দ্য ওয়াল ব্যুরো: কোভিড মহামারীর কারণে ধুঁকতে থাকা অর্থনীতির আবহে গরিব মানুষদের অবস্থা সবচেয়ে শোচনীয়। তাঁদের ঘুরে দাঁড়াতে প্রয়োজন রোজগার বাড়ানো। আর সেই জন্যই সরকারি প্রকল্পের অধীনে যে ১০০ দিনের কাজের সংস্থান রয়েছে, তা বাড়িয়ে ১৫০ দিন করার পক্ষে মত দিলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়।
একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে অভিজিৎ বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের নীতি আয়োগের ভাইস চেয়ারম্যান রাজীব কুমার মনে করেন, গরিব মানুষের হাতে সরাসরি নগদ অর্থ দিলে বাজারে চাহিদা বাড়বে না। এটা সঠিক দৃষ্টিভঙ্গী নয়। অভিজিতের কথায়, "দরিদ্র মানুষের হাতে নগদ টাকা দেওয়া এই পরিস্থিতিতে জরুরি পদক্ষেপ। সরকারের উচিত মনরেগা প্রকল্পের আওতায় নিয়োগ বাড়ানো। ১০০ দিনের কাজকে ১৫০ দিনের করা উচিত।"
কেন্দ্রীয় সরকারের নীতি আয়োগের ভাইস চেয়ারম্যান রাজীব কুমারের প্রসঙ্গে অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "যদি গরিব মানুষদের জানিয়ে দেওয়া হয়, এটাই তাঁদের শেষবারের মতো সাহায্য করা হচ্ছে, তাহলে তারা সেই অর্থ যতটা সম্ভব বাঁচানোর চেষ্টা করবে। তাই আমি বলছি মনরেগার কথা। কাজ বাড়ানোর কথা, উপার্জন বাড়ানোর কথা।"
অভিজিৎ আরও বলেন, "মহামারীর পরে যে সমস্ত মানুষ দারিদ্রসীমার নীচে চলে গেছেন, তাঁদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আগের অবস্থায় ফেরানো জরুরি। কারণ এটা অর্থনীতির জন্য দুঃসংবাদ। আর এই মুহূর্তে আসল প্রশ্ন হল দেশের অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করা। হোটেল, নির্মাণ, শিল্পসংস্থা-- এসব ক্ষেত্রে অসংগঠিত শ্রমিকদের আরও বেশি করে কাজ দিলেও পরিস্থিতির উন্নতি হবে।"
এ বিষয়ে অন্য দেশের উদাহরণও দিয়েছেন অভিজিৎ। তিনি জানিয়েছেন, আমেরিকায় বেশিরভাগ কাজ হারানো মানুষ সরকারের তরফে সপ্তাহে ৬০০ ডলার করে টাকা পাচ্ছেন। "এটা অনেকটা টাকা। ফ্রান্সেও যাঁরা কাজ হারিয়েছেন, সরকার তাঁদের সাহায্য করছে। ইউরোপের সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের দরজাও এই জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে, যদিও ব্যাঙ্কটি খুবই সংরক্ষণশীল বলে পরিচিত। তবু পরিস্থিতির খাতিরে নীতি বদলেছে তারা। তারা আরও বেশি টাকা ছাপিয়েছে এবং মানুষের হাতে দিয়েছে।"-- বলেন অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়।
তথ্য বলছে, কোভিড মহামারীর কারণে গত বছর থেকে শুরু করে ২৩ কোটি মানুষ দারিদ্রসীমার নীচে পৌঁছেছেন। এবছরের দ্বিতীয় ঢেউ আরও খারাপ করেছে পরিস্থিতি। গতমাসে বেঙ্গালুরুর আজিম প্রেমজি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা বলছে, গত বছর মার্চ মাস থেকে শুরু হওয়া লকডাউনে সব মিলিয়ে কাজ হারিয়েছেন ১০ কোটি মানুষ। এঁদের মধ্যে ১৫ শতাংশ মানুষ এখনও পর্যন্ত কোনও রকম কোনও কাজ পাননি।