শেষ আপডেট: 1st June 2023 06:21
দ্য ওয়াল ব্যুরো, পূর্ব বর্ধমান: অবশেষে বেঙ্গালুরুর জেল থেকে মুক্তি পেলেন বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী সন্দেহে ধৃত বাংলার দম্পতি। দীর্ঘ ১০ মাস কারাগারের অন্ধকারে মা শুক্লা অধিকারী ও বাবা পলাশ অধিকারীর সঙ্গে দিন কেটেছে তাঁদের শিশুপুত্র আদিরও। শ্রমিকের কাজ করতে বেঙ্গালুরু গিয়েছিলেন পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের বাসিন্দা শুক্লা ও পলাশ। সেখান থেকে বাংলাদেশি সন্দেহে গ্রেফতার করা হয়েছিল তাঁদের।
তাঁদের মুক্তির খবর এসে পৌঁছেছে জামালপুরের তেলে গ্রামে। দু’এক দিনের মধ্যেই গ্রামে ফিরছেন তাঁরা। দম্পতি পলাশ ও শুক্লা তাঁদের শিশু পুত্রকে সঙ্গে নিয়ে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের তেলে গ্রামে ফিরবেন। বাড়িতে ফিরে তাঁরা পরিবারের সবার দেখা পেলেও দেখা হবে না পলাশের বাবা পঙ্কজ অধিকারীর সঙ্গে। ছেলে, বৌমা ও নাতিকে বেঙ্গালুরু জেল থেকে মুক্ত করার জন্য আইনি লড়াইে নিঃস্ব হয়ে যাওয়া পঙ্কজবাবু অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। মাস দু'য়েক আগেই মারা যান তিনি। পলাশ বাড়ি ফিরেই সম্পন্ন করবে তাঁর প্রয়াত পিতার পরলৌকিক ক্রিয়াকর্ম। তাই এখন ছেলে পলাশের জন্য পথ চেয়ে বসে আছেন তাঁর মা ও বোনেরা।
জৌগ্রাম পঞ্চায়েতের তেলে গ্রামে রয়েছে পলাশদের টিনের চালার দু’কুঠুরি ভাঙাচোরা বাড়ি। ওই বাড়ি দেখলে যে কেউ বুঝে যাবেন দারিদ্র অধিকারী পরিবারের নিত্যদিনের সঙ্গী। পলাশদের মতোই তাদের প্রতিবেশীরাও অত্যন্ত দরিদ্র। বেশিরভাগই দিন মজুরি করে অন্নের সংস্থান করেন।
পলাশ রোজগারের আশায় স্ত্রী ও শিশু পুত্রকে সঙ্গে নিয়ে গত বছরের জুন মাসে গিয়েছিলেন ব্যাঙ্গালুরু। কিন্তু উপার্জন করাতো দূরের কথা, উল্টে সেখানে তাদের পরিণতি হয় ভয়ংকর। পলাশের আত্মীয় পিন্টু হাওলাদার বলেন,“শ্রমিকের কাজ করার জন্য পলাশের সঙ্গেই বেঙ্গালুরু গিয়েছিলেন তাঁর বাবা পঙ্কজ অধিকারী, মা সবিতাদেবী ও প্রতিবেশী সুনীল অধিকারী। সেখানকার মারাথাহাল্লি মহকুমার সুলিবেলে গ্রামের কায়েন খাঁনের ডেরায় তাঁরা সবাই ওঠেন। দৈনিক ৩০০-৪০০ টাকা মজুরির শর্তে সেখানে তারা কাজ করা শুরু করেন। হোটেল, রেঁস্তোরা, সিনেমা হল-সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগৃহীত বর্জ্যবস্তু, বোতল, প্লাস্টিক সরঞ্জাম এইসব বাছাই করাই ছিল তাঁদের কাজ।”
তিনি জানান, পলাশরা বেঙ্গালুরু যাওয়ার পর প্রথম দিকে সবকিছু ঠিকঠাকই ছিল। হঠাৎ করেই গত বছরের ২৭ জুলাই সেখানকার ভারথুর থানার পুলিশ কায়েন খাঁনের ডেরায় হানা দেয়। সেখানে যারা যারা বাংলাভাষী ছিল তারা সবাই নাকি বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী, এমন সন্দেহে ভারথুর থানার পুলিশ পাঁচজনকে পাকড়াও করে থানায় নিয়ে যায়। ওই সময়ে পলাশ, তাঁর স্ত্রী, বাবা-মা ও প্রতিবেশী সুনীল অধিকারী, ভারথুর থানার পুলিশকে জানান, তাঁরা কেউই বাংলাদেশি নন। তাঁরা নিজেদেরকে ভারতীয় বলে জানিয়ে নিজের নিজের আধার কার্ড, প্যান কার্ড, ভোটার কার্ড সবই দেখান। সেইসব দেখে সেখানকার পুলিশ পলাশের বৃদ্ধ বাবা,মা ও প্রতিবেশী সুনীল অধিকারীকে ছেড়ে দেয়। কিন্তু অদ্ভুতভাবে পলাশ এবং তাঁর স্ত্রী ও শিশুপুত্রকে আটক করে।
ভারথুর থানার পুলিশ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী অভিযোগে তাদের গ্রেফতার করে জেলে পাঠিয়ে দেয়। সেই থেকে প্রায় ১০ মাস শিশুপুত্রকে সঙ্গে নিয়ে পলাশ ও তাঁর স্ত্রী বেঙ্গালুরুর জেলেই দিন কাটায়। তার মধ্যে ভারথুর থানার পুলিশের তদন্তকারী দল তেলে গ্রামের বাড়িতে এসে সব কিছু দেখে পলাশদের ভারতীয় নাগরিকত্ব সংক্রান্ত সমস্ত নথি নিয়ে যায়। জামালপুর বিডিও অফিস, থানা ও জেলা প্রশাসন থেকেও বিভিন্ন নথি সংগ্রহ করে। তবুও জেল থেকে মুক্তি পাননি তাঁরা। পলাশদের জেল মুক্তির জন্য দীর্ঘ আইনি লড়াই চালাতে গিয়ে ওর বাবা ও মা কার্যত নিঃস্ব হয়ে যায়। অবশেষে গত ২৪ মে বেঙ্গালুরু আদালত পলাশ ও তাঁর স্ত্রীর জামিন মঞ্জুর করে।
জৌগ্রাম পঞ্চায়েতের তেলে গ্রামের নির্বাচিত সদস্য কৃষ্ণা সরকার বলেন, “পলাশদের করুণ পরিণতি দেখে জৌগ্রাম এলাকার অন্য কেউ ভিন রাজ্যে কাজে যাওয়ার আর সাহস দেখাবে বলে মনে হয় না। বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী অভিযোগে ভারতের এক রাজ্যের জেলে ভারতীয় নাগরিকের ১০ মাস বন্দি থাকাটা নজিরবিহীন।”
লালবাজারের নথির কাগজ দিয়ে কচুরির ঠোঙা তৈরি! এভাবেই কি ফাঁস হচ্ছে অন্দরের খবর?