শেষ আপডেট: 8th January 2024 13:43
দ্য ওয়াল ব্যুরো, মালদা: গায়ে নীল-সাদা জার্সি। বিপক্ষের ডিফেন্সকে ফালা ফালা করে এগিয়ে যাওয়া মারাদোনা যেন তাঁকে অন্য জগতে নিয়ে যেত। পাড়ার ক্লাব বা বিভিন্ন জায়গায় ফুটবল খেলতেন যখন, তখন ওই একটাই দেশ কখন যেন নিজের হয়ে যেত। পাড়ায় পাড়ায় বেশিরভাগ ফুটবলারের যেমন হয়, বিশ্বনাথ সোরেনের স্বপ্নটাও মাটির নীচে চাপা পড়তে বেশিদিন লাগেনি। কিন্তু আর্জেন্টিনাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। আজীবন তাঁকে চোখের সামনে দেখতে নিজের মেয়ের নাম রেখেছেন আর্জেন্টিনা। আর সেই আর্জেন্টিনাই এখন ভারতের জাতীয় দলে খেলার জন্য তৈরি করছে নিজেকে।
অভাবের জন্য ফুটবলটাকে তুলে রাখতে বাধ্য হয়েছিলেন হবিবপুর ব্লকের বুলবুলচণ্ডী কচুপুকুর এলাকার দীর্ঘদিনের বাসিন্দা বিশ্বনাথ। এখন নিজের লালিত স্বপ্ন মেয়ের মাধ্যমে বাস্তবায়িত করার লড়াইয়ে নেমেছেন। দিনমজুরি করেন। উপার্জিত সামান্য অর্থে সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরায়। তারই মধ্যে মেয়েকে জাতীয় স্তরের ফুটবলার করার জন্য হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে চলেছেন। ভাল প্রশিক্ষণ দিতে হবে মেয়েকে। দিতে হবে পুষ্টিকর খাবার। খুবই কঠিন। তবুও হারতে নারাজ তিনি।
বিশ্বনাথের মেয়ে আর্জেন্টিনা হাতিমারি উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী। সেও জানে তার বাবার স্বপ্নের দল আর্জেন্টিনা। ওদের ফুটবলাররা তার বাবার স্বপ্নের নায়ক। নিজের নামটুকুকে সম্বল করে বাবার স্বপ্ন পূরণের জন্য লড়াইটা শুরু করেছে সে। তার কথায়, “ছোটতেই টিভির পর্দায় বিশ্বকাপ ফুটবল দেখেছি। আর্জেন্টিনা দল বাবার খুব পছন্দ। আমারও। মেসি আমার অনুপ্রেরণা। বাবার মতোই খুব ছোটতেই ফুটবল খেলা শুরু করি। বাবাকে থেমে যেতে হয়েছে। কিন্তু আমি থামব না। জাতীয় দলে সুযোগ করে নিতে আপ্রাণ চেষ্টা করছি। বাবাতো পাশে আছে। ঠিক পারব।”
বর্তমানে কোচ নিমাই সরকারের কাছে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে আর্জেন্টিনা। রাজ্যস্তরে ৩ বার সুব্রত কাপ খেলে চ্যাম্পিয়ন হওয়া হাতিমারি হাইস্কুলের অন্যতম সদস্য সে। গত বছর রাজ্য চ্যাম্পিয়ন হয়ে জাতীয় পর্যায়ে দিল্লিতে খেলতে গিয়ে হারতে হয়েছিল আর্জেন্টিনার দলকে। তবে সুব্রত কাপে কালিম্পংকে ৯ এবং পুরুলিয়াকে ৬ গোলে হারিয়েছিল তার দল। তিনটি ম্যাচের পাঁচটি গোল করেছিল আর্জেন্টিনা। তার কোচ নিমাই সরকারও বলছেন, “আর্জেন্টিনা ভালো লেফট উইঙ্গার। স্ট্রাইকার হিসেবেও খেলে। গতবছর সুব্রত কাপে খুব ভালো পারফরম্যান্স ছিল। খুবই লড়াকু। ওর স্বপ্ন সফল হবে এটা আমাদেরও আশা।
বিশ্বনাথবাবুও তাকিয়ে রয়েছেন সেদিকে। বিপক্ষের ডিফেন্সকে ফালাফালা করে এগোবে তাঁর আর্জেন্টিনা। তারপর দেশের হয়ে গোওওওল! সময় গুনছেন তিনি।