শেষ আপডেট: 18th July 2022 09:48
দ্য ওয়াল ব্যুরো: তিনি এখন দিবারাত্রি সীমান্তে দাঁড়িয়ে দেশকে পাহারা দিচ্ছে। শত্রুদের হাত থেকে নিজের মাতৃভূমিকে বাঁচাতে যুদ্ধে যেতেও তৈরি। বীরভূমের সিউড়ির (Siuri) সেই চুমকি বাউড়ির জীবনটা এখন যে খাতে বইছে, হয়তো সেটা হত না যদি না তিনি স্কুলজীবনে প্রতিবাদ করতেন। যদি বাবা-মায়ের কথা শুনে বিয়ের পিঁড়িতে বসে পড়তেন তাহলে হয়তো উর্দি গায়ে তাঁকে দেখাই যেত না।
গরিব পরিবারের বেড়ে ওঠা চুমকির জীবনও ছিল গ্রামের আর পাঁচটা মেয়ের মতোই। রোজ স্কুল যাওয়া, পড়াশুনা করা, মায়ের হাতে কাজ করাই ছিল নিত্যদিনের রুটিন। চোখে স্বপ্ন ছিল পড়াশুনা শিখে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর। আচমকাই সেই স্বপ্নে ছেদ পড়ে। তিনি জানতে পারেন তাঁর বাবা-মা তাঁকে বিয়ে দিয়ে দেওয়ার তোড়জোড় করছেন। ছেলে দেখা , পাকা দেখা চলছে।
কিন্তু তখন ওসবের দিকে মনই ছিল না চুমকির। মাথায় ঘুরছে তখন সামনের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার কথা। মা বাবাকে হাজার অনুনয়ন বিনয়েও কাজ হয়নি। অগত্যা ঠিক করে ফেলেন বাড়ি থেকে পালাবেন। যেমন ভাবা তেমন কাজ। বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে উঠলেন পিসির বাড়ি। সেখান থেকেই দিলেন উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা (HS Exam)। ভাল নম্বর নিয়ে পাশ করার পর শুরু হয় জীবনের এক অন্য লড়াই।
একার চেষ্টায় কিছু করে দেখানোর তাগিদ নিয়ে জীবন শুরু করেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলোয় বিশেষ আগ্রহ ছিল। একাধিক খেলাধুলায় অংশ নিতেন। পুরস্কারও পেতেন। সেই সঙ্গে ছিল ছোটবেলার স্বপ্ন সেনা বা পুলিশে যোগ দেওয়ার। সেই মতো নিজেকে তৈরি করতে থাকেন। সেনাবাহিনীর পরীক্ষায় একাধিকবার বসেন, অনেকবার অনুত্তীর্ণ হয়েছেন তাও ভেঙে না পড়ে লড়াই চালিয়ে গেছেন। শেষ পর্যন্ত ২০১৮ সালে অসম রাইফেলসের পরীক্ষায় আসে সাফল্য (Dreams come true)। গত মার্চ মাসে ট্রেনিং শেষে যোগ দেন সেনায়।
এখন তিনি অন্য জীবনের লড়াই চালাচ্ছেন। সীমান্তে দাঁড়িয়ে পাহারা দিচ্ছেন। চুমকির মতো এমন অনেকেই আছেন বাংলা তথা দেশের কোণায় কোণায়। যাঁরা নিজের স্বপ্ন পূরণের জন্য সবকিছু করতে পারেন। করেনও। চুমকির মতো দীর্ঘ লড়াই ও অধ্যবসায়ই এনে দেয় সাফল্য। যে গল্প কোনও সিনেমার চিত্রনাট্য থেকে কম নয়।
উৎসশ্রীর জোয়ার, চলে গেলেন একমাত্র শিক্ষিকা! খড়গ্রামের স্কুলে শুধুই পড়ুয়া, পাহারায় কর্মচারী