দ্য ওয়াল ব্যুরো: গোটা উত্তরবঙ্গ জুড়ে তোলপাড় ফেলে দিয়েছে ভাইরাল জ্বর (Viral Fever)। থাবা বসিয়েছে দক্ষিণেও। জ্বরের সঙ্গেই শ্বাসকষ্টও ভোগাচ্ছে বাচ্চাদের। দেখা যাচ্ছে আরও নানা উপসর্গ। এমন পরিস্থিতিতে জ্বরে আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা কীভাবে হবে, কী কী লক্ষণ দেখলে শিশুদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে, বাবা-মায়েরা কী করে সতর্ক থাকবেন, সেই সব নিয়ে বিস্তারিত গাইডলাইন দিয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর।
জ্বর ও শ্বাসকষ্টজনিত সংক্রমণের মোকাবিলা করতে 'স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর' প্রকাশ করেছে স্বাস্থ্যভবন। কোন জেলায় শিশুরা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে, সংক্রমণের হার কতটা বেশি, জেলার হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির পরিস্থিতি কেমন সব খতিয়ে দেখতে রাজ্য সরকার এর মধ্যেই একটি কমিটি তৈরি করেছে। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, মাইক্রোবায়োলজিস্ট, পালমোনোলজিস্ট, কমিউনিটি মেডিসিন, সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞদের নিয়ে সেই কমিটি তৈরি হয়েছে। এই কমিটির বিশেষজ্ঞদের দেওয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই শিশুদের জন্য ওই গাইডলাইন তথা 'স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর' প্রকাশ করা হয়েছে।
স্বাস্থ্যভবনের গাইডলাইনে কী কী বলা হয়েছে—
কী কী উপসর্গ দেখলে সতর্ক হবেন--
১) বাচ্চাদের জ্বর ও শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা তিন দিনের বেশি থাকলেই হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।
২) সর্দি-কাশি, ক্রমাগত নাক দিয়ে জল পড়া, গলা শুকিয়ে যাওয়া, গলায় ব্যথা হলে দেরি করা ঠিক হবে না।
৩) পেট খারাপ, ডায়েরিয়া, ঘন ঘন বমি, সারা গায়ে ব্যথা।
৪) দ্রুত শ্বাস নেওয়া, শ্বাসপ্রশ্বাসের সময় বুক ধড়ফড় করা।
৫) পরিবারে রেসপিরেটারি সিনড্রোমের পূর্ব ইতিহাস থাকলে সতর্ক হতে হবে।
৬) বাচ্চাদের স্বাভাবিক খাওয়াদাওয়া ৫০ শতাংশ কমে গেলে সতর্ক হতে হবে।
৭) প্রস্রাব দিনে পাঁচ বারের কম হচ্ছে কিনা খেয়াল রাখতে হবে।
শ্বাসপ্রশ্বাসের হার কেমন হলে চিন্তার কারণ—
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইনফ্লুয়েঞ্জা টাইপ-এ ও টাইপ-বি ও রেসপিরেটারি সিনসিটিয়াল ভাইরাসের সংক্রমণ বেশি হচ্ছে। ফলে জ্বরের সঙ্গে শ্বাসকষ্ট দেখা দিচ্ছে অনেক শিশুর। তাছাড়া স্ক্রাব টাইফাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলায়। স্ক্রাব টাইফাস ব্যাকটেরিয়া এক ধরনের উকুন থেকে ছড়ায় এর নাম ‘ট্রম্বিকিউলি়ড মাইটস’। এই ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হলে ধূম জ্বর, সঙ্গে বমি, পেট খারাপের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এখন বাচ্চাদের জ্বর হলেই গায়ে ব্যথা, বমি, পেশির খিঁচুনি ও শ্বাসের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। শ্বাসপ্রশ্বাসের হার কত তা খেয়াল রাখতে হবে, যেমন—
২ মাস অবধি শিশুর শ্বাসের হার (মিনিটে কতবার শ্বাস টানছে) ৬০ বারের বেশি হলে চিন্তার কারণ
২-১২ মাস অবধি শিশুর শ্বাসের হার ৫০ বারের বেশি হলে চিন্তার কারণ
১-৫ বছরের বাচ্চার শ্বাসের হার ৪০ বারের বেশি হলে মুশকিল
৫ বছরের ওপর থেকে শ্বাসের হার ৩০ বারের বেশি হলে চিন্তার কারণ
কী কী টেস্ট করাতে হবে—
হিমোগ্রাম, সিআরপি মাস্ট।
কোভিড, ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া পরীক্ষাও করানো ভাল।
স্ক্রাব টাইফাস, এন্টেরিক ফিভার, লেপ্টোস্পাইরা
চেস্ট এক্স-রে
শ্বাসকষ্ট হলে অক্সিজেন মাস্ক জরুরি। শরীরে অক্সিজেন লেভেল মেপে দরকার মতো চিকিৎসা করবেন ডাক্তারবাবুরা। হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলার দরকার আছে কিনা সেটা অক্সিজেনের মাত্রা মেপেই দেওয়া হবে। যদি শ্বাসযন্ত্রে বেশি সংক্রমণ হয় বা আগে থেকেই ফুসফুসের রোগ থাকে তাহলে মেকানিক্যাল ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা করা হবে।

প্রাথমিক চিকিৎসা কী
বাড়িতে বাচ্চার মাথায় জলপট্টি দেওয়া, গা স্পঞ্জ করিয়ে দেবেন বাবা-মায়েরা।
পেট খারাপ হলে ওআরএস খাওয়াতে হবে।
শরীরের তাপমাত্রা বাড়ছে কিনা খেয়াল রাখতে হবে, সেইসঙ্গে শ্বাস নিতে সমস্যা হচ্ছে কিনা, বাচ্চা দিনে কতবার প্রস্রাব করছে এগুলো খেয়াল করে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলতে হবে।
জ্বর বাড়লে প্যারাসিটামল (চার ঘণ্টা অন্তর দিনের পাঁচ বার। ডোজ—১০-১৫ মিলিগ্রাম/কেজি)
নাক দিয়ে ক্রমাগত জল পড়লে বা হাল্কা শ্বাসের সমস্যা হলে স্যালাইন ন্যাজাল ড্রপ দেওয়া যাবে।
বমি হলে ডমপেরিডোন ওষুধ দেওয়া যেতে পারে।
অ্যাসপিরিন একেবারেই চলবে না।
কী কী বিষয়ে সতর্কতা নেবেন
বাচ্চার জ্বর হলে আলাদা ঘরে রাখাই ভাল। যে অভিভাবক দেখাশোনা করছেন তিনি মাস্ক পরে থাকবেন, হাত স্যানিটাইজ করে নেবেন।
২ বছরের নীচে শিশু আক্রান্ত হলে তাকে আইসোলেশনে রাখাই ভাল।
বড়রা বাড়িতেও মাস্ক পরে থাকুন। ঘরবাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন। শিশু যে ঘরে থাকবে সেখানে যেন ভেন্টিলেশন ঠিকমতো হয়।
বাচ্চার জামাকাপড় রোজ ধুয়ে পরিষ্কার করুন। পারলে বিছানার চাদর রোজ বদলে দিন।
ভিড়, জমায়েতে বাচ্চাদের একেবারেই নিয়ে যাবেন না।
পড়ুন দ্য ওয়ালের সাহিত্য পত্রিকা 'সুখপাঠ'