শেষ আপডেট: 25th April 2023 19:22
দ্য ওয়াল ব্যুরো, পূর্ব বর্ধমান: পথ চলতি মানুষজন থমকে দাঁড়িয়েছেন। এমনকী নীল বাতি লাগানো গাড়ির চাকাও আটকে গিয়েছে। এ কী কাণ্ড! প্রবল গরমে বর্ধমানের (Bardhaman) উত্তপ্ত রাস্তায় গড়াগড়ি দিচ্ছেন দুই যুবক। তাদের হাতে শক্ত করে ধরা রয়েছে জাতীয় পতাকা। পাশে প্ল্যাকার্ড ও জাতীয় পতাকা হাতে তাঁদের ৮৬ বছর বয়সি মা এবং বোন (family)। ৮ এপ্রিল বালুরঘাটে দণ্ডিকেটে ঘরওয়াপসির ছবি দেখা গিয়েছিল। কিন্তু বর্ধমানে রাস্তায় গড়াগড়ি দেওয়ার কারণ কী? শাসক দলের (TMC) অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতেই এই গড়াগড়ি বলে জানাচ্ছেন জিবান ও বাজান।
কী অভিযোগ?
পূর্ব বর্ধমানের মেমারি থানার হেতমপুর গ্রামের বাসিন্দা জিবান শেখের পরিবার। একটি নয় একাধিক অভিযোগ তাদের। আর সব কিছুর নেপথ্যেই তৃণমূল কংগ্রেস রয়েছে বলে অভিযোগ। এরই ফয়সালা চেয়ে গরম রাস্তার উপর গড়াগড়ি খেলেন দুই ভাই জিবান ও বাজান। এভাবেই তাঁরা পৌঁছলেন জেলাশাসকের দফতরের সামনে। সেখানে মা ও বোনকে নিয়ে ধর্নায় (dharna) বসে পড়েন। বুকে তাদের অভিযোগ ও দাবি লেখা প্ল্যাকার্ড। সঙ্গে ছিল বাবাসাহেব আম্বেদকরের ছবিও।
জিবান শেখ বলেন, “বারবার আমাদের ছোট বোনের বিয়ে ভেঙে যাচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জেনেছি, এই পরিবারের মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া যাবে না বলে তৃণমূল কংগ্রেসের দলীয় নিদান। এমনকী বোনের বিয়ের চেষ্টার মধ্যেই নিজেদের জমি বিক্রি করতে গিয়েও সমস্যায় পড়েছি। আমাদের জমির রেকর্ডে এখন গরমিল পাওয়া যাচ্ছে। হিমঘরে আলু রাখতে গেলেও বাধা দেওয়া হচ্ছে।” কিন্তু এসবের কারণ কী? জিবান বলেন, “আমরা পুরোনো কংগ্রেস পরিবার। তাই আমাদের উপর অত্যাচার করা হচ্ছে।” অনেকদিন ধরেই এসব সহ্য করতে হচ্ছে বলে অভিযোগ। জিবান বলেন, “আগে প্রাক্তন বিধায়ক নার্গিস বেগম এবং এখন বর্তমান বিধায়ক মধুসূদন ভট্টাচার্যকে সব জানালেও কোনও সুরাহা হয়নি। বিডিও-র কাছে বিহিত চাইতে গেলে তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের ব্লক সভাপতির কাছে যেতে বলছেন।”
ওই পরিবার যখন ধর্নায় বসেছে তখন অন্য কাজে জেলাশাসকের দফতরে আসেন মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। তিনি তাদের অভিযোগের কথা শোনেন। জানতে চান বিডিও র কাছে গিয়েছিলেন কিনা। জিবান শেখ মন্ত্রীকে বেশ কিছু কাগজ দেখান। পরে মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেন, “ওদের নাকি স্বাস্থ্যসাথী কার্ড ছিল। কে কেড়ে নিয়েছে।” তবে মন্ত্রী অভিযোগের সুরে বলেন, “খবরের জন্য ওরা এভাবে বসে আছেন। ওরা কেন দিদির দূতের কাছে বলেননি?” তবে মন্ত্রী জানিয়েছেন তিনি জেলাশাসকের সঙ্গে ওই পরিবারের বিষয়ে কথা বলবেন।
জিবান শেখের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে কংগ্রেস। জেলা যুব কংগ্রেসের সভাপতি গৌরব সমাদ্দার বলেন, “এই মধ্যযুগীয় ব্যাপার মেনে নেওয়া যায় না। এই অসহায়তার বিহিত প্রশাসনকে করতে হবে। দলের পক্ষ থেকে ওই গ্রামে যাব। দেখতে চাই কে কতবড় নেতা আছেন যে এই অন্যায় চালিয়ে যাবেন।”
তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস বলেন, “এরকম হয়ে থাকলে খুব অন্যায় হয়েছে। এর বিহিত হোক। তবে একটি ব্যক্তিগত বিষয়কে দলের সঙ্গে জড়িয়ে দিয়ে ওই পরিবার ঠিক কাজ করেনি। এটা সম্ভবত কোনও ব্যক্তিগত আক্রোশের ঘটনা।” শেষ পর্যন্ত জেলাশাসক ওই পরিবারকে বিষয়টি দেখার আশ্বাস দিয়েছেন। জেলাশাসক প্রিয়াঙ্কা সিংলা বলেন, “আমি ওদের বর্ধমান দক্ষিণ মহকুমা শাসকের কাছে পাঠিয়েছি। মহকুমাশাসক বিষয়টি দেখছেন।”
কালিয়াগঞ্জ ও কালিয়াচক কাণ্ডে রাজ্যের রিপোর্ট তলব! দিল্লি থেকে তড়িঘড়ি ফিরছেন রাজ্যপাল