শেষ আপডেট: 25th September 2024 12:39
দ্য ওয়াল ব্যুরো: তালাবন্ধ আইএমএ দফতর। তাই বাধ্য হয়ে রাতের অন্ধকারে, রাস্তায় দাঁড়িয়ে, বৃষ্টিতে ভিজেই জরুরি বৈঠক শুরু করলেন সদস্যরা। ঘটনায় নিন্দার ঝড় চিকিৎসক মহলে।
চিকিৎসকদের অভিযোগ, স্বাস্থ্যক্ষেত্রে ডাক্তার সুশান্ত রায় ও তাঁর 'উত্তরবঙ্গ লবি'র দাপট যে এখনও অব্যাহত, তারই প্রমাণ পাওয়া গেল এই ঘটনায়।
জানা গেছে, গত ২২ সেপ্টেম্বর কলকাতায় আইএমএ বেঙ্গল শাখার অফিসে একটি বৈঠক ছিল। সেই বৈঠকে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন আইএমএ জলপাইগুড়ি শাখার তিন সদস্য। বৈঠক শেষ করে তাঁরা আবার জলপাইগুড়ি ফিরে এসেছেন। কলকাতার ওই বৈঠকে কী সিদ্ধান্ত হল, রাজ্য কমিটি কী জানাল, তা আরও বেশি সংখ্যক সদস্যদের কাছে পৌঁছে দিতে মঙ্গলবার রাতে জলপাইগুড়ি আইএমএ অফিসে একটি জরুরি বৈঠক ডেকেছিলেন সদস্যরা।
অভিযোগ, মঙ্গলবার রাতে বৈঠক করবেন বলে সভাপতিকে আগে থেকে চিঠি দিয়ে জানানো ছিল। কিন্তু সন্ধ্যা থেকেই জলপাইগুড়ি আইএমএ দফতরের গেট তালাবন্ধ ছিল কোনও অজানা কারণে।
এর ফলে জলপাইগুড়ি সমাজ পাড়ায় অবস্থিত আইএমএ দফতরের সামনে প্রায় দেড় ঘন্টা ধরে দাঁড়িয়ে থাকেন জলপাইগুড়ির বিধায়ক তথা আইএমএ জলপাইগুড়ি শাখার প্রাক্তন সভাপতি ডাক্তার প্রদীপ কুমার বর্মা, প্রাক্তন সভাপতি তথা আইএমএ-র লাইফ মেম্বার ডাক্তার পান্থ দাশগুপ্ত-সহ আরও অন্যান্য সদস্যরা। অপেক্ষার পরেও দফতর না খোলায় তাঁরা শেষমেশ রাস্তায় দাঁড়িয়ে, বৃষ্টিতে ভিজে বৈঠক শুরু করেন।
এদিকে আইএমএ দফতরের পাশেই জলপাইগুড়ি সুডেন্ট হেলথ হোম। সেখানকার সদস্যরা ডাক্তার দের এই অসহায় অবস্থা দেখতে পান। জানা গেছে, এরপর তাঁরা এগিয়ে এসে হেলথ হোমে জায়গা করে দিলে সেখানে বসে বৈঠক শেষ করেন শহরের বিশিষ্ট চিকিৎসকেরা।
ঘটনায় ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন বিশিষ্ট চিকিসকেরা। আইএমএ প্রাক্তন সভাপতি ডাক্তার পান্থ দাশগুপ্ত বলেন, 'কলকাতায় মিটিং করতে গিয়েছিলেন আমাদের ৩ সদস্য। আজ তাঁদের ওই মিটিংয়ের রিপোর্ট ব্যাক করার কথা ছিল। একইসঙ্গে গত মিটিংয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, বর্তমান কমিটি ভেঙে দেওয়ার। তাই আজ আরও সদস্য এসেছিলেন বৈঠক করতে। কিন্তু আমার আমাদের নিজেদের ভবনেই বসে বৈঠক করতে পারলাম না। এর চেয়ে লজ্জার আর কী হতে পারে।'
জলপাইগুড়ির বিধায়ক তথা আইএমএ প্রাক্তন সভাপতি ডাক্তার প্রদীপ কুমার বর্মা ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেন, 'উত্তরবঙ্গ লবির এই একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে আমরা একজোট হয়েছি। আজকের ঘটনার পর আবার দেখতে পেলাম এদের দাপট। আমরা নিজেদের ঘরেই ঢুকতে পারলাম না। বাধ্য হয়ে বৃষ্টিতে ভিজে রাস্তায় দাঁড়িয়ে বৈঠক করলাম। এর জন্য সম্পূর্ণ দায়ী আমাদের সম্পাদক ও সভাপতি। এটা আমাদের কাছে চরম লজ্জার বিষয়। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।'
আইএমএ সদস্য ডাক্তার কমলেশ বিশ্বাস বলেন, 'আমরা আগে থেকে চিঠি দিয়েছিলাম। কিন্তু আজ গেটের তালা খুলে দেওয়া হল না। কারণ জানতে সভাপতিকে ফোন করা হলে উল্টে আমাদের ভাইস প্রেসিডেন্টকে ধমক দেওয়া হয়। অথচ এই সভাপতিই গত বৈঠকে ডাক্তার সুশান্ত রায়, ডাক্তার অভীক দে এবং ডাক্তার সৌত্রিক রায়কে বহিষ্কার করার পক্ষে সুপারিশ করেছিলেন। আজ দেখা যাচ্ছে তিনি ডিগবাজি খাচ্ছেন। নিশ্চয়ই থ্রেট কালচারের প্রভাব তাঁর ওপরেও পড়েছে। আমরা এই সভাপতির বিরুদ্ধেও পদক্ষেপ নেব। আজ চাইলে আমরা তালা ভেঙে ভেতরে যেতে পারতাম। কিন্তু আমরা তা করিনি। প্রয়োজনে আইনি লড়াই এর মাধ্যমে জিতে আমরা এই দফতরের তালা খুলব।'
সুডেন্ট হেলথ হোমের রাজ্য কমিটির সদস্য সুমন সরকার বলেন, 'চিকিৎসক ও হেলথ হোম অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত। তাই আজ রাতে আমরা যখন দেখি ডাক্তারবাবুরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে বৈঠক করছেন, তখন আমাদের খুব খারাপ লাগে। তাই আমরা তাঁদের ডেকে নিয়ে আসি। বসার ব্যবস্থা করে দিই।'
এই অভিযোগ নিয়ে আইএমএ জলপাইগুড়ি শাখার সম্পাদক ডাক্তার সুশান্ত রায় কোনও মন্তব্য করতে চাননি। আইএমএ সভাপতি ডাক্তার নিতাই মুখার্জীর সঙ্গেও যোগাযোগ করা যায়নি।