দ্য ওয়াল ব্যুরো: কথায় বলে শেষ ভাল যার, সব ভাল তার!
কিন্তু যুব সংগঠনের রাজ্য সম্মেলনে যা হলো তা দেখে অনেকেই বলছেন, সিপিএমের বোধহয় আর কিছুই ভাল হওয়ার নেই। সবেতেই যেন কাঁটা! পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন নিয়ে জেলায় জেলায় যেমন তৃণমূল বনাম তৃণমূল লড়াই চলছে, তাকেও যেন হার মানিয়ে দিল সিপিএমের যুব সংগঠনের সম্মেলন।
ভোটে তো রক্তক্ষরণ চলছেই, এর মধ্যে আবার জুটেছে সংগঠনের ভিতরের কাজিয়া। যে কাজিয়ার ফলে রবিবার শেষ হওয়া দলের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআই-এর ১৮ তম রাজ্য সম্মেলনের মঞ্চ থেকে পত্রিকা সম্পাদকই নির্বাচন করতে পারলেন না আলিমুদ্দিনের ম্যানেজাররা।
শুক্রবার হুগলির ডানকুনিতে ঢাকঢোল পিটিয়ে শুরু হয়েছিল সিপিএমের যুব সংগঠনের রাজ্য সম্মেলন। উদ্বোধন করতে সুদূর কর্নাটক থেকে উড়ে এসেছিলেন দক্ষিণী সেলুলয়েডের সুপারস্টার প্রকাশ রাজ। কিন্তু রবিবার যেভাবে সম্মেলন শেষ হলো, তা দেখে সিপিএমের অনেক পোড় খাওয়া নেতাই বলছেন, ডিওয়াইএফআই-এর ইতিহাসে এমন লজ্জা আগে হয়নি।
রেওয়াজ অনুযায়ী গণসংগঠনের রাজ্যকমিটির সভাপতি, সম্পাদক, পত্রিকা সম্পাদক এবং কোষাধ্যক্ষ কারা হবেন তা ঠিক করে দেয় ৩১ নম্বর আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের দোতলার শীততাপ নিয়ন্ত্রিত উডেন চেম্বার। কিন্তু চৌত্রিশ বছর সরকার চালানো পার্টিটার এতই করুণ দশা যে, পত্রিকা সম্পাদকের নাম ঠিক করতে পারল না। সিপিএমের অন্দরে কান পাতলেই এখন শোনা যাচ্ছে এই ঘটনার নেপথ্য কাহিনী।
সিপিএম সূত্রের খবর, যুব সংগঠনের রাজ্যকমিটির মুখপত্র ‘যুবশক্তি’ পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে যাঁর নাম উঠে এসেছিল তিনি কলকাতার এক যুব নেতা। কিন্তু কলকাতা জেলা সিপিএমের-একটি অংশই নাকি ‘গ্রুপবাজি’ করে তাঁর পত্রিকা সম্পাদক হওয়া থেকে আটকে দিয়েছেন।
সিপিএমের এক নেতার কথায়, যাঁর নাম পত্রিকা সম্পাদক হিসেবে প্রস্তাব করা হয়েছিল তিনি আসলে উত্তর-পূর্বের একটি রাজ্যের ভূমিপুত্র। ছাত্রাবস্থা থেকেই কলকাতায় আসা এবং বাম ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত হয়ে পড়েন তিনি। মেধাবী ছাত্র হয়েও কমিউনিস্ট পার্টির সর্বক্ষণের কর্মী হয়েছিলেন ছাত্র বয়েসেই। আর তাঁকেই কিনা কাঁচি করে দিল কলকাতা সিপিএমের বিরুদ্ধ গোষ্ঠী?
সিপিএমের একটি অংশের মতে, সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি 'সাজানো অভিযোগ' ছড়িয়ে ওই যুব নেতার, নেতৃত্বে উত্তরণের পথ বন্ধ করে দিল কলকাতা সিপিএমের ওই অংশ।
কী অভিযোগ?
এক তরুণীর সঙ্গে হোয়াটস অ্যাপ চ্যাটে নাকি যৌনতার আবেদন জানিয়েছিলেন ওই যুব নেতা। কিন্তু সেই অভিযোগ কবেকার? অভিযোগ সত্ত্বেও কেন ব্যবস্থা নেয়নি দল?
এই প্রশ্নের খোঁজ করতেই কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বেরনোর জোগাড়। জানা গিয়েছে ওই ঘটনা নাকি বছর দুই আগের। ওই তরুণী কে তাও নাকি জানেন না সিপিএম নেতারা। সিপিএমের একটি অংশের মতে, ওই যুব নেতাকে বিপাকে ফেলতে ওই চ্যাটের স্ক্রিন শটের প্রিন্ট আউট পৌঁছে যায় জেলা পার্টির এক সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যের হাতে। ওই সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যও কলকাতার ভূমিপুত্র নন বলে জানিয়েছেন এক সিপিএম নেতা। তিনিও বাইরের জেলার। সেই নেতাই নাকি প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে জন্মসূত্রে তিনি যে জেলার লোক, সেখানকার এক ব্যক্তিকে দিয়ে ওই চ্যাটের প্রিন্টআউটের ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেন। ঠিক শনিবার সকাল থেকে নাকি শুরু হয় ‘টার্গেটেড ক্যাম্পেইন।’ যিনি এই কাজ করিয়েছেন বলে সিপিএমের অনেকের অভিযোগ, সেই নেতাও নাকি এককালে ছাত্র সংগঠনের পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন।
এখন প্রশ্ন কেন এই ক্যাম্পেইন? কেন এই দ্বন্দ্ব?
অনেকের মতে, এই ক্যাম্পেইন আসলে পুরনো রাগের বহিঃপ্রকাশ। কী সেই পুরনো রাগ? সিপিএমের এক নেতার কথায়, কলকাতা জেলা সিপিএমের সম্মেলন আসলে দাঁড় করিয়ে সীতারাম ইয়েচুরির লাইনকে হারিয়ে দিয়েছিল। ভোর রাত অবধি সম্মেলন চালিয়ে, ভোটাভুটি করেও আলিমুদ্দিনের দোরগোড়ায় প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনের চৌকাঠে হোঁচট খেয়েছিল সীতারামের লাইন। ড্যাংড্যাং করে জিতে গিয়েছিল কারাতপন্থীরা। পর্যবেক্ষকদের মতে, মোটামুটি সবকটি জেলাতেই আলিমুদ্দিনের পক্ককেশ নেতারা ধমকে-চমকে সম্পাদকের চেয়ারে নিজেদের ‘ইয়েস ম্যান’-কে বসালেও রাজ্যের রাজধানীতে তা করতে পারেননি। প্রাক্তন এক মন্ত্রীকে সম্পাদকের ভোটে দাঁড় করিয়েও লাভ হয়নি। সিপিমের একটি অংশের মতে, সেই সম্মেলনের গায়ের ঝাল মেটানো হলো দলের যুব সংগঠনের সম্মেলনে। কারণ কলকাতার ওই যুবনেতা আলিমুদ্দিনের লাইনের বিরুদ্ধে বলেই পরিচিত।
যদিও ডিওয়াইএফআই-এর এক নেতা এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর কথায় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এরকম কোথাও বলা নেই যে, সম্মেলনেই পত্রিকা সম্পাদক ঠিক করতে হবে। কিন্তু সম্মেলনে উপস্থিত থাকা অনেক প্রতিনিধির কথায়, এর আগে কোনওদিন এমন হয়নি। কর্মীরা তো আর বোকা নন। সব বোঝেন।