দ্য ওয়াল ব্যুরো: শতবর্ষ চলছে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের। একটাও ট্রফি আসেনি। শেষ ম্যাচে ঘরের মাঠে গোকুলাম কেরালা এফসির কাছে হজম করতে হয়েছে তিন গোল। কাল বাদে পরশু বড় ম্যাচ। কিন্তু এসবই যেন দুম করে উধাও হয়ে গিয়েছে লাল-হলুদ সমর্থকদের আলোচনা থেকে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহনবাগানের সঙ্গে অ্যাটলেটিকো ডি কলকাতার সংযুক্ত হওয়া, গোয়েঙ্কাদের হাতে ৮০ শতাংশ শেয়ার চলে যাওয়ার পর সোশ্যাল মিডিয়া থেকে ব্যক্তিগত কথোপকথনে এখন বিষয় একটাই—কী হবে লাল-হলুদের ভবিষ্যৎ? ক্লাবের অন্যতম কর্তা তথা চিকিৎসক শান্তিরঞ্জন দাশগুপ্ত স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, “আমি মাথা নিচু করে কিছু করার লোক নই। যা করব মাথা উঁচু করে। ক্লাবের সম্মান কর্পোরেটের কাছে বন্ধক রেখে কিছু করার পক্ষপাতী আমি নই।”
এখানেই থামেননি আশিয়ান কাপে হাসপাতাল হয়ে যাওয়া ইস্টবেঙ্গল দলকে চাঙ্গা করা ডাক্তারবাবু। জানিয়ে দিলেন, “যদি দেখি ক্লাবের মাথা নিচু হচ্ছে, তাহলে আমি মাথা নিচু করে বেরিয়ে আসব। কিন্তু কর্পোরেটের কাছে মান-সম্মান বিকিয়ে দিতে পারব না।”
ইতিমধ্যেই তোলপাড় মোহনবাগান শিবির। কার্যত দ্বিধাবিভক্ত সবুজ-মেরুন। একদল সমর্থক এই গাঁটছড়াকে ‘ঐতিহাসিক’ আখ্যা দিয়েছে। আর একটা বড় অংশ মনে করছে, যে চুক্তি হয়েছে, তাতে ১৩০বছরের গর্বের ঐতিহ্য ধুলোয় মিশেছে। কেউ কেউ সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, “মায়ের ভিটে বিক্রি হয়ে গিয়েছে। আর মাঠে যাব না।”
পড়শি ক্লাবের এমন ঘটনার পর লাল-হলুদের অন্যতম কর্তা দেবব্রত সরকার বলেছেন, “পাশের ক্লাব আইএসএল খেললে ইস্টবেঙ্গলও খেলবে।” কিন্তু শান্তিরঞ্জন দাশগুপ্ত জানিয়েছেন, তাঁর ব্যক্তিগত মত একেবারে অন্য। তাঁর কথায়, “আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি না পাশের ক্লাব আইএসএল খেললেই আমাকেও খেলতে হবে। আমায় দেখতে হবে আমার মাথা উঁচু থাকছে কিনা। সেটাই আসল কথা।”
তবে অনেক যদি-কিন্তু-সম্ভাবনা-ইত্যাদি-প্রভৃতির মধ্যেও শান্তিবাবু বলেন, “কোয়েসও তো ক্লাব কিনতে চেয়েছিল। কিন্তু তা তো হয়নি। তাই এখন আমাদের বেরিয়ে আসতে হচ্ছে।” কিন্তু ইস্টবেঙ্গলের ভবিষ্যৎ তাহলে কী? কী হতে পারে? শান্তিবাবুর সোজাসাপ্টা জবাব, “কী হবে সেটা দেখা যাবে। আমি আবার বলছি, সব কিছুর উপরে ক্লাবের সম্মান।”
পেশাদার ফুটবলে কোনও কিছুই স্থির নয়। সবটাই চলমান। কিংফিশারের সঙ্গে দীর্ঘ সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার পর লাল-হলুদের ঘরে এসেছিল কোয়েস। কিন্তু তাদের সঙ্গেও মৌখিক বিচ্ছেদ প্রায় হয়ে গিয়েছে। ইস্টবেঙ্গলের অন্দরের খবর, এমন স্পনসর চাইছেন কর্তারা, যাদের দিয়ে সাপও মরবে আবার লাঠিও ভাঙবে না। অর্থাৎ আইএসএলও খেলা হবে আবার ক্লাবের ঐতিহ্যও নষ্ট হবে না।
পুরনো দিনের ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা বলছেন, এই ক্লাবের সমর্থকরাই ফুসফুস। সে প্রায় বিশ বছর আগের কথা। ঘানা থেকে তিন বিদেশিকে লাল-হলুদে খেলানোর জন্য খুঁজে এনেছিলেন প্রয়াত ম্যানেজার স্বপন বল। জ্যাকসন-মুসা-ওপোকু—এই ত্রয়ীকে সই করাতে গিয়ে আর্থিক সমস্যায় পড়ে গিয়েছিল লাল-হলুদ ম্যানেজমেন্ট। ক্লাবকর্তারা আবেদন করেছিলেন, সমর্থকরা যা পারেন সাহায্য করুন। সোনার গয়না থেকে কাঁসার বাসন নিয়ে ক্লাবে ছুটেছিলেন সমর্থকরা। সই করেছিলেন ঘানার থ্রি মাস্কেটিয়ার্স। সেই কথা স্মরণে রেখে অনেকেই বলছেন, কিচ্ছু আটকাবে না।
কিন্তু বাস্তব তা নয়। একটা পেশাদার ফুটবল দল চালাতে এখন যা খরচ তা বিপুল। পিছনে কর্পোরেট না থাকলে সেই লড়াইয়ে টিকে থাকা সম্ভব নয়। তবু ঐতিহ্য আর পেশাদারিত্বের দ্বন্দ্ব এখন সারা ময়দান জুড়ে।