শেষ আপডেট: 7th March 2025 14:12
দ্য ওয়াল ব্যুরো: জলপাইগুড়িতে ৫৪ দিনের শিশুকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। তারপরই তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয় ও পরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। এমন ঘটনায় সুস্বাস্থ্যকেন্দ্রের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তোলেন পরিবারের সদস্যরা। ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায় জলপাইগুড়ির লাটাগুড়িতে। স্থানীয় এবং শিশুর পরিজনরা পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। শুক্রবার জলপাইগুড়ি জেলার ক্রান্তি ব্লকের মৌলালি গ্রামে পরিবারটির সঙ্গে দেখা করতে যান ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখার্জি। প্রশ্ন তোলেন রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো নিয়ে। সকলকে পরিবারটির পাশে থাকার অনুরোধ জানান।
জানা গিয়েছে, বুধবার শিশুটিকে লাটাগুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের উত্তর ঝাড়মাটিয়ালি সুস্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গিয়েছিলেন মা কবিতা অধিকারী ও বাবা কৌশিক অধিকারী। সেখানে শিশুকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। এর পরে তারা শিশুকে নিয়ে বাড়ি ফিরে যান। স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিও বন্ধ করে দেওয়া হল বলে অভিযোগ। এদিকে রাত হতেই শিশুর শারীরিক অবস্থা খারাপ হতে শুরু করে। জ্বরে ছটফট করতে থাকে ওই একরত্তি। শিশুটিকে তখন জ্বরের ওষুধ খাওয়ান তার মা। কিন্তু, তারপরও জ্বর কমেনি। কিছুক্ষণ পরই হাঁচির সঙ্গে শিশুর মুখ থেকে রক্ত বের হতে শুরু করে।
শিশুর শারীরিক অবস্থা ক্রমেই অবনতি হতে দেখে ওই দম্পতি জলপাইগুড়ি মেডিক্যালের মাদার অ্যান্ড চাইল্ড হাবে নিয়ে যান। তবে সেখানে শিশুকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। চিকিৎসকেরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। পরিবারের অভিযোগ, ভ্যাকসিনে কোনও সমস্যা থাকার জন্যই এই মৃত্যু। পরিবারের তরফে বিচার চেয়ে বাচ্চাটির দেহ নিয়ে জাতীয় সড়ক অবরোধ করা হয়। চলে বিরাট ঝামেলা।
এদিন এই পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যান মিনাক্ষী। পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন। পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ক্ষোভ উগরে দেন। বলেন, 'বাচ্চাটা তো মারা গেছে। ভ্যাকসিন নেওয়ার পরই অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরিবারটা যা হারানোর হারাল। এখন অনেকগুলো প্রশ্ন পরিবারের মাথায় আসছে। প্রশ্নগুলোকে সমর্থন করছে স্বাস্থ্য দফতরের ভূমিকা। যেমন, ভ্যাকসিন দিল তারপরই উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র বন্ধ করে দিল। রাজ্যে তো কতকিছু ঘটছে, তা বলে স্বাস্থ্যকেন্দ্র বন্ধ করে দেবে? এখানে যেভাবে জাল ওষুধের ছড়াছড়ি হয়েছে, যেভাবে জাল ওষুধ চলছে এবং সরকার নিজে বলছে জাল ওষুধ, ড্রাগ কন্ট্রোলার অফিসগুলো একটার পর একটা ওষুধ বন্ধ করছে। জলপাইগুড়িতেই দেখলাম। জাল স্যালাইনের জন্য এক প্রসূতি মা মারা গেলেন। এই আতঙ্ক থেকে তো কেউ বের হতে পারছেন না। পরিবার বলছে, আরও একটা বাচ্চা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। যদি ওষুধের জন্য হয় তাহলে দ্রুত ধরা দরকার। আর যেন কোনও বাচ্চার এমন না হয়। বাবা মায়ের তো সবচেয়ে আবেগের, নাড়ির টান,. তারপরও বাবা মা বলছে, আর যেন কোনও বাচ্চার এমন না হয়। এটা আমাদের সাহস দিচ্ছে।'
চিকিৎসা পরিকাঠামো তলানিতে। মীনাক্ষীর অভিযোগ, জলপাইগুড়ির ওই এলাকায় একটা নতুন ব্লক হয়েছে, স্বাস্থ্য দফতর ঘোষণা করেছে। সেখানে একটা স্বাস্থ্য দফতর আছে ব্লক লেভেলে, বিএমওএইচ আছেন কিন্তু কোনও পরিকাঠামো নেই। এফআইআর করতে গেল পরিবার, পুলিশ যথেষ্ট গাফিলতি করল। টাল বাহানা করল। এফআইআর নেবেন, তদন্ত করবেন, তারপর যা হবে হবে। এফআইআর নেবেন কিনা তারজন্য কাউকে ওপর মহলে ফোন করতে হবে ২০টা। আর যার ৫৪ দিনের বাচ্চা চলে গেলে, তাকে ছুটতে হবে শুধু এফআইআর করতে।
জাল ওষুধ, ভুয়ো ভ্যাকসিন নিয়ে রাজ্যবাসী যথেষ্ট আতঙ্কিত। মীনাক্ষী জানান, গোটা বিষয়টা রাজ্যের মানুষের মনে জাল ওষুধ সম্পর্কে একটা আতঙ্ক তৈরি করেছে। পরিবার দাবি করেছে, জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে সম্পূর্ণ ভিডিওগ্রাফি করে পরিবারের একজনের উপস্থিতিতে ওই বাচ্চাটির পোস্টমর্টেম হয়। তাঁর কথায় এসব কথা বলতেও কেমন লাগছে। ৫৪ দিনের একটা বাচ্চার শরীর কাটাকাটি হবে! তবে পরিবার চাইছে, নিরপেক্ষ তদন্ত হোক যাতে আর কোনও বাচ্চার সঙ্গে এমন না হয়। মীনাক্ষী বলেন, 'সকলকে বলব, সন্তানহারা পরিবারের পাশে থাকুন। কী করে হল জানুন, যাতে আর কারও পরিবারে না হয় এমন। আমাদের অনুরোধ পরিবারটির পাশে থাকুন।'