শেষ আপডেট: 24th August 2023 15:30
দ্য ওয়াল ব্যুরো: চাঁদেও বঙ্গসন্তানের জয়।
নেভিগেশন ক্যামেরা দিয়েই চাঁদের মাটি দেখবে রোভার প্রজ্ঞান, ছবি তুলবে। চাঁদে কাজ শুরু করার পরেই সক্রিয় হবে প্রজ্ঞানের নেভিগেশন ক্যামেরা। এই ক্যামেরা দিয়েই চাঁদের মাটির ছবি তুলে ইসরোকে পাঠাবে প্রজ্ঞান (Chandrayaan-3 Moon Landing)। নেভিগেশন ক্যামেরা বানিয়েছে যে টিম তার অন্যতম সদস্য উত্তরপাড়ার জয়ন্ত লাহা ও তাঁর টিম।
ইসরোর বানানো তৃতীয় চন্দ্রযানে অরবিটার নেই। শুধু ল্যান্ডার বিক্রম আর রোভার প্রজ্ঞান নিয়েই চাঁদ জয় করেছেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা। এবারের রোভার অনেক বেশি উন্নত। দ্বিতীয় চন্দ্রযানের থেকে অনেক বেশি অ্যাডভান্সড। রোভারের চারদিকেই সোলার প্যানেল লাগানো। রোভারের ‘আলফা পার্টিকল এক্স-রে স্পেকট্রোমিটার’ এবং ‘লেসার ইনডিউসড ব্রেকডাউন স্পেকট্রোস্কোপ’যন্ত্রে চাঁদের মাটি পরীক্ষা করবে, খনিজের খোঁজ করবে। চাঁদে বায়ুমণ্ডল নেই, চৌম্বকক্ষেত্রও নেই। তবে বিপুল জলের খোঁজ পেলে, (H2O)সেখান থেকে তড়িৎ বিশ্লেষণের মাধ্যমে হাইড্রজেন ও অক্সিজেনে ভেঙে নেওয়া সম্ভব। এই অক্সিজেন শ্বাসপ্রশ্বাসকে স্বাভাবিক রাখবে। আর হাইড্রজেন ব্যবহার করা যেতে পারে জ্বালানি হিসেবে। চাঁদের ওই মেরুতে আবার বরফ থাকার সম্ভাবনাও অনেক বেশি। চাঁদের আধাঁর পিঠের ঠিক কোথায় বরফ জমে আছে তার খোঁজ চালাবে প্রজ্ঞান।
সেই সঙ্গেই রোভার প্রজ্ঞানে আছে হাই-রেজোলিউশন ক্যামেরা। প্রজ্ঞানের নেভিগেশন ক্যামেরা যে টিম তৈরি করেছে তার অন্যতম সদস্য উত্তরপাড়ার জয়ন্ত লাহা। বুধবার ইসরোর গ্রাউন্ড স্টেশনেও দেখা গিয়েছিল জয়ন্তকে। চন্দ্রযানের সফল অবতরণের সময় উচ্ছাসে ফেটে পড়তে দেখা গিয়েছিল বাংলার ছেলেকে। বিজ্ঞানীদের ভিড়ে ছেলেকে দেখে আনন্দে কেঁদে ফেলেছিলেন গর্বিত বাবা-মা।
চাঁদের মাটিতে এখনও কাজ শুরু করেনি প্রজ্ঞান। অবতরণ স্থলের চারপাশ ভাল করে পরীক্ষা করার পরেই তার কাজ শুরু হবে। ইসরোর গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে প্রজ্ঞানকে পরিচালনা করবেন বিজ্ঞানীরা। রোভারের চাকা গড়ালেই অ্য়াকটিভ হবে নেভিগেশন ক্যামেরা। চাঁদের মাটির ছবি তোলা, দিকনির্ণয় করে এগিয়ে যাওয়ার কাজ করবে নেভিগেশন টুল। প্রজ্ঞানের এই কাজটা পরিচালনা করবে জয়ন্ত লাহা ও তাঁর টিম।
উত্তরপাড়ার গর্ভনমেন্ট হাইস্কুলে পড়াশোনার জয়ন্তর। ছোট থেকেই মেধাবী। শিবপুর বিই কলেজ থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে খড়্গপুর আইআইটিতে ভর্তি হন জয়ন্ত। তারপর ২০০৯ সালে যোগ দেন ইসরোতে। চন্দ্রযান-৩ মিশনের অন্যতম সদস্য জয়ন্ত লাহা। তাঁর সাফল্যে এখন গোটা উত্তরপাড়ায় উৎসবের মেজাজ। জয়ন্তর বাড়িতে এসে শুভেচ্ছা জানিয়ে যাচ্ছেন পাড়া প্রতিবেশীরা। গতকালই বাড়িতে গিয়েছিলেন উত্তরপাড়ার চেয়ারম্যান দিলীপ যাদব ও স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব।
ছেলের গর্বে গর্বিত বাবা প্রশান্ত লাহা বলেছেন, “খুবই আনন্দ লাগছে। চন্দ্রযান-২ যে কোনও কারণেই হোক সম্পূর্ণ সফল হতে পারেনি। ছেলে তখন খুব দুঃখ পেয়েছিল। বলেছিল মন খারাপ। এই মিশনের শুরু থেকেই রয়েছে জয়ন্ত। এবার সেই সফলতা এসেছে। এখন ওর অনেক কাজ বাকি।”
ছেলের সঙ্গে এখনও কথা হয়নি বাবা-মায়ের। রোভার প্রজ্ঞানকে নিয়ে এখন চরম ব্যস্তা জয়ন্তর টিমের। নেভিগেশন ক্যামেরার কাজ এবার শুরু হতে চলেছে। জয়ন্তর মা চন্দনা বলছেন, “ছেলের ছোটবেলায় পোলিও হয়েছিল। কথা বলত না। অসুস্থ ছিল। আমরাও ওকে নিয়ে চিন্তায় ছিলাম। তবে খুব পড়তে ভালবাসত। পড়াশোনার দারুণ ছিল। এখনও গল্পের বই পড়ে। আরও বড় হোক আশীর্বাদ করি।”
পুরপ্রধান দিলীপ যাদব বলছেন, “এই সাফল্যে বিজ্ঞানীদের যে টিম কাজ করেছে তাদের অভিবাদন শুভেচ্ছা জানাচ্ছে দেশবাসী। আমরাও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। তবে আমাদের কাছে আরও গর্বের উত্তরপাড়া শহরের ছেলে জয়ন্ত লাহা। এই চন্দ্রযান মিশনের অন্যতম সদস্য সে। এমন একজন সন্তানের মা বাবাকেও আমি শুভেচ্ছা ধন্যবাদ জানাই।”