শেষ আপডেট: 14th March 2025 09:53
দোল মানেই রঙের উৎসব, সকলে মিলে উদযাপন। কিন্তু অনেকেই আছেন যারা দোলের ফাগে নিজের মনকে নিজেই রাঙাতে চান। উৎসবের দামামা বাজিয়ে হইচই করার থেকে একান্তে রঙের উৎসব পালন করতেই মন চায় তাঁদের। ঘরে বসে অন্যদের ভরপুর দোল খেলা দেখতেই ভাল লাগে অনেকের। কারও বা রঙে অ্যালার্জি! রং লাগলেই সমস্যা! অথচ দোল খেলার খুব ইচ্ছে। তাঁরা নিজেরাই পারেন দোলের দিন মন রাঙাতেন সবার রঙে।
দোলের দিন নিজের ঘরে বসেই দেখুন দোলের রঙে মন ভাল করা বাংলা ছবি (Bengali Movies on Holi)। দোলের প্রেক্ষাপটে সিনেমার গল্প এবং আবিরে গুলালে মন ভাল করা গান শুনে মেতে উঠুন রঙের উৎসবে।
তরুণ মজুমদারের মন তৃপ্ত করা আইকনিক ছবি। এই ছবিতে বাঙালি সংস্কৃতি আর বাঙালির প্রতিটি উৎসব ভীষণ ভাবে ধরা পড়েছে ছবির চিত্রনাট্যে। বিজয়া থেকে সরস্বতী পুজো হয়ে দোল। গ্রাম বাংলার দোল আর নিখাদ বাঙালিয়ানা দেখতে এই ছবি দেখতেই হবে। শিমূলতলার লাল মাটিতে বিহারীদের সঙ্গে কী ভাবে বাঙালি সংস্কৃতি একাত্ম হয়ে যায় তা ধরা পড়েছে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সুরের দোলের গানে, 'সাত সুরো কি বান্ধ পায়েলিয়া'। একদিকে দোলপূর্ণিমার সকালে আবির নিয়ে প্রভাতফেরী, অন্যদিকে বাড়ির বাইরে থাকা ছেলের ঘরে ফেরা। অনুপ কুমার, শমিত ভঞ্জ, সন্ধ্যা রায়, কালী ব্যানার্জী, সত্য ব্যানার্জী, অয়ন ব্যানার্জী সব অভিনেতার উপস্থিতি এই গানে চমৎকার। প্রকৃতিও যে রঙিন হয়ে ওঠে ফাগের সাজে, তা হেমন্ত সুরে স্পষ্ট। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে এই গান গেয়েছিলেন শক্তি ঠাকুর। গানের বাংলা কথা পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আর হিন্দি কথা লিখেছিলেন গীতিকার হৃদয়েশ পান্ডে।
অভিজিৎ সেনের ‘দেবতা’ ছবিতে আরডি বর্মন-স্বপন চক্রবর্তী ম্যাজিক দোলের গানে ‘বছর ঘুরে এল রে ফাগুন’। দুই জোড়া জুটি গান দিয়েই কৈশোর পেরিয়ে যৌবনে পৌঁছয়। ভিক্টর-দেবশ্রী-অর্জুন-ইন্দ্রাণীর লিপে অমিত কুমার-আশা ভোঁসলে-কবিতা কৃষ্ণমূর্তি-শৈলেন্দ্র সিংয়ের কণ্ঠে জমজমাট হোলির গান। কুয়োর ধারে পিচকিরির রঙের স্রোতে দেবশ্রী রায় আর ইন্দ্রাণী হালদারের কোমর নাচানো ঠুমকা আরও জমজমাট করে তোলে।
এ গান ছাড়া দোল হবে তাই কখনও হয়? দোল মানেই যে গান সবার আগে সবার মনে পড়ে, বীরেশ চট্টোপাধ্যায়ের ‘একান্ত আপন’। ধনাঢ্য শিল্পপতির একমাত্র কন্যা সুদীপা, শিক্ষিতা, চিত্রশিল্পী, সুগায়িকা আবার ডাকসাইটে সুন্দরী। সুদীপার বাবার বন্ধু চার্চের ফাদার কাকু হাজির হয়েছেন সুদীপাদের বাড়ি। সেই ফাদার কাকুর শ্বেতশুভ্র পোশাকে রঙ লাগিয়ে সুদীপা ওরফে অপর্ণা সেন গেয়ে ওঠেন, হোলির আইকনিক গান, ‘খেলব হোলি রং দেব না।’ সেই রঙ নিয়ে সুদীপা হাজির হয় সখী কেয়ার বস্তির ঘরে। দুজনে রঙ খেলতে খেলতে গেয়ে ওঠে এই ডুয়েট গান আশা ভোঁসলে আর কবিতা কৃষ্ণমূর্তির কণ্ঠে। তার পরই বন্ধ ঘরের মধ্যে আচমকা দেখা কেয়ার গুন্ডা দাদা রণবীরের সঙ্গে সুদীপার। দোলের ফাগে মন বিনিময় দুজনের।
অপর্ণা সেনকে মধ্য যৌবনে টলিউডে ফের আর এক বার বিপুল স্টারডম দেয় এই গান। আর ডি বর্মন বম্বে ঘরানার সাথে বাঙালি আবেগ মিশিয়ে দিলেন এই গানে।
প্রভাত রায়ের সুপারহিট ছবি ‘প্রতিকার’। এসময় শোলের ঢংয়েই মাঠ জুড়ে দোল খেলার প্রভাব রঙিন বাংলা ছবিতে আটের দশক জুড়ে চলেছে। বাপ্পি লাহিড়ির সুরে ‘দোল দোল দোল’ গানে মহম্মদ আজিজ, চন্দ্রাণী মুখার্জী, অভিজিৎ। অভিনয়ে দেবশ্রী, ভিক্টর, চিরঞ্জিৎ। দেবশ্রী রায় সব নাচের কেন্দ্রবিন্দু।
দীনেন গুপ্তর রোম্যান্টিক-কমেডি, ‘বসন্ত বিলাপ’। ‘বসন্ত বিলাপ’ মহিলা মেসের মেয়েরা দোলের দিন রঙ খেলে হারমোনিয়াম বাজিয়ে গেয়ে উঠল ‘ও শ্যাম যখন তখন, খেলো না খেলা এমন, ধরলে আজ তোমায় ছাড়ব না’। সুধীন দাশগুপ্তর সুরে গাইলেন আরতি মুখার্জী ও সুজাতা মুখার্জী। লিপ দিলেন অপর্ণা সেন, কাজল গুপ্ত, সুমিত্রা মুখার্জী, শিবানী বসুরা। নিখাদ পাড়া কালচার উঠে এল ছবিতে। মেয়েদের মেসের জানলায় রবি ঘোষের উঁকি মারা, মেয়েদের হস্টেলে ঢোকা চিন্ময় রায়কে রংচান থেকে মেসের বারান্দার উপর থেকে অনুপ কুমারের মাথায় রঙের বালতি ঢেলে দেওয়া অপর্ণা সেন। আর সৌমিত্র চ্যাটার্জীর রঙের বাজারে বীরপুরুষ হিরো সেজে ঘুরে বেড়ানো। মনের রঙ বিনিময় হয়ে যায় দোলের রঙে রাধে-শ্যামের।
বম্বের ম্যাজিক বাংলা ছবিতে এবার আনলেন রানি মুখার্জীর বাবা রাম মুখার্জী। তবে তখন রানি সিনেমায় আসেননি। ছোট শালী দেবশ্রী রায়কে নায়িকা করেই রাম হিট দিলেন বক্সঅফিসে। সঙ্গে চিরঞ্জিত,তাপস পাল, বিপ্লব চ্যাটার্জী, চৈতী ঘোষাল। এই গানে শেষ নাচতে দেখা গেছিল ছায়া দেবীকে। ছায়া দেবীর শেষ ছবি। বাপ্পি লাহিড়ির সুরে দোলের গানে গাইলেন নিজে বাপ্পি সঙ্গে অভিজিৎ, সাব্বির কুমার, সুজাতা গোস্বামী।
দেবশ্রী রায় প্রযোজিত ও অভিনীত 'দেবাঞ্জলি' ছবিতে ক্যামিও নাচে এই গানে দেখা গেছিল রানি মুখার্জীকে। রানির সঙ্গে তুমুল হোলির গানে নাচলেন টোটা রায়চৌধুরী। উদিত নারায়ণ আর অনুরাধা পাড়োয়ালের গানের কথা লিখেছিলেন পুলক বন্দ্যোপাধ্যায় ও সুর বাবুল বোসের।
প্রভাত রায়ের ‘প্রণমি তোমায়’ ছবিতে বাপ্পি লাহিড়ির সুরে কবিতা ও মহম্মদ আজিজের হিট ডুয়েট গান ‘সকাল হতে না হতে কেন এলে রং দিতে’। কৃষ্ণ রাধার সাজে পর্দায় দেখা গেল প্রসেনজিৎ,নবাগতা রেশমা ও অর্জুন চক্রবর্তীকে। এই গান আজও দোলের দিনে ভীষণ প্রিয় সবার।
বসন্তের ফাগ ছড়িয়ে দিল ‘গোত্র’ ছবির ‘নীল দিগন্তে’ গান। শিবপ্রসাদ মুখার্জী-নন্দিতা রায়, ডুয়ো পরিচালকের এ ছবিতে বসন্তের গান গাইলেন শ্রেয়া ঘোষাল। রবীন্দ্রসঙ্গীতের সঙ্গে আধুনিক লিরিক্স মিশ্রণ করে এক কোমল প্রেমের দোলের গানের জন্ম হল অনিন্দ্য চ্যাটার্জীর সংগীত পরিচালনাতে। প্রজাপতির মতো ঝুমা মানালি রঙ ছুড়ে দিল গম্ভীর ও কঠিন তারেক আলি নাইজেলের মুখে। কঠিন পৌরুষ স্নাত হল বসন্ত বাহারে, দোলের রঙে মন দেওয়া-নেওয়া হয়ে গেল তারেক-ঝুমার। গোত্র ছবির ‘নীল দিগন্তে’ গানটা শুনলেই মনে আলাদা একটা অনুভূতি হয়। যাঁরা অবাঙালি, বাংলা ভাষা বোঝেন না, তাঁদেরও গানের সুরটা মন ভরিয়ে দেয়। দোলের এ গান হৃদমাঝারে থাক।