তাই ব্যুমেরাং করে শাসক দলের দিকে ফেরাতে চাইছেন অমিত শাহরা। এমনিতে অবাঙালি জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিজেপির গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। শুভেন্দু অধিকারী, দিলীপ ঘোষরা তাঁদের বোঝাতে মরিয়া যে, তৃণমূল সামগ্রিক ভাবে অবাঙালিদের বিরুদ্ধে। ফলে এখন তৃণমূলকেও ব্যাখ্যা দিতে হচ্ছে যে, বাংলায় বসবাসকারী অবাঙালিদের বিরুদ্ধে তারা নয়। তারা অমিত শাহ, কৈলাস বিজয়বর্গীয়দের মতো বহিরাগতদের বিরুদ্ধে। বাংলার বিহারীদের জন্য তো বরং ছট পুজোতেও দুদিন ছুটি ঘোষণা হয়েছে। যার নজির ভূভারতে নেই।