শেষ আপডেট: 16th August 2022 01:17
'অত্যাচারী' ভাসুরের পুরুষাঙ্গ কেটে নিয়েছে পল্লবী! হাওড়াকাণ্ডে ববিট সিনড্রোমের ছায়া
দ্য ওয়াল ব্যুরো, হাওড়া: হাওড়ায় (Howrah Murder) পরিবারের চারজনকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে খুনের পর ধৃত পল্লবী ঘোষের বয়ান ছিল চমকে দেওয়ার মতো। সে বলেছিল, রেগে গেলে তার হুঁশ থাকে না, অনেককে খুন করতে পারে। এই পল্লবীর (Pallavi Ghosh) মধ্যে বহুল পরিচিত ‘ববিট সিনড্রোম’ (Bobbitt Syndrome) খুঁজে পাচ্ছেন তদন্তকারীরা। শুধু খুন করেই তো ক্ষান্ত থাকেনি পল্লবী। ভাসুরের পুরুষাঙ্গও কেটে নিয়েছে সে।
পুলিশের জেরার মুখে প্রথম থেকেই অকপট পল্লবী। সে জানিয়েছে, ভাসুরের কু-নজর ছিল তার উপর। প্রথম থেকেই ভাসুরের যৌন লালসার শিকার হয়েছিল সে। তাই রাগের মাথায় খুন করার পর যৌনাঙ্গের উপরেও পড়ে পল্লবীর আক্রোশ। ছুরি দিয়ে সেটাও কেটে নেয় সে।
গোয়েন্দারা বলছেন, এটাই ববিট সিনড্রোম। এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে প্রায় তিন দশক আগে মার্কিন মুলুকে ঘটে যাওয়া এক রোমহর্ষক ঘটনার স্মৃতি। ভার্জিনিয়ার দম্পতি জন ববিট ও লোরেনা ববিটের কাহিনি থেকেই এমন আক্রোশের নাম হয়েছে ববিট সিনড্রোম।
১৯৯৩ সালের ২৬ জুন লোরেনা ঘুমন্ত স্বামীর পুরুষাঙ্গ কেটে নিয়েছিল। রান্নাঘর থেকে ছুরি এনে সকলের অজান্তে এই কাণ্ড ঘটিয়েছিল সে। পুলিশের জেরার মুখেও অকপটে সে জানিয়েছিল, তার স্বামী তাকে নিয়মিত ধর্ষণ করত। জোর করে সঙ্গম করা হত তার সঙ্গে। সেই অত্যাচারের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য স্বামীর পুরুষাঙ্গই কেটে দিয়েছে সে।
লোরেনা ববিটের সেই ঘটনা বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। নৃশংসতায় শিউরে উঠেছিলেন সকলে। এমনকি এই ববিটদের নিয়ে একাধিক ছবিও তৈরি করেছে হলিউড। তারপর থেকেই এমন আক্রোশ গোয়েন্দা এবং মনোবিদদের কাছে ববিট সিনড্রোম নামে পরিচিত।
হাওড়ার ঘটনায় সেই পল্লবীর মধ্যেও লোরেনার ছায়া দেখছেন কেউ কেউ। পল্লবী নিজের মুখেই স্বীকার করেছে সব কথা। জানা গিয়েছে, পরিবারের যিনি মাথা অর্থাৎ বাবা, শিশিরকুমার ঘোষ, তাঁর সম্পত্তি কে পাবে এই নিয়ে দুই ভাইয়ের ঝামেলা ছিল। দাদা দেবাশিসের সঙ্গে ভাই দেবরাজের ঝগড়াঝাঁটি সারা পাড়া জানত। বদমেজাজি দেবরাজ বাড়িতে ভাঙচুরও চালাত। এমনকি মারধরও করত বাবা, দাদা, মাকে। বছর দশেক আগে দেবরাজ ঘোষের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল পল্লবীর। বড় ছেলে দেবাশিস ও তাঁর স্ত্রী পরিবারের দেখাশোনা করতেন বলে তাঁদের বেশি ভালবাসতেন শিশিরবাবু। অবসরের পর বেশ কিছু টাকা তিনি বড় ছেলে ও তাঁর স্ত্রীকে দিয়েছিলেন বলে জানা গেছে। এই নিয়েই রাগ ছিল দেবরাজ ও পল্লবীর।
তবে এখানেই শেষ নয়। দেবরাজের স্ত্রী পল্লবীকে নাকি কু-প্রস্তাব দিতেন দাদা দেবাশিস। এমনকি অত্যাচারও করতেন, চলত যৌন নিগ্রহ। সেই নিয়ে আবার রীতিমতো টাকার লেনদেন হত পরিবারের মধ্যে। পুলিশ জানতে পেরেছে, পেশায় গাড়িচালক দেবাশিস, ভাইয়ের স্ত্রী পল্লবীর সঙ্গে ‘সম্পর্ক’র বিনিময়ে ভাই ও বৌমাকে টাকা দিত।
জানা গেছে, বুধবার রাতেও তেমনই দেবরাজ ও পল্লবীকে ২ হাজার টাকা দিতে এসেছিল দেবাশিস। তখন তুঙ্গে উঠেছে বাড়ির ভাগ নিয়ে বিবাদ। তার মধ্যে দেবাশিসের এই টাকা দিতে আসা দেখে প্রচণ্ড রেগে যায় পল্লবী। রাগের বশে স্বামী দেবরাজের সঙ্গে দেবাশিসকে গিয়ে খুনই করে বসে। এমনকি দেবাশিসের উপর রাগে তাকে কুপিয়ে পল্লবী তার যৌনাঙ্গও কেটে নেয়! দেবাশিসের স্ত্রী রেখাকেও কুপিয়ে মারে পল্লবী।
আরও পড়ুন: ১৭ বছরের মেয়েকে গণধর্ষণ, এক নাবালকসহ অভিযুক্ত ৬ জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ