শেষ আপডেট: 19th January 2022 05:01
দ্য ওয়াল ব্যুরো: প্যাঙ্গং লেক থেকে সরে গেলেও পুরোপুরি সেনা তোলেনি চিন। বরং প্যাঙ্গং থেকে ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে রুটগ ঘাঁটিতে নতুন করে কাঠামো বানাতে দেখা গেছে চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মিকে। নতুন উপগ্রহ চিত্র দেখিয়েছে, প্যাঙ্গং লেকের ওপর সেতু তৈরি করছে চিন। সেই সেতু বানানোর কাজও প্রায় শেষের দিকে। পাহাড়ি খাঁজ তথা ফিঙ্গার পয়েন্টগুলোতে অস্ত্রশস্ত্র মোতায়েন করা হচ্ছে। নতুন করে রাইফেল ডিভিশন বসাচ্ছে চিন।
সীমান্তে শান্তি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা এখনও ব্য়র্থ। ১৪ তম সেনা কম্যান্ডার পর্যায়ের বৈঠকের পরেও বরফ গলেনি। পূর্ব লাদাখ সীমান্ত থেকে সেনা সরাতে রাজি নয় চিন। বিশেষ করে কুড়ি সালে ভারত ও চিনা সেনার মধ্য়ে যেখানে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছিল সেই গোগরা ও হট স্প্রিং এলাকায় এখনও নিজেদের আধিপত্য কায়েম করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে লাল ফৌজ। পাশাপাশি দেপসাং ভ্যালিতেও সেনা মোতায়েন করে রেখেছে চিন।
নতুন উপগ্রহ চিত্র দেখাচ্ছে, উত্তর প্যাঙ্গং লেকের কাছে গত সেপ্টেম্বর থেকে ব্রিজ তৈরি করছে চিন। দক্ষিণ তীর থেকে মাত্র কয়েক মিটার দূরত্বেই সেই ব্রিজ রয়েছে। প্রায় ৩১৫ মিটার লম্বা। এই সেতু পথেই অস্ত্রশস্ত্র, যুদ্ধট্যাঙ্ক নিয়ে যাওয়ার কাজ সারবে লাল ফৌজ। এখনই পাহাড়ি ফিঙ্গার এলাকাগুলিতে অস্ত্রশস্ত্র মোতায়েন করছে চিনা বাহিনী।
প্যাঙ্গং সো রেঞ্জ থেকে ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে রুটগ বেস চিনের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় পড়ে। মলডো থেকে যার দূরত্ব প্রায় ১১০ কিলোমিটার। ২০১৭ সালে ডোকলামে চিন ও ভারতের সেনা প্রায় ৭২ দিন মুখোমুখি দাঁড়িয়েছিল। কূটনৈতিক স্তরে আলোচনার পরে সে ডোকলাম নিয়ে সমস্যা মিটলেও এর পরে একাধিকবার ভারতের নিয়ন্ত্রণাধীন অংশে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করেছে চিনের বাহিনী। ২০১৯ সাল থেকে রুটগ বেসে সক্রিয়তা বাড়ে চিনের সেনার। সামরিক সরঞ্জাম মোতায়েন করতেও দেখা যায়। এমনকি, রুটগ বেসে আধুনিক রাডার স্টেশন বানিয়েছে লাল ফৌজ। ট্যাঙ্ক ড্রিল, হেলিপ্যাড ও সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল ছোড়ার লঞ্চ প্যাডও আছে।
ভারতীয় সেনা সূত্র জানাচ্ছে, উত্তর ও দক্ষিণ প্যাঙ্গং থেকে সেনা ও সামরিক কাঠামো সরিয়ে নিয়েছে চিনের বাহিনী। অস্ত্রশস্ত্র ট্রাকে তুলে, তাঁবু গুটিয়ে তাদের ফিরে যেতে দেখা গিয়েছে। কিন্তু একেবারেই কি ফিরে গেছে চিনের সেনা, তা কিন্তু নয়। সেনা সূত্র বলছে, ডিসএনগেজমেন্ট বা সেনা পিছনোর প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হওয়ার পরে দেখা গেছে, লাল ফৌজ তাদের রুটগ বেসে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। তার আগে থেকেই এই ঘাঁটি সাজিয়ে তোলার কাজ চলছিল। এখনকার উপগ্রহ চিত্রে দেখা গেছে, সেখানে ছোট ছোট ঘরের মতো কাঠামো তৈরি হয়েছে। ক্যাম্প খাটানো হয়েছে। অস্ত্র রাখার জায়গাও আছে। রাইফেল ডিভিশনও মোতায়েন করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক সীমান্ত চুক্তি মাফিক কোনও দেশের সেনাই বেআইনিভাবে সীমান্ত পার হতে পারে না। আঞ্চলিক সীমান্তগুলির সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য চুক্তিবদ্ধ দুই দেশই। কিন্তু চিনের বাহিনী সে চুক্তি বারে বারেই লঙ্ঘণ করেছে। গালওয়ানের সংঘাত তার অন্যতম বড় প্রমাণ। সেনা ঢুকিয়ে জোরজবরদস্তি আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা সম্ভব নয় বুঝেই চিন ঘুরপথে একটু একটু করে সীমান্তে তাদের শক্তি বাড়িয়ে চলেছে। শুধু রুটগ ঘাঁটি নয়, ভারতের সীমান্ত বারবর এমন অনেক জনপদ তৈরি করে রেখেছে চিন, যেখানে সেনাদের বসবাস করা ও যুদ্ধাস্ত্র মোতায়েন রাখার মতো ব্যবস্থা রয়েছে। গোয়েন্দা সূত্র বলছে, চিনের স্ট্র্যাটেজি হল ‘বর্ডার ডিফেন্স ভিলেজ।’ এই সব গ্রামগুলিতে সেনা বাঙ্কার তৈরি হবে। অস্ত্রশস্ত্র মজুত করে রাখা হবে। সীমান্তের হালহকিকতের খবর যাবে পিপলস লিবারেশন আর্মির কাছে। সীমান্তে ভারতের সেনা বিন্যাস কেমন, তার গোপন খবরও চলে যাবে চিনের কাছে।
পড়ুন দ্য ওয়ালের সাহিত্য পত্রিকা 'সুখপাঠ'