দ্য ওয়াল ব্যুরো: কয়েক সপ্তাহ আগেও মুম্বইয়ে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার জন্য দায়ী করা হচ্ছিল এশিয়ার বৃহত্তম বস্তি ধারাভিকে। কিন্তু কয়েক দিনেই বদলে গেছে ছবিটা। প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা কমতে কমতে রবিবার কেবলমাত্র ২ জন আক্রান্ত হয়েছেন ধারাভিতে।
এপ্রিল মাসে ধারাভিতে প্রথম আক্রান্তের খোঁজ মিলেছিল। তারপর থেকে হু হু করে বাড়ছিল সংক্রমণ। একসময় করোনা সংক্রমণের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল মুম্বইয়ের ধারাভি। এশিয়ার বৃহত্তম বস্তিতে যে হারে সংক্রমণ বাড়ছিল তাতে চিন্তায় ছিল প্রশাসন। আশঙ্কা করা হচ্ছিল, ধারাভিতে পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে মুম্বইয়ে সংক্রমণ রোখা সম্ভব নয়। কিন্তু বর্তমানে ছবিটা সম্পূর্ণ আলাদা।মহারাষ্ট্রে সংক্রমণ বাড়তে থাকলেও ধারাভিতে নতুন করে মাত্র দু’জন আক্রান্তের খবর পাওয়া গিয়েছে।
অন্তত সাড়ে ৬ লাখ মানুষ বাস করেন ধারাভিতে। রবিবার সেখান থেকে দু’জন আক্রান্তের খবর পাওয়া গিয়েছে। সেইসঙ্গে এই বস্তিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৫৩১। শুধুমাত্র আক্রান্তের সংখ্যা কমাই নয়, সুস্থতার হারও ক্রমাগত বাড়ছে ধারাভিতে। এই মুহূর্তে মাত্র ১১৩ জন অ্যাকটিভ রোগী রয়েছেন সেখানে। অর্থাৎ ২০০০-এর উপর আক্রান্ত সুস্থ হয়ে উঠেছেন। গত কয়েক দিন ধরে এখানে আক্রান্তের সংখ্যা ১০-এর নীচেই রয়েছে। সরু গলি, ছোট ছোট টালির বাড়ি দেওয়া ঘিঞ্জি এলাকা এই অসাধ্য সাধন করতে পেরেছে।
অথচ কয়েক সপ্তাহ আগেই মুম্বইয়ের করোনা সংক্রমণ মোকাবিলায় সবথেকে বড় সমস্যা হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছিল ধারাভিকে। কারণ, সেখানে বেশিরভাগ বাড়িতেই শৌচাগার নেই। বাসিন্দাদের কমন বাথরুম ব্যবহার করতে হয়। সেখানে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা অসম্ভব। এছাড়া ঘিঞ্জি এলাকায় সংক্রমণ অনেক বেশি ছড়ায়। তাই চিন্তায় ছিল প্রশাসন।
এই এলাকায় করোনা মোকাবিলায় কড়া পদক্ষেপ নিয়েছিল প্রশাসন। চার ‘টি’ অর্থাৎ ট্রেসিং, ট্র্যাকিং, টেস্টিং ও ট্রিটিং, এই মন্ত্রেই এই অসাধ্য সাধন করা সম্ভব হয়েছে। পুরো এলাকায় কড়া লকডাউন করা হয়। শুধুমাত্র জরুরি পরিষেবা ছাড়া বাকি সব ক্ষেত্রে বাসিন্দাদের বাইরে যাওয়া বন্ধ করা হয়। সামাজিক দূরত্ব ও অন্যান্য বিধিনিষেধ মেনে চলতে হয়। এই বস্তির ৪৭৫০০ বাড়িতে যান স্বাস্থ্য আধিকারিকরা। ১৪,৯৭০ জনকে মোবাইল ভ্যানের মাধ্যমে স্ক্রিনিং করা হয়। তারই ফল মেলে। এই ছবিটা আশা যোগাচ্ছে উদ্ধব ঠাকরে প্রশাসনকে।
ধারাভিতে সংক্রমণ এতটাই কমানো সম্ভব হয়েছে যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এই কথা স্বীকার করেছে। হু-এর প্রধান টেড্রস আধানম ধারাভির উদাহরণ নিয়ে বলেছেন, কড়া নজর রাখলে সংক্রমণ কমানো সম্ভব। ধারাভি তা করে দেখিয়েছে।
ধারাভিতে সংক্রমণ কমলেও মহারাষ্ট্রের ছবিটা কিন্তু এখনও ভয়াবহ। রবিবার সকালের বুলেটিন অনুযায়ী মহারাষ্ট্রে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩,৬৬,৩৬৮ জন। মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩,৩৮৯ জন। এর মধ্যেই পথ দেখাচ্ছে ধারাভি।