শেষ আপডেট: 4th June 2023 10:10
দুর্ঘটনার আগেই ভিডিও কলে স্ত্রীর সঙ্গে কথা, বর্ধমানের গ্রামে ফিরল কফিনবন্দি পরিযায়ী শ্রমিকের দেহ
দ্য ওয়াল ব্যুরো, পূর্ব বর্ধমান: অভিশপ্ত করমণ্ডল এক্সপ্রেসেই ছিলেন পূর্ব বর্ধমানের বড়শুলের বাসিন্দা সফিক কাজি। পেটের তাগিদে চেন্নাইয়ে রাজমিস্ত্রির যোগাড়ে যাচ্ছিলেন । শুক্রবার দুপুর ৩.২০ নাগাদ শেষবার ভিডিও কলে স্ত্রীর শিল্পী খাতুনের সঙ্গে কথা হয়েছিল তাঁর। এরপরেই সেই ভয়াবহ সেই দুর্ঘটনা। রবিবার ভোরে ফিরল তাঁর কফিন বন্দি দেহ।সফিকের কফিন বাড়িতে পৌঁছতেই বড়শুলের কুমীরকোলা গ্রামে ওঠে কান্নার রোল।
শুক্রবার সন্ধেয় করমণ্ডল এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনায় খবর পৌঁছে ছিল সফিকের বাড়িতেও। ভাইকে নিয়ে দুশ্চিন্তা করছিলেন দাদা বাবু কাজি। হাওড়ার কন্ট্রোল রুমের নম্বরে বার বার ফোন করছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁর দুশ্চিন্তা কাটেনি। তাই শনিবার ভোরের আলো ফোটার আগেই ভাই সফিকের খোঁজে বাড়ি থেকে রওনা দিয়েছিলেন বাবু। বালেশ্বরে দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছে শুরু করেন ভাইয়ের খোঁজ। স্কুল ঘরের অস্থায়ী মর্গে লাশের স্তূপ ঘেঁটে বের করেন মৃত ভাইয়ের দেহ।

বিপর্যস্ত মানসিক পরিস্থিতি মধ্যেও সরকারি ব্যবস্থা নিয়ে ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে বাবু বলেন, 'চূড়ান্ত অব্যবস্থা চলছে ওখানে। এলাকার বিভিন্ন স্কুলের ঘরে সারি সারি লাশ ফেলে রাখা হয়েছে। সেগুলিকে হাতড়ে খুঁজে নিতে হচ্ছে স্বজনের দেহ। আহতদের ঠিক মতো চিকিৎসাটুকুও হচ্ছে না।'
তিনি আরও জানান, কাটোয়ার বরমপুরের রাজমিস্ত্রি নূর মহম্মদের সঙ্গে চেন্নাইয়ে রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করতে গিয়েছিল সফিক। দুর্ঘটনায় নূর বেঁচে গেছেন। সেখানে হাসপাতালে ভর্তি তিনি। তাঁকে দেখতে গিয়েছিলেন বাবু। সেখানেই তাঁর চোখে চিকিৎসার অব্যবস্থা ধরা পড়ে।
স্বামীর দেহ বাড়িতে পৌঁছতে চার সন্তানকে নিয়ে অথৈ জলে পড়েছেন শিল্পী। সন্তানদের ভবিষ্যৎ চিন্তা, স্বজন হারানোর যন্ত্রণায় চোখের জল থামছে না। তিন-চার বছরের রেহান বাবার কফিনের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে। জেঠুর মুখে দিকে তাকিয়ে নীরব রেহানের চোখে হাজারো প্রশ্ন। সে বুঝতে পারছে না, বাবাকে সে শেষবারের মতো দেখছে।
সকাল থেকেই মৃত সফিকের বাড়িতে ভিড় করেছেন পড়শিরা। বর্ধমান উত্তরের বিধায়ক নিশীথ কুমার মালিক ও জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ বাগবুল ইসলামও যান সফিকদের বাড়িতে। বিধায়ক নিশীথ কুমার মালিক বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে জেলা প্রশাসন ও ব্লক প্রশাসন সব রকম সাহায্যে করছে। আমরা এই পরিবারের পাশে আছি।'