শেষ আপডেট: 24th June 2019 08:52
দ্য ওয়াল ব্যুরো, জলপাইগুড়ি : আমসত্ত্ব দুধে ফেলি, তাহাতে কদলি দলি, যে ঠিক কতটা সুখের, তার সন্ধান সেই কবে দিয়েছিলেন রবি ঠাকুর। ছোটদের মিড ডে মিল খাওয়াতে গিয়ে শিশুমনের সুলুক জানা বিশ্বকবির ভাবনাকে এ বার হাতিয়ার করলেন ধূপগুড়ির একটি স্কুলের মাস্টারমশাইরা। ভরা গরমে গাঁ গঞ্জ মাত করে দিচ্ছে হিমসাগর, ল্যাংড়া, দসেরির মিঠে সুবাস। বই বগলে সক্কাল সক্কাল স্কুলে পড়তে আসা কচিকাঁচারা কি শুধু গন্ধ শুঁকেই খান্ত থাকবে? তাদের হতদরিদ্র পরিবারে মা বাবার সাধ্য কই ৪০ বা ৫০ টাকা কিলো দরে আম কিনে খাওয়ানোর। স্কুলেই তাই ইচ্ছেপূরণ। মিড ডে মিলে দুধ ভাত আর সঙ্গে একেকটা আস্ত হিমসাগর আম। স্টার্টারে আবার ম্যাঙ্গো শেক। আম-দুধের সমাহারে আহলাদে ভেসে গেল গোটা স্কুল। ধূপগুড়ির বারোঘড়িয়া বটতলি স্বর্ণময়ী প্রাথমিক বিদ্যালয়। গ্রামের পথ ধরে হেঁটে এ স্কুলেই রোজ পড়তে আসে বিভাস রায়। মিড ডে মিলের থালায় খিচুড়ি নেই, সয়াবিন নেই. বরং দুধভাত। সঙ্গে আবার আস্ত আম। চোখের ভাষায় খুশি জানান দিয়ে যায় বিভাসের। কথা ফোটে না আর। স্কুলের টিচার ইনচার্জ জয় বসাক। বরাবরই একটু অন্যরকম ভাবেন। সে ছোটদের শিক্ষাই হোক, আর খাবার। যা কিছু নতুন তাই টানে ছোটদের, বেশ বুঝতে পারেন তিনি। মিড ডে মিলের জন্য যা সরকারি বরাদ্দ, তাতে প্রতিদিনের খিচুড়ি আর সপ্তাহে দু বা তিনদিন ডিম, এর বেশি কিছু করা যায় না। তাই নিজের পকেটে হাত পড়ে যায় হামেশাই। তিনি একা নন, স্কুলে তাঁকে নিয়ে মোট ছ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা। পড়ুয়াদের একঘেয়েমি কাটাতে মাঝেমধ্যেই নিজেরা চাঁদা তোলেন। আর এমন দুধ আমের আয়োজন। https://www.youtube.com/watch?v=QeYcLMBUXTw&feature=youtu.be জয়বাবু বলেন, “আমার স্কুলের ১২২ জন পড়ুয়ার মধ্যে বেশিরভাগ ফার্স্ট জেনারেশন লার্নার। এবং অত্যন্ত গরিব পরিবারের। তাদের পক্ষে ৫০ টাকা কিলো আম কিনে খাওয়া মুশকিল। তাই স্কুলের বরাদ্দের সঙ্গে আমরা কিছু টাকা মিলিয়েই এই আয়োজন।” জানা গেল, মাঝেমধ্যেই খিচুড়িকে বাই বাই করেন তারা। তেতোর ডাল, নিমপাতা ভাজা, ডিমের কসা, মাশরুম এ সবও এসে যায় প্রতিদিনের খাবারে। জয়বাবু বলেন, “জানেন, বছর চারেক আগেও পড়ুয়াদের স্কুলে উপস্থিতির হার ছিল ৫০ শতাংশ। গত দেড় বছর ধরে মিড ডে মিলে কী করে নতুনত্ব আনব, তাই নিয়ে ভাবনা চিন্তা শুরু করি। হাতে হাতে ফল মিলেছে। এখন প্রতিদিন উপস্থিতির হার থাকে প্রায় ৮০ শতাংশ।” ধূপগুড়ি ব্লকের মিড ডে মিল প্রকল্পের দায়িত্ব প্রাপ্ত আধিকারিক সঙ্গীতা ভট্টাচার্য বলেন, “পড়ুয়া টানতে শিক্ষকদের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। এই স্কুলকে দেখে অন্যান্য স্কুলও যদি এমন উদ্যোগ নেয় তবে আমাদের প্রচেষ্টা সার্থক হবে।”