শেষ আপডেট: 10th June 2023 08:53
সুব্রত বলেছিলেন ‘বোমকল’, জমানা বদলালেও বদলাল না ডোমকল, অব্যাহত হিংসা
দ্য ওয়াল ব্যুরো: আজ থেকে ঠিক দু’দশক আগের কথা। ২০০৩-এর পঞ্চায়েত ভোট। সেই ভোটে গ্রামবাংলা কার্যত স্নান করেছিল রক্তে। শুধু ভোটের দিনই মুর্শিদাবাদ জেলায় খুন হয়েছিলেন ৩৫ জন। সবচেয়ে বেশি লাশ কুড়িয়েছিল যে এলাকা, তার নাম ডোমকল।
সেই সময়ে রাজ্যের ক্ষমতাসীন বাম সরকার তথা সিপিএমকে বিঁধে প্রয়াত সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘ডোমকলকে বোমকল বানানো হয়েছে।’ ডোমকলের দীর্ঘদিনের নেতা ছিলেন সিপিএমের আনিসুর রহমান। প্রাণীসম্পদ উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রীও ছিলেন তিনি। এখন অসুস্থ। সুব্রতবাবু বলেছিলেন, ‘আনিসুর ডোমকলকে কার্গিল বানিয়ে ছেড়েছেন।’
জমানা বদলেছে। সুব্রতবাবু প্রয়াত হয়েছেন। গত এক যুগ ধরে বাংলায় তৃণমূলের সরকার। কিন্তু ডোমকলের কোনও বদল নেই। শুধু সংঘাতের সমীকরণ বদলে গিয়েছে। বিশ বছর আগে ডোমকলে সংঘর্ষ হতো সিপিএম বনাম কংগ্রেসের (তখনও তৃণমূল মুর্শিদাবাদে পা জমাতে পারেনি)। আর তেইশে ছবিটা উল্টো। তৃণমূল বনাম কংগ্রেস-সিপিএম।
শনিবার মনোনয়নের দ্বিতীয় দিন সকাল থেকেই দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে ডোমকলে। সকাল ১১টা নাগাদ দেখা যায় সিপিএম-কংগ্রেস কর্মীদের রাস্তায় ফেলে পেটাচ্ছে তৃণমূল। বেলা বাড়তে উল্টে যায় ছবিটা। তৃণমূলকে কার্যত তাড়া করে বড় রাস্তা থেকে সরু গলিতে ঢুকিয়ে পেটাচ্ছে বাম-কংগ্রেস। মুড়িমুড়কির মতো ইট-পাথর ছোড়া তো আছেই। যেন যুদ্ধক্ষেত্র। কোনও দলই ঝান্ডা সরু কাঠিতে বেঁধে আনেনি। বরং তা ছিল খেটো ডান্ডায় বাঁধা। যেন প্রস্তুতি সারাই ছিল।
শুধু কি তাই। এদিনের সংঘাত হাসপাতালেও ঢুকে পড়ে। পুলিশের তাড়া খেয়ে ডোমকল মহকুমা হাসপাতালে ঢুকে পড়েন সারাংপুর পঞ্চায়েতের তৃণমূল অঞ্চল সভাপতি বাসির মোল্লা। তারপর দেখা যায় তাঁর কোমর থেকে পিস্তল উদ্ধার করছে পুলিশ।
বাংলার পঞ্চায়েত ভোটে একটা সময়ে মূল অস্ত্র ছিল সুতলি বাঁধা পেটো আর মাস্কেট। আলপথ ধরে মুখ গামছায় ঢেকে লাইন দিয়ে মাস্কেট বাহিনীর হেঁটে যাওয়া ছিল চেনা দৃশ্য। অনেকের মতে, সেসব ছবি না দেখলে মনেই হতো না পঞ্চায়েত ভোট এসেছে। কিন্তু অস্ত্রের বিবর্তন হয়েছে। ওয়ান শটার এতটাই সহজলভ্য যে পকেটে পকেটে তা ঘুরছে। সময় গড়াচ্ছে, দশক পেরিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু ডোমকল থেমে রয়েছে সেখানেই। যেখানে হিংসা, অস্ত্রের আস্ফালন। আক্ষরিক অর্থেই জোর যার, মুলুক তার।
মনোনয়ন জমাকে ঘিরে ফের উত্তপ্ত বারাবনি, এলাকায় র্যাফ-কমব্যাট ফোর্স