শেষ আপডেট: 31st August 2020 18:30
দ্য ওয়াল ব্যুরো: নতুন করে অশান্তি তৈরির দিন কয়েক আগে থেকেই প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছে চিনের কয়েকটি যুদ্ধবিমানের আনাগোনা লক্ষ্য করা গিয়েছিল। প্যাঙ্গং হ্রদের দক্ষিণ প্রান্ত যেখানে চিনের সেনারা জমি দখলের চেষ্টা করে ওই এলাকায় জে-২০ ফাইটার জেটকে চক্কর কাটতেও দেখা যায়। প্যাঙ্গং লেকের পাহাড়ি এলাকার কাছে এখনও চিনের জে-২০ ফাইটার জেটের ওঠানামা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, এমনটাই জানা গিয়েছে ভারতীয় সেনা সূত্রে।
গত শনিবার রাত থেকে প্যাঙ্গং হ্রদ সংলগ্ন এলাকায় সামরিক সরঞ্জাম নিয়ে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করে চিনের বাহিনী। তবে ভারতীয় সেনার তৎপরতায় তা ব্যর্থ হয়। আজ থেকে দু’পক্ষই আবার সীমান্তের কাছে তাদের যুদ্ধবিমান মোতায়েন করেছে।
ভারতীয় সেনা সূত্র জানাচ্ছে, রীতিমতো আঁটঘাট বেঁধেই দক্ষিণ প্যাঙ্গং রেঞ্জে জমি দখলের চেষ্টা চালিয়েছিল চিন। তাই আগে থেকেই পরিস্থিতির উপর নজর রাখতে সীমান্তের কাছে যুদ্ধবিমান উড়িয়েছিল তারা। অন্যদিকে, প্যাঙ্গং হ্রদের কাছে চিনের পঞ্চম প্রজন্মের জে-২০ ফাইটার জেটকেও ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। সেনার দাবি, লাল ফৌজের এই গতিবিধি আগে থেকে আঁচ করে ফেলার কারণেই তাদের এলাকা দখলের চেষ্টা রুখে দেওয়া গিয়েছিল।
চিনের জে-২০ চেংড়ু ফাইটার জেট হল পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান। পিপলস লিবারেশন আর্মির জন্য এই শক্তিশালী ফাইটার জেট বানানো হয়েছে। শক্তিতে জে-২০ যুদ্ধবিমানের মোকাবিলা করতে পারে রাফাল ফাইটার জেট। চিনের যে কোনও যুদ্ধবিমানের মুখোমুখি মোকাবিলা করার ক্ষমতা আছে সুখোই-৩০ এমকেআই মাল্টিরোল কমব্যাট এয়ারক্রাফ্টেরও।
ভারতীয় সেনা সূত্র জানাচ্ছে, এই জে-২০ ফাইটার জেট ওঠানামা করছে চিনের হোটান বায়ুসেনা ঘাঁটি থেকে। এই হোটান এয়ারবেস রয়েছে চিনের শিংজিয়াং প্রদেশে যা পূর্ব লাদাখের কাছাকাছি। এখান থেকে বোমারু বিমানও সীমান্তের কাছে মোতায়েন করেছে চিন। হোটান এয়ারবেস থেকে দেপসাং এলাকা, গালওয়ানের ১৪ নম্বর পেট্রলিং পয়েন্ট, হটস্প্রিং, প্যাঙ্গং হ্রদ সংলগ্ন ফিঙ্গার পয়েন্ট ৪ এলাকায় নজরদারি চালানো সহজ। প্ল্যানেট ল্যাবের নতুন উপগ্রহ চিত্র দেখিয়েছে, এই এয়ারবেসেই রয়েছে দুটি জে-২০ স্টিলথ এয়ারক্রাফ্ট। সেখান থেকেই প্যাঙ্গং এলাকায় মাঝে মাঝে চক্কর কাটছে এই দুই যুদ্ধবিমান।
হোটান এয়ারবেস কারাকোরাম পাস থেকে ২৫০ কিলোমিটার দূরে। এখান থেকে প্যাঙ্গং রেঞ্জের ৪ নম্বর ফিঙ্গার পয়েন্টের দূরত্ব প্রায় ৩৮০ কিলোমিটার। সেনার দাবি, আকসাই চিনে নতুন করে সেনা মোতায়েন শুরু করেছে চিন। এই আকসাই চিনের লাগোয়া দৌলত বেগ ওল্ডিতে ভারতীয় সেনার পোস্ট রয়েছে। ওই এলাকাতেও চিনের যুদ্ধবিমানের আনাগোনা লক্ষ্য করা গেছে। কারাকোরাম পাস দিয়ে ভারতীয় নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় ঢুকে পড়ার মতলবও রয়েছে চিনের বাহিনীর। তাই ওই এলাকায় নিয়মিত জে-২০ ফাইটার জেটের ওঠানামা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
নতুন উপগ্রহ চিত্র দেখিয়েছে, চিন ও ভুটান সীমান্তের ডোকলামে সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল সিস্টেম মোতায়েন করছে পিপলস লিবারেশন আর্মি। অন্যদিকে, সিকিম-চিন সীমান্তে নাকু লা-তেও এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম তৈরি হচ্ছে। ডোকলামে মিসাইল সিস্টেম তৈরির পাশাপাশি হেলিপোর্টও তৈরি করছে চিনের বাহিনী। এই মুহূর্তে দুটি হেলিপোর্ট বানাচ্ছে চিন। একটি গালওয়ান উপত্যকা ও আকসাই চিনের কাছাকাছি তিয়ানশুইহাই এলাকায়, অন্যটি রুটোগ কাউন্টিতে। এই এলাকা আবার প্যাঙ্গং হ্রদের উত্তর সীমান্তে পড়ে। ১৫ জুন গালওয়ানের ১৪ নম্বর পেট্রোলিং পয়েন্টের কাছে ভারত-চিনের বাহিনীর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পরে ডোকলামে ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে লাল ফৌজ। চিনা বাহিনীর আস্ফালণ যতই বাড়ুক, চুপ করে বসে নেই ভারতও। আকাশসীমাকে সুরক্ষিত করতে ইতিমধ্যেই এয়ার ডিফেন্স মিসাইল সিস্টেম মোতায়েন করেছে ভারত। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় চক্কর কাটছে ভারতীয় বায়ুসেনার একাধিক কমব্যাট ফাইটার এয়ারক্রাফ্ট। কৌশলগত পদক্ষেপে চিনের থেকেও কয়েক কদম এগিয়েই আছে ভারতীয় বায়ুসেনা।