শেষ আপডেট: 22nd June 2020 05:07
দ্য ওয়াল ব্যুরো: লাদাখ সংঘাত নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ঘরোয়া রাজনীতিতে আরও চাপে ফেলে দিতে চাইছে কংগ্রেস। শুক্রবার লাদাখ নিয়ে সর্বদল বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী যে বিবৃতি দিয়েছিলেন, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। সোমবার সকালে সেই প্রসঙ্গ ফের খুঁচিয়ে তুললেন কংগ্রেস শীর্ষ নেত়ৃত্ব। এ ব্যাপারে রীতিমতো বিবৃতি দিয়ে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ বললেন, মিথ্যা কথা বলা কূটনীতি নয়। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর কথায়, “আমরা সরকারকে মনে করিয়ে দিতে চাই মিথ্যা তথ্য দেওয়া কূটনীতি নয়, তা মজবুত নেতৃত্বের কাজও নয়। সত্যিটা কখনওই চেপে রাখা যায় না।” শুক্রবার সর্বদল বৈঠকের শেষে প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় জানিয়েছিলেন, লাদাখ সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় ভূখণ্ডের মধ্যে কেউ ঢুকে পড়েনি, কেউ ঢুকেও বসে নেই। ভারতের কোনও সেনা চৌকিও দখল হয়ে যায়নি। প্রধানমন্ত্রীর সেই বিবৃতির পরই স্বাভাবিক ভাবে প্রশ্ন ওঠে যে ২০ জন সেনা জওয়ান তা হলে কীভাবে মারা গেলেন? তা হলে তো এই মানে দাঁড়ায় যে ভারতীয় সেনা চিনের ভূখণ্ডে ঢুকে পড়েছিল। তা ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্যের ফলে তো চিনের অবস্থান পোক্ত হচ্ছে। কারণ, তারা প্রথম থেকে দাবি করছে যে চিনা সেনা ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢোকেনি। ভারতীয় সেনাই শর্ত লঙ্ঘন করেছে। মনমোহন এদিন বলেছেন, “গত এপ্রিল মাস থেকে বারবার গালওয়ান উপত্যকা ও প্যাঙ্গং লেকের কাছে ঢুকে পড়ে চিন অতিশয় নির্লজ্জ ভাবে ও বেআইনি ভাবে ভারতীয় ভূখণ্ডের অংশকে তাদের বলে দাবি করছে। ওদের হুমকি ও হম্বিতম্বির সামনে আমরা মাথা নত করতে পারি না। প্রধানমন্ত্রীর কথাকে ব্যবহার করে তাদের দাবির যথার্থতা প্রমাণের সুযোগও দিতে পারি না। সরকারের উচিত সমস্ত রকমের ব্যবস্থা নিয়ে এই সংকটের মোকাবিলা করা।” অতীতে মনমোহন জমানাতেও লাদাখ ও অরুণাচল সীমান্তে চিনের বেয়াদপি কম ছিল না। কিন্তু এ ধরনের সংকট কখনও তৈরি হয়নি। তাৎপর্যপূর্ণ হল, শুক্রবার সর্বদল বৈঠকে তাঁর বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী কার্যত কংগ্রেস নেতৃত্বকে খোঁচা দিয়ে বলেছিলেন, আগে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে কেউ বাধা দিত না। কিন্তু এখন ভারতীয়রা জওয়ানরা বাধা দেন, তাই ঘন ঘন সংঘাতের পরিস্থিতি হচ্ছে। স্বাভাবিক ভাবেই প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে তা নিয়ে এখন পাল্টা আক্রমণাত্মক কংগ্রেস। নজর করার মতো ব্যাপার হল, পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাতের প্রশ্নে বিরোধীরা কোনও ভুল ধরার চেষ্টা করলে গেরুয়া শিবির তা নিয়েও মেরুকরণের রাজনীতির সুযোগ পেয়ে যায়। তাই পাক প্রসঙ্গে কংগ্রেস বা তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলি সরকারকে সমালোচনার ক্ষেত্রে শব্দচয়ণ নিয়ে সতর্ক থাকে। কিন্তু চিন প্রসঙ্গে সেই ঝুঁকি নেই। এদিন তাঁর বিবৃতিতে মনমোহন আরও বলেছেন, “আমরা এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে রয়েছি। সরকার কী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বা পদক্ষেপ করছে (লাদাখ সংঘাত নিয়ে) তা দিয়েই ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদের বিচার করবে। তাই জাতীয় নিরাপত্তা ও অখণ্ডতা নিয়ে কোনও মন্তব্য বা ঘোষণা করার সময়ে প্রধানমন্ত্রী যেন শব্দের ব্যবহার নিয়ে সতর্ক থাকেন।” মনমোহন এদিন বোঝাতে চেয়েছেন, সরকারকে সত্যি অবস্থান তুলে ধরতে হবে। শহিদদের আত্মত্যাগের মর্যাদা দিতে হবে। নইলে তা দেশের সঙ্গে ঐতিহাসিক বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে। পর্যবেক্ষকদের মতে, গোটা বিবৃতির মধ্যে দিয়ে মনমোহন মোদ্দা এই কথাটিই তুলে ধরতে চেয়েছেন যে লাদাখ সংঘাত নিয়ে দেশকে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী, যা তিনি ঠিক করেনি। ঘরোয়া রাজনীতিতে মোদীকে অস্বস্তিতে ফেলে দেওয়াই তাঁর লক্ষ্য। তবে শাসক দলের নেতাদের কথায়, কংগ্রেস দায়িত্বশীল আচরণ করছে না। ঘরোয়া রাজনীতির এই আচরণ আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে নয়াদিল্লির অবস্থানকে দুর্বল করতে পারে।