শেষ আপডেট: 20th September 2022 14:26
দ্য ওয়াল ব্যুরো, উত্তর ২৪ পরগনা: সাড়ে ৪০০ বছর পেরিয়ে গেছে, আজও বিভূতিভূষণের (Bibhutibhushan Bandopadhyay) স্মৃতিবিজড়িত সীমান্তের ধুনির ঘরের দুর্গাপুজো (Durga Pujo 2022) সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নজির বহন করে যাচ্ছে। কাঁটাতার ঘেঁষা গ্রাম এটি। সীমান্ত লাগোয়া এই গ্রামে পুজো মানেই দুই বাংলার মিলন ক্ষেত্র। আজও এই গ্রামে দুই দেশের মানুষের মেলবন্ধন চোখে পড়ার মতো।
পুজোর আয়োজন থেকে উন্মাদনা সবেতেই দুই বাংলার ছাপ স্পষ্ট। আর পুজো ঘিরে হিন্দু-মুসলমানের মেতে ওঠার ছবিও যেন ফ্রেমে এঁটে রাখার মতোই। শোনা যায়, সাড়ে চার'শ বছর আগে সীমান্তবর্তী পানিতর গ্রামে এই পুজো শুরু হয়েছিল। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে পানিতর গ্রামে এই পুজো পরিচিত, কথাসাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম স্ত্রী গৌরীদেবী বাপের বাড়ির পুজো হিসেবেই।
কেউ কেউ আবার বলেন, পানিতর গ্রামের পুজো ধুনির ঘরের পুজো। কথিত রয়েছে প্রায় ৪০০ বছর আগে এক সাধু ধুনিতে আগুন ধরিয়ে সাধনা করতেন। তারপর জায়গাটি ধুনির ঘর নামে পরিচিতি লাভ করে। সেই থেকেই এই পুজোর সূচনা।
জানা যায়, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবারের আদি বাসস্থান ছিল এই পানিতরে। সাহিত্যিকের পিতামহ তারিণীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন কবিরাজ। বিভূতিভূষণের বাবা মহানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়ের যখন ১২ বছর বয়স, তখন সপরিবারে বসিরহাট ছেড়ে বনগাঁয় চলে যান তারিণীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে জন্মভিটে দেখার সুবাদে মাঝেমধ্যেই পানিতরে চলে আসতেন বিভূতিভূষণ। সেখানেই আলাপ হয় গৌরীদেবীর সঙ্গে। পরে এখানেই থাকতে শুরু করেন বিভূতিভূষণ। তারপর বসিরহাটের মোক্তার কালীভূষণ মুখোপাধ্যায়ের কন্যা গৌরীদেবীর সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর।
লেখকের উদ্যোগে পানিতরের মুখোপাধ্যায় পরিবারের দুর্গাপুজো নতুন মাত্রায় পৌঁছায়। সেই থেকেই সাড়ে চারশো বছরের ঐতিহ্যের সঙ্গে বিভূতিভূষণের স্মৃতি বিজড়িত বসিরহাটের এই পুজো। বর্তমানে এই পুজো পরিচালনা করার মতো পরিবারের আর কেউ নেই। স্থানীয়দের উদ্যোগেই ৪০০ বছরের প্রাচীন এই পুজো হয়ে আসছে। গ্রামের সব ধরনের মানুষকে নিয়ে শরিফুল মণ্ডল, ফারুক বিল্লা, প্রলয় মুখোপাধ্যায়রা এই পুজো করেন।
গৌরীদেবীর বাড়ির ঠাকুরদালানে আজও অধিষ্ঠান করেন সপরিবার দেবী দুর্গা। এই পুজোর উদ্যোক্তারা জানান, “পূর্বপুরুষদের কাছে শুনেছি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বড় প্রিয় ছিল এই পুজো। এই পুজোয় গৌরীদেবীর সঙ্গে বিভূতিভূষণের অনেক স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে বলে জানা যায়। সময়কালে আজ এই পুজো সর্বজনীন হয়ে দাঁড়িয়েছে।" পুজোর চারদিন পাশেই ওপার বাংলার বহু এলাকা থেকে দর্শনার্থীরা এই পুজো দেখতে ভিড় জমান।
দুর্গাকে বাসি ভোগ দেওয়াই রীতি! গীতিকার পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির পুজো আজও অনন্য