শেষ আপডেট: 17 April 2023 07:58
দ্য ওয়াল ব্যুরো: একাদশ শ্রেণির পরীক্ষা চলছিল স্কুলে। সেই পরীক্ষায় মেধাবী এক ছাত্রীর খাতা দেখতে গিয়েই চমকে ওঠেন শিক্ষক। প্রশ্নের উত্তরের বদলে খাতা জুড়ে লেখা শুধুই ব্ল্যাকমেল (blackmail) আর আত্মহত্যার প্রস্তুতির কথা। শুধু বাংলার উত্তরপত্র নয়, পদার্থবিদ্যা, অঙ্ক ও বায়োলজি পরীক্ষার খাতায় পাতার পর পাতা জুড়ে লেখা রয়েছে সেই দুর্বিসহ মানসিক যন্ত্রণার কথা।
হুগলির পুরশুড়ার চিলাডাঙি রবীন্দ্র বিদ্যাবিথী হাইস্কুলের একাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় এক ছাত্রীর (Hoogly student) উত্তরপত্র জুড়ে শুধুই তাকে বাঁচানোর করুণ আর্তি। দীর্ঘদিন ধরেই নাকি প্রতিবেশী এক 'কাকু' ব্ল্যাকমেল করে আসছিল তাকে। ছাত্রীর স্নানের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ার ভাইরাল করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে কিশোরীকে তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছিল সে। সেই প্রস্তাবে সম্মত হওয়ার জন্য মাত্র ১৫ দিন সময় দেওয়া হয়েছিল ওই ছাত্রীকে।
স্বভাবতই, ভয়ে, যন্ত্রণায়, মানসিক কষ্টে একেবারে ভেঙে পড়েছিল কিশোরী। বাড়ির কাউকে সে কথা বলতে পারেনি সে। ভিতরে ভিতরে আত্মহত্যার কথাও ভেবেছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে মনে পড়ে অভিভাবকসম শিক্ষক শিক্ষিকাদের কথা। ইংরেজি পরীক্ষায় সে সব উত্তর ঠিকঠাকই দিয়েছিল। কিন্তু বাকি পরীক্ষাগুলিতে উত্তরপত্রের ছত্রে ছত্রে ফুটে উঠেছিল তার মানসিক বিপর্যস্ততার কথা। আত্মহত্যার ভাবনার কথাও স্পষ্টভাবে লেখে সে। তাকে বাঁচানোর জন্য আর্জি জানায় শিক্ষক শিক্ষিকাদের কাছে।
জীবনকৃষ্ণর সম্পত্তির বহর কেমন, ১২টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে কত টাকা?
খাতা দেখতে গিয়ে স্তম্ভিত হয়ে যান শিক্ষক-শিক্ষিকারা। দেরি না করে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিদ্যুৎ কুমার দাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তাঁরা। সঙ্গে সঙ্গে ওই ছাত্রীর মাকে স্কুলে ডেকে পাঠান বিদ্যুৎবাবু। তাঁর উপস্থিতিতেই কিশোরীর সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন প্রধান শিক্ষক। খবর দেওয়া হয় বিডিও এবং স্কুল শিক্ষা দফতরকেও। বিডিওর পরামর্শেই ছাত্রীর বাড়ি এবং স্কুল দুই তরফেই পুরশুড়া থানায় খবর দেওয়া হয়। তার উত্তরপত্রগুলি জেরক্স করে জমা দেওয়া হয় থানায়।
দেরি না করে অভিযান চালিয়ে গত শুক্রবার কিশোরীর প্রতিবেশী ওই অভিযুক্ত 'কাকা'কে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুরশুড়া থানার ওসি সোমনাথ দে জানিয়েছেন, স্কুল শিক্ষকদের তৎপরতার জন্যই রক্ষা করা গেছে কিশোরীকে।
স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিদ্যুৎ কুমার দাস জানিয়েছেন, ইংরেজি ছাড়া অন্যান্য প্রতিটি পরীক্ষার খাতায় তিন পাতা করে নিজের অসহায় অবস্থার কথা ধারাবাহিকভাবে জানিয়ে গিয়েছিল ওই ছাত্রী। বাড়ির কাউকে কিছু বলতে না পারলেও স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকাদের উপর ভরসা রেখেছিল। 'কোনওরকম বিপদ হওয়ার আগেই যে আমরা ওকে রক্ষা করতে পেরেছি সেটাই সবচেয়ে সৌভাগ্য,' জানিয়েছেন বিদ্যুৎবাবু।
জীবনের মোবাইল খুঁজতে গিয়ে উঠল শোল-কই-মাগুর, সিবিআইয়ের ধমক খেলেন শ্রমিকরা