শেষ আপডেট: 25th February 2020 18:30
দ্য ওয়াল ব্যুরো: এক বছর আগে এইদিনেই বালাকোটের জইশ শিবির ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল ভারতীয় বায়ুসেনা। মিরাজ-২০০০ ফাইটার জেট থেকে নাগাড়ে বোমা ফেলে চুরমার করে দিয়েছিল জইশ-লস্করের একাধিক জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবির। সেই দিনের স্মৃতি এখনও টাটকা, পাকিস্তান যেন এটা ভুলে না যায়, বালাকোট-এয়ারস্ট্রাইকের স্মৃতি উস্কে আবারও হুঁশিয়ারি দিলেন প্রাক্তন বায়ুসেনাপ্রধান বিএস ধানোয়া।
১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামার সেনা কনভয়ে ফিদায়েঁ জইশ হামলায় মৃত্যু হয়েছিল ৪০ জন সিআরপিএফ জওয়ানের। রক্তাক্ত সেই দিনের ঠিক বারো দিনের মাথায় ২৬ ফেব্রুয়ারি কঠোর প্রত্যাঘাত হানে বায়ুসেনা। ১২টি মিরাজ-২০০০ যুদ্ধবিমান উড়িয়ে পাকি সীমায় ঢুকে পড়ে আধুনিক ইজরায়েলি স্পাইস ২০০০ বোমা ফেলা হয় জইশ-লস্কর ঘাঁটিগুলিতে। বায়ুসেনা দাবি করে, এই প্রত্যাঘাতে অন্তত ৪০০ জঙ্গির প্রাণ গিয়েছে। প্রাক্তন বায়ুসেনাপ্রধানের দাবি, জঙ্গি ঘাঁটিগুলিতে সঠিক নিশানাই করেছিল বায়ুসেনার মিরাজ-২০০০ ফাইটার জেট। তবে মেঘলা আকাশের জন্য় উপগ্রহ চিত্রে সেভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ধরা পড়েনি। প্রথম নিশ্চিত প্রমাণ ধরা পড়ে সিন্থেটিক অ্য়াপার্চার ক্যামেরায়। ধানোয়া বলেন, বায়ুসেনার আধুনিক ইজরায়েলি স্পাইস ২০০০ বোমা ফেলা হয়েছিল তিনটি বাড়িতে। নিখুঁতভাবে সেগুলির বাড়ির ছাদ ফুটো করে ঢুকে ভেতরের লোকজনকে নিকেশ করেছিল। প্রায় ১০০০ কেজির মতো স্পাইস-২০০০ বোমা ফেলা হয় বালাকোটের জঙ্গি শিবিরগুলিতে। এই বোমাগুলি বাড়ির ছাদ দিয়ে ঢুকে ভিতরে বিস্ফোরণ ঘটায়। ফলে ক্ষতি হয়েছে ভিতরে ভিতরে।
সেই প্রত্যাঘাতের কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রাক্তন বায়ুসেনাপ্রধান ধানোয়া বলেছেন, ‘‘পাকিস্তান যেন ভুলে না যায়। সেদিনের কথা মনে করাবার কারণ হল আমরা বলতে চাইছি, আবারও প্রত্যাঘাত হবে। এবার ভেতরে ঢুকে মারব।’’ বালাকোটের পরে তেমনভাবে আর সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালানো হয়নি, বলেছেন ধানোয়া। কাজেই আরও একটা কঠোর আঘাত হানার জন্য ভারত সবরকমভাবে প্রস্তুত।
গোয়েন্দা সূত্র বলছে, মৌলানা মাসুদ আজহারের পরে বালাকোটের সক্রিয় শিবিরগুলির পরিচালনার দায়িত্বে এখন ইউসুফ আজহার। তারই নেতৃত্বে ২৭ জন জঙ্গিকে ফিদায়েঁ তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এদের মধ্যে আটজন পাক-অধিকৃত পাকিস্তানের বাসিন্দা। জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য জইশ শিবিরের সবচেয়ে অভিজ্ঞ কম্যান্ডারদের আনা হয়েছে, যাদের মধ্যে দু’জন পঞ্জাব, পাকিস্তান এবং তিনজন আফগানিস্তানের বাসিন্দা। গোয়েন্দা রিপোর্ট এমনও বলছে, যে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ প্রায় শেষের দিকে। এই সপ্তাহের মধ্যেই ট্রেনিং শেষ হবে। এরপরেই ভারতের নানা জায়গায় হামলা চালাবার চেষ্টা করবে তারা।
বায়ুসেনাপ্রধানের কথায়, ‘‘খবর এসেছে জইশ জঙ্গিরা ফের জেগে উঠেছে। যেখানেই তারা লুকিয়ে থাকুক না কেন ভারতীয় বাহিনী ফের খুঁজে বার করবে। গোপন ঘাঁটি থেকে টেনে বার করে মারা হবে জঙ্গিদের। তেমন অস্ত্রও আছে ভারতের হাতে।’’
বালাকোটের পরে ভারতের সামরিক অস্ত্রভাণ্ডার আরও শক্তিশালী হয়েছে। ধানোয়া বলেন, এখন ভারতের হাতে আছে রাফাল জেট ও এস-৪০০ মিসাইল সিস্টেম। কাজেই এবার জঙ্গি শিবিরে হামলা চালালে, সেই আঘাত আরও মজবুত হবে তাতে কোনও সন্দেহই নেই।
গত বছরই সেপ্টেম্বরে অবসর নিয়েছেন বিএস ধানোয়া। অবসরের পরেই বালাকোটে এয়ার স্ট্রাইক নিয়ে মুখ খুলেছিলেন তিনি। প্রাক্তন এয়ার চিফ মার্শাল বলেছিলেন, পুলওয়ামার পর ভারত যে বদলা নেবে, পাকিস্তানও আগেভাগেই তা আন্দাজ করতে পেরেছিল। শুধু কবে, কোথায় বদলা নেওয়া হবে, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে একটু সময় নেওয়া হয়েছিল। পুলওয়ামায় যেহেতু জইশ-ই হামলা চালিয়েছিল, তাই শেষমেশ ওদের প্রশিক্ষণ শিবির গুঁড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তই নেওয়া হয়। বালাকোটে বেছে বেছে জঙ্গিদের কিছু ঘাঁটিকে নিশানা করে উড়িয়ে দেওয়া হয়। বালাকোটে ভারতীয় বায়ুসেনার এই প্রত্যাঘাত ছিল পাক জঙ্গিগোষ্ঠীগুলির কাছে একটা বড় ধাক্কা। আর এই ধাক্কাটাই জঙ্গিদের মনোবল ভেঙে দিতে অনেকটাই কাজে এসেছে। তাই জঙ্গি-তাণ্ডব কমাতে ফের এমন একটা প্রত্য়াঘাতেরই দরকার আছে।