শেষ আপডেট: 16th February 2022 09:44
দ্য ওয়াল ব্যুরো: গত তিন দশক ধরে উত্তরবঙ্গে বামেদের মুখ তিনি। এমনই একজন নেতা অশোক ভট্টাচার্য, যিনি রাজ্য রাজনীতির মুখ হয়ে উঠেছিলেন উত্তরবঙ্গের মাটিতে পার্টি করেই। অনেকে বলেন, প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সি, এবিএ গনিখান চৌধুরীরা দিল্লি অথবা কলকাতায় থেকে রাজনীতি করেই পরিচিতি পেয়েছিলেন। কিন্তু অশোক উঠে এসেছিলেন দার্জিলিংয়ের পাহাড়, তরাই, ডুয়ার্স এবং সমতলে লড়াই-আন্দোলন করেই। রাজনীতির সায়াহ্নে এসে সেই তাঁকেই পরপর তিনটি ধাক্কার মুখোমুখি হতে হল। বুধবার দ্য ওয়ালকে বর্ষীয়ান সিপিএম নেতা জানালেন, দুটো ধাক্কা সামলে নেবেন, ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগও রয়েছে। কিন্তু একটি অপূরণীয়। প্রথম ধাক্কা খেয়েছিলেন একুশের বিধানসভা ভোটে। বিজেপির কাছে হারতে হয়েছিল অশোকবাবুকে। ভোটে জেতা-হারা থাকেই। সেটাকে বিপর্যয় বলা ঠিক নয়। কিন্তু অশোকবাবুর ক্ষেত্রে যেটা ঘটেছিল, সেটা বিপর্যয়ই বটে। যে শঙ্কর ঘোষকে তিনি প্রায় হাতে করে তৈরি করেছিলেন, ছাত্র-যুব আন্দোলনের রাজ্যস্তরের নেতৃত্বে এবং কাউন্সিলর করে, মেয়র পারিষদ সদস্য করে পুর রাজনীতিতে সামনের সারিতে তুলে নিয়ে এসেছিলেন সেই তিনিই ভোটের আগে যোগ দেন বিজেপিতে। গুরুর বিরুদ্ধে শিষ্যকেই প্রার্থী করে গেরুয়া শিবির। শঙ্করের কাছে হেরে তৃতীয় হতে হয় অশোক ভট্টাচার্যকে। এরপর কয়েক মাস আগে তাঁর স্ত্রীর মৃত্যু হয় অসুস্থতার কারণে। তারপর এই পুরভোটে নিজের পাড়ায় হার। এদিন অশোকবাবু বলেন, “পরপর দুটো ভোটে হেরেছি, এটাকে যদি বিপর্যয় বলেন তাহলে তাই। কিন্তু আমরা বামপন্থীরা বিশ্বাস করি ভোটে হারা-জেতায় রাজনীতি থমকে যায় না। গরিব মানুষের রুটিরুজি, দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এবং বাংলার গণতন্ত্র রক্ষার লড়াইয়ে আমাদের আন্দোলন, সংগ্রাম চলবে।’ সেইসঙ্গেই জুড়ে দেন, ‘কিন্তু পারিবারিক ক্ষেত্রে যে বিপর্যয় আমার ঘটে গিয়েছে, তা অপূরণীয়।’ অশোক ভট্টচার্যের সঙ্গেই দার্জিলিং জেলা সিপিএমে আরও একটি নাম উচ্চারিত হয়। তিনি হলেন জীবেশ সরকার। যদিও জীবেশ সংগঠনের কাজের বাইরে বেরোননি। অশোক পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী হিসেবে বাংলাজুড়ে কাজ করেছিলেন। শিলিগুড়ি তো বটেই কলকাতার এই নবরূপের অনেককিছুই তাঁর হাতে করা অথবা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল তিনি মন্ত্রী থাকার সময়েই। রাজ্যে অসংখ্য নতুন এলাকাকে পৌর এলাকা করা, পুরসভাকে কর্পোরেশনে উত্তীর্ণ করার প্রশাসনিক পদক্ষেপ হয়েছিল অশোকের সময়েই। সুভাষ ঘিসিংয়ের জিএনএলএফ-কে মোকাবিলা করা রাজনৈতিক জীবনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে এসেছিল অশোকদের সামনে। লালকুঠি থেকে যখন পাহাড়ে সমান্তরাল প্রশাসন চালানো হচ্ছে, বিচ্ছিন্নতাবাদ মাথাচাড়া দিচ্ছে তখন বামেরাও প্রশাসন ও সংগঠনকে সমান্তরাল ভাবে ব্যবহার করেছিল। সেই সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন অশোকবাবুরা। অনেকে বলেন, ২০০০ সালে পাঁশকুড়া লাইন অতিক্রম করে যে ভাবে সুশান্ত ঘোষ, দীপক সরকাররা সিপিএমের নেতা হয়ে উঠেছিলেন, সে ভাবেই জিএনএলএফকে প্রতিহত করে নেতৃত্বের পথ মসৃণ করেছিলেন অশোক। অশোকবাবুর বয়স এখন ৭২ পেরিয়ে গিয়েছে। সিপিএম এবার কমিটিস্তরে বয়স বেঁধে দিয়েছে। তাই জেলা কমিটি থেকে বাদ পড়তে হয়েছে অশোককে। তিনি এখন রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য। মার্চে অনুষ্ঠিত হতে চলা রাজ্য সম্মেলনেও তিনি বয়সের কারণেই বাদ পড়বেন। সেকথা নিজেই জানিয়েছেন অশোকবাবু। তবে বর্ষীয়ান সিপিএম নেতা জানিয়েছেন, দলে থেকে কাজ করবেন, পার্টি যা দায়িত্ব দেবে পালন করবেন। রাজনৈতিক ধাক্কা হয়তো সামলে নেবেন। কিন্তু স্ত্রীর চলে যাওয়া—কাটিয়ে উঠতে পারছেন না অশোক।