শেষ আপডেট: 14th May 2019 01:16
১৯ বছরে বাড়েনি চায়ের দাম, এখনও ১ টাকা, ঊষাবৌদির দোকানে ভিড় তো হবেই
দ্য ওয়াল ব্যুরো, নদিয়া : গত ৩৩ বছরে মাত্র একবার বেড়েছে দাম। ৪০ পয়সা থেকে ১ টাকা। এরপর গত ১৯ বছর ধরে আর কোনও নড়চড় হয়নি। কল্যাণী পুরসভার অন্নপূর্ণা বাজারে ঊষাবৌদির চায়ের দোকানে ১ টাকায় থমকে গিয়েছে এক গ্লাস চায়ের দাম। সকাল- সন্ধে মানুষের ভিড় যেন লেগেই রয়েছে। মর্নিং ওয়াক বা ইভনিং ওয়াক, ফেরার পথে বা সন্ধের আড্ডাটা এই দোকান ঘিরেই। দোকানের মালিক ঊষা জয়ধর। স্বামী প্রশান্ত রাজমিস্ত্রীর কাজ করতেন। তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে সংসারের কিছুটা সুরাহা করতেই ১৯৮৬ সালে, আগের মালিক বীরেন জয়ধরের কাছ থেকে এই চায়ের দোকানটি কিনেছিলেন ঊষাদেবী। বললেন, “তখন এই দোকানে লিকার চায়ের দাম ছিল ৩০ পয়সা। দুধ চা ৪০ পয়সা। আমি দোকান কিনেও সেই দামেই চা বিক্রি করতাম। ২০০০ সাল পর্যন্ত ছিল সেই দাম।” ঊষাদেবী জানালেন, ২০০০ সালে বন্যা হয়েছিল। তখন সংসারে বেশ টান। দুই ছেলেই ছোট। তাই চায়ের দাম বাড়িয়ে করলেন এক টাকা। ব্যাস! তারপরে গত ১৯ বছরে আর দাম বাড়ানোর কথা ভাবেননি কখনও। এই কয়েক বছরে দুধ, চিনি সবেরই দাম বেড়েছে কয়েক গুণ। কিন্তু চায়ের দাম সেই এক টাকাতেই বেঁধে রেখেছেন তিনি। তাঁর কথায়, “প্রতিদিন কত লোক আমার দোকানে আসেন এই এক টাকার চা খেতে। সবাই জানে সব জায়গায় এক গ্লাস চা পাঁচ টাকা বা ছ’টাকা হলেও এখানে এক টাকায় চা পাবেন তাঁরা। এ সব ভেবেই আর চায়ের দাম বাড়াইনি। চলে তো যাচ্ছে। অসুবিধা তো কিছু হচ্ছে না।” এখন তাঁর দুই ছেলেই রোজগেরে। ফলে সংসারে চাপও আর নেই তেমন। তাই দাম বাড়ানোর কথা আরওই ভাবেন না। বললেন, “প্রতিদিন প্রায় তিনশো গ্লাস চা বিক্রি করি। সঙ্গে বিস্কুট, কেক এ সবও। সব মিলিয়ে যা লাভ থাকে তাতেই আমার চলে যায়।” প্রতিদিন নিয়ম করে দোকান খোলেন সকাল সকাল। মাঝে দুপুর বেলা কিছুক্ষণের জন্য বাড়ি ফেরেন। আবার বিকেল হতেই চলে আসেন দোকানে। বললেন, “এত পরিচিত লোক, সবাই জমা হয় দোকানে। সকালে বিকেলে। আড্ডা হয়। নিজের হাতে চা করে খাওয়াই। এও তো আনন্দ।” আর যারা প্রতিদিন সকাল বিকেল ভিড় জমাচ্ছেন ঊষা বৌদির চায়ের দোকানে, কী বলছেন তাঁরা? “আমরা অবাক হয়ে যাই ভেবে যে কীভাবে এক টাকায় আমাদের চা খাওয়াচ্ছেন বৌদি? দুধ চিনির এত দাম! স্বাদে গন্ধে কিন্তু কমতি নেই।” ক্রেতাদের শুভেচ্ছাই ঊষা বৌদির চলার পথের অনুপ্রেরণা।