শেষ আপডেট: 6th December 2024 17:41
দ্য ওয়াল ব্যুরো, কোচবিহার: শতবর্ষ পেরিয়ে গেছে ভাঙা ঘরে। কালো প্লাস্টিকে ঢাকা ছাদ। ঠান্ডা আটকাতে ঘরের উপর রাখা হয়েছে খড়। ঘরের বেড়ার মাঝে মাঝে ফাঁকা। সেখান দিয়েই ভোরের আলো ঢোকে ঘরে। বর্ষাকালে যেমন ঢোকে জল আর শীতকালে শিশির। সেই ছফিরউদ্দিন মিয়াঁর হয়তো এবার নিজের বাড়ি হবে। তেমনই আশ্বাস দিয়ে গেছেন সরকারি আধিকারিকরা।
দিনহাটা-২ ব্লকের নয়ারহাট গ্রাম পঞ্চায়েতের তুতিয়ারকুটি গ্রামের সফিরউদ্দিন মিয়াঁর বয়স ১০৮ বছর। একটা সময় একটা সুন্দর বাড়ি বানানোর স্বপ্ন দেখতেন। দিন গেছে। কিন্তু আশা পূরণ হয়নি। ভাঙা ঘরে কোনওমতে দিন গুজরান করেছেন। স্ত্রী মারা যাওয়ার পরেও কেটে গেছে বেশ কয়েকটা বছর। এখন ছেলে বৌমা ও এক নাতনিকে নিয়ে তাঁর সংসার।
চারজনের পেট চালাতে ছেলে অন্যত্র কাজ করে। নুন আনতে পান্তা ফুরানো এই সংসারেও ঘর বানানো শুধু স্বপ্নেই সম্ভব। তবে আশা পেয়েছেন বারবারই। ২০১৮ সালে সার্ভের সময় ঘরের তালিকায় নাম উঠেছিল তাঁর। ২০২২ সালে সেই তালিকা পুনরায় যাচাই করে রাজ্য সরকার। প্রতিটি তালিকায় ঘরের জন্য নাম ছিল ছফিরউদ্দিন মিয়াঁর। দীর্ঘ আশায় বসেছিলেন ঘর পাবেন। কিন্তু কেন্দ্রের সেই টাকা আটকে যায়।
এবারে রাজ্য সরকার গরীব মানুষদের ঘরের টাকা দেওয়ার জন্য সার্ভে শুরু করে। বৃহস্পতিবার ছিল সেই সার্ভের শেষ দিন। এদিন বৃদ্ধের বাড়িতে এসেছিলেন সরকারি আধিকারিকরা। ১০৮ বছরের বৃদ্ধের বাড়ির করুণ অবস্থা দেখে তাঁকে ঘর দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তারপরেই আবার আশা জাগছে ছফিরউদ্দিনের, এবার হয়তো পাকা ঘরে শান্তিমতো ঘুমোতে পারবেন। মৃত্যুর আগে ক'টা দিন তো শিশির কণা ঢুকবে না। ভাঙা বেড়ার ফাঁক দিয়ে ঢুকবে না ঠান্ডা বাতাস।
ছফিরউদ্দিন মিয়াঁ এদিন বললেন, "আর কটা দিনই বা বাঁচব। পাকা বাড়ি বানানোর স্বপ্ন পূরণ হবে সেটা ভাবতেই পারছি না। আগেও আবাসের তালিকায় নাম উঠেছিল। কেন্দ্রীয় সরকার টাকা দেয়নি বলেই ঘর বানাতে পারিনি। এবার রাজ্য টাকা দিচ্ছে বলে শুনেছি। মরার আগে ক'টা দিন হয়তো পাকা ঘরে কাটাতে পারব।"