শেষ আপডেট: 8th September 2023 08:40
দ্য ওয়াল ব্যুরো, পূর্ব বর্ধমান: শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে তেতে রয়েছে রাজ্য। এই দুর্নীতিতে নাম জড়ানোয় জেলগারদের পেছনে ঠাঁই হয়েছে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী সহ শিক্ষা দফতরের একাধিক কর্তার। এই পরিস্থিতির মধ্যে বেনজির আর্থিক দুর্নীতি ও জালিয়াতির অভিযোগ উঠল পূর্ব বর্ধমানের এক স্কুলের (Bardhaman School Corruption) প্রধান শিক্ষকের (Principal) বিরুদ্ধে।
এই ঘটনা ফাঁস হতেই বেপাত্তা হয়ে গিয়েছেন কাঁচড়াপাড়ার বাসিন্দা ওই শিক্ষক। জেলার মাধবডিহি থানার পুলিশ তাঁকে খুঁজছে। ওই শিক্ষক বর্ধমান জজ কোর্টে আগাম জামিনের আবেদন করেছিলেন। যদিও সেই আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন বিচারক।
প্রায় পঁচাত্তর বছরের পুরনো দুর্গাদাস উচ্চ বিদ্যালয়। স্কুলটি যথেষ্ট সুনাম রয়েছে এলাকায়। ২০১৯ সালে প্রশান্ত দাস স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে স্কুল সংক্রান্ত বিষয়ে নানা অভিযোগ আসতে শুরু করেছিল।
প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতি ও জালিয়াতির অভিযোগের কথা প্রকাশ্যে আসতেই অভিভাবকরাও জানান, প্রশান্ত দাস স্কুলের দায়িত্ব নেওয়ার পর পঠনপাঠনের মান পড়তে শুরু করেছে। পরিকাঠামোগত উন্নয়ন থমকে গেছে। বন্ধ হয়ে গেছে মিডডে মিলও।
তাঁদের আরও অভিযোগ, এমনকী স্কুলের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন পর্যন্ত হয়নি। প্রধান শিক্ষকের জালিয়াতি নিয়ে স্কুলের বাকি শিক্ষকরাও একই অভিযোগ করছেন।
গত ১৭ অগস্ট রায়নার সংশ্লিষ্ট সার্কেলের স্কুল পরিদর্শক সুশান্ত ঘোষ স্কুলে গেলে তাঁকেও বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়। ওইদিনই সব অভিযোগ শুনে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে এফআইআর করার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি। দিনকয়েক আগে মাধবডিহি থানায় প্রধান শিক্ষক প্রশান্ত দাসের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেন সুশান্ত ঘোষ। তাতে তিনি প্রতারণা, স্কুলের গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র নষ্ট, ব্যাঙ্কের সঙ্গে জালিয়াতি করার অভিযোগ করেছেন।
এসআই সুশান্ত ঘোষ পুলিশকে জানিয়েছেন, বেশ কয়েকটি চেকে, স্কুলের গৃহীত সিদ্ধান্তের খাতায় তার সই জাল করা হয়েছে। এছাড়াও চারটি চেকে তাঁর সই জাল করে টাকা তোলা হয়েছে। এমনকী পড়ুয়াদের পোশাকের জন্যে চেকে '১০০০ টাকা' লেখা থাকলেও চেকে জালিয়াতি করে একবার ৬১ হাজার টাকা ,আরেকবার ৭১ হাজার টাকা তোলা হয়েছে। একই রকম ঘটনা অন্য ক্ষেত্রেও ধরা পড়েছে।
২০২১ সালের ২২ মার্চ সর্বশিক্ষা মিশনের অ্যাকাউন্ট থেকে ২৬১০ টাকা তোলার জন্যে চেক লেখা হয়েছিল। কিন্তু দু'দিন পর ওই অ্যাকাউন্ট থেকে ৯২,৬১০ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ২০২০ ও ২০২১ আর্থিক বছরেও সর্বশিক্ষা মিশনের তহবিল নিয়ম মেনে খরচ হয়নি বলে পুলিশের কাছে অভিযোগে জানিয়েছেন এসআই।
এসআই সুশান্ত ঘোষ জানিয়েছেন, চলতি বছরের ৩ জুলাই থেকে প্রধান শিক্ষক 'বেপাত্তা'। ই-মেলের মাধ্যমে তাঁকে তিনবার চিঠি দেওয়া হয়, হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগেরও চেষ্টা করা হয়। কিন্তু প্রধান শিক্ষকের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। স্কুলে যোগ দেওয়ার জন্যে প্রধান শিক্ষককে বলা হলেও তিনি তা করেননি। তাই প্রধান শিক্ষকের বেতন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আপাতত স্কুলের একজন শিক্ষককে টিচার-ইন চার্জের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
স্কুলের শিক্ষক মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন, 'আমরা চাই পড়ুয়া এবং স্কুলের স্বার্থে প্রশাসন ও শিক্ষা দফতর যথাযথ ব্যবস্থা নিক, যাতে অচলাবস্থা কাটিয়ে স্কুল পুনরায় নিজের মর্যাদা ফিরে পায়।'
আরও পড়ুন: রানাঘাটে সোনার দোকানে ডাকাতি কাণ্ডে গুলিতে জখম এক দুষ্কৃতীর মৃত্যু