দ্য ওয়াল ব্যুরো: শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে তাঁদের বদলি নীতি শিথিল করার নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং শিক্ষা দফতরের আধিকারিকদের উদ্দেশে বৃহস্পতিবার নেতাজি ইনডোরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “পার্থদা, আপনারা শিক্ষকদের বদলির বিষয়টা মানবিক দিক থেকে দেখুন। যে শিক্ষকদের বাড়ি মেদিনীপুরে, অথচ শিক্ষকতা করেন বাঁকুড়ায়, তাঁর অসুবিধে হয়। যদি তাঁকে নিজের জেলায় আনা যায় সেটা দেখতে হবে।”
বস্তুত শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় গত বছর দুয়েক ধরে বারবারই বলেছেন, শিক্ষকদে বদলি নীতি কঠোর করা হবে। চাইলেন কোনও শিক্ষক বদলি নিতে পারবেন না। যে জেলায় তিনি চাকরি পেয়েছেন সেখানেই শিক্ষকতা করতে হবে।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য একশ আশি ডিগ্রি উল্টো কথাই বলেন।
নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে এ দিনের অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের কয়েক হাজার শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের উদ্দেশে মমতা বলেন, “আপনারা যে স্কুলের টিচার, ধরুন সেখানে দেখলেন অনেকজন আছেন। কিন্তু পাশেই একটা স্কুলে ছাত্র আছে অথচ সেখানে শিক্ষক নেই। আপনারা নিজেরা আলোচনা করে পাশের স্কুলে গিয়ে ক্লাসটা একটু করিয়ে দিন। এই সবটাই অ্যাডজাস্ট করে নিলেই হয়ে যায়।”
কিন্তু এই বদলিতে নিয়মটা কী?
হুগলির বাসিন্দা পুরুলিয়ার আদ্রার এক মাধ্যমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, “এই মিউচুয়াল ট্রানসফার বা বোঝাপড়ার বদলিতে বেশ কিছু নিয়ম রয়েছে। তিনটি শর্ত মানতে হয় বদলির ক্ষেত্রে। এক, যাঁর সঙ্গে যাঁর বদলাবদলি হবে, দু’জনের বিষয় এক হবে। অর্থাৎ দু’জনে একই বিষয়ের শিক্ষক হতে হবে। দুই, দু’জনের শিক্ষাগত যোগ্যতা এক হতে হবে। একজন পাস গ্র্যাজুয়েট আর অন্যজনের স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকলে হবে না। তিন, দু’জনেরই চাকরি জীবন অন্তত দু’বছর হতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, বেশ কয়েক মাস হল একাধিক জেলায় এই বদলি বন্ধ। ডিআই অফিস আবেদনপত্র খুলেও দেখছে না। তাঁর কথায়, “এখন মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে যদি এই প্রক্রিয়া চালু হয়, তাহলে রাজ্যের বহু শিক্ষক উপকৃত হবেন।”
ডিএ বা বেতন বৃদ্ধির দাবিতে বিভিন্ন স্তরের শিক্ষকদের আন্দোলন লেগেই রয়েছে রাজ্যে। এ দিনের অনুষ্ঠান থকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমরা মানবিক। আমাদের যতটা দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে দিচ্ছি। ভাববেন না, আমাদের আছে অথচ দিচ্ছি না। রাগ করবেন না।” পর্যবেক্ষকদের মতে, রাজ্যের যে অর্থনৈতিক সঙ্কট রয়েছে এটা সত্যি। তাঁদের মতে, এই ঘোষণার মধ্যে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আসলে শিক্ষকদের অন্য দিক দিয়ে খুশি করতে চেয়েছেন। ঠিক যে ভাবে আকছার ছুটি ছাটা ঘোষণা করে রাজ্য সরকারি কর্মচারিদের খুশি রাখার চেষ্টা করা হয়, তেমনই।