শেষ আপডেট: 19th November 2019 08:57
দ্য ওয়াল ব্যুরো: হাপুস নয়নে কাঁদছে গোলাপি জামা পরা একটা মেয়ে। বয়স মাত্র ১২। সুদূর পুদুচেরি থেকে পরিবারের সঙ্গে শবরীমালা দর্শনে এসেছিল এই কিশোরী। কিন্তু ভগবান আয়াপ্পার মন্দিরে এই কিশোরীকে ঢুকতে বাধা দিয়েছে কেরল পুলিশ। যদিও তার পরিবারকে মন্দিরে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। মন্দির থেকে ৯ কিলোমিটার দূরে পাম্বা বেস ক্যাম্পের কাছেই আটকে দেওয়া হয় বছর বারোর ওই কিশোরীকে। পুলিশ সাফ জানিয়ে দেয় আয়াপ্পার মন্দিরের দিকে আর এগোতে পারবে না ওই কিশোরী। গত ১৬ নভেম্বর খুলেছিল শবরীমালা মন্দির। সেদিন থেকেই শুরু হয়েছিল মন্দিরের বার্ষিক উৎসব মন্ডল পুজো। ৪১ দিন ধরে চলে এই উৎসব। সব বয়সের মহিলাদের মন্দিরে প্রবেশের অনুমতি ছিল। তবে কেরল সরকার আগেই ছিল মহিলাদের জন্য কোনও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে পারবে না প্রশাসন। প্রথম দিনেই অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে আয়াপ্পার দর্শনে আসা ১০ মহিলাকে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়। সোমবারও দু'জন মহিলাকে মন্দিরে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয় বলে খবর। এরপর মঙ্গলবার এই কিশোরেকেও আটকে দেওয়া হয়। প্রাচীন বিশ্বাস মেনে শবরীমালায় ১০ থেকে ৫০ বছর বয়সি ঋতুমতী মহিলাদের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। বিশ্বাস ছিল, ঋতুমতী মহিলারা মন্দিরে প্রবেশ করলে মন্দিরের প্রধান বিগ্রহ আয়াপ্পার কৌমার্যব্রত ভেঙে যাবে। এই বিশ্বাসের বিরুদ্ধে গিয়ে মন্দিরে প্রবেশের অধিকার দাবি করেন মহিলারা। মানবশৃঙ্খল গড়ে শুরু হয় তুমুল বিক্ষোভ-আন্দোলন। মামলা গড়ায় দেশের শীর্ষ আদালত পর্যন্ত। অবসরের আগে তাঁর শেষ রায়ে প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র বলেছিলেন, লিঙ্গভিত্তিক যে বৈষম্য গড়ে উঠেছে শবরীমালার মন্দিরকে কেন্দ্র করে সেটা পুরোপুরি ভিত্তিহীন। সুপ্রিম কোর্ট এই অযৌক্তিকতাকে সমর্থন করে না। সংবিধানও এই লিঙ্গবৈষম্যের বিরুদ্ধে। মন্দিরের নিয়ন্ত্রক ত্রিবাঙ্কুরের দেবাস্বম বোর্ডও শীর্ষ আদালতের রায় মেনে নেয়। ফলে সব বয়সী মহিলারাই মন্দিরে ঢোকার প্রবেশাধিকার পেয়ে যান। ২০১৮ সালে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রর নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ রায় দেয়, ১০ থেকে ৫০ বছর বয়সী মহিলারাও আয়াপ্পা মন্দিরের গর্ভ গৃহে প্রবেশ করতে পারবেন। তবে গত ১৪ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ এই মামলাকে সাত সদস্যের বৃহত্তর বেঞ্চে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ জানান, শুধু শবরীমালা নয়, দেশের অন্য অনেক ধর্মীয় স্থানেই মহিলাদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। মহিলাদের স্বাধীনতা ও অধিকারের প্রশ্নেই এই মামলা আরও বৃহত্তর বেঞ্চে দেখা উচিত বলেই সম্মতি জানিয়েছেন বিচারপতি গগৈ, বিচারপতি খানউইলকর ও বিচারপতি ইন্দু মলহোত্র। তবে এই বিষয়ে সহমত পোষণ করেননি আরও দুই বিচারপতি আর এফ নরিম্যান ও বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়। তাঁরা শীর্ষ আদালতের পুরনো রায় বলবৎ রাখার পক্ষেই মত দেন। তাঁরা বলেন, আদালতের কাছে সংবিধানই সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ। সংবিধানকে মাথায় রেখেই রায় দেওয়া উচিত সুপ্রিম কোর্টের। পুরনো রায়ের উপর কোনও স্থগিতাদেশও জারি করেনি সুপ্রিম কোর্ট। ফলে আইন অনুযায়ী সব বয়সী মহিলাদেরই শবরীমালা মন্দিরে প্রবেশের অনুমতি রয়েছে। কিন্তু তারপরেও এই নিয়ে বেশ কয়েকজন মহিলাকে মন্দিরে প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়েছে।