শেষ আপডেট: 10th October 2020 08:16
দ্য ওয়াল ব্যুরোঃ চিনের বিরুদ্ধে মোকাবিলায় ভারতের পাশে দরকার আমেরিকার, এমনটা আগেই জানিয়েছিলেন আমেরিকার বিদেশসচিব মাইক পম্পেও। এবার তিনি বললেন, ভারতের উত্তর সীমান্তে ৬০ হাজার সেনা মোতায়েন করেছে চিন। আগ্রাসনের প্রশ্নে ফের একবার চিনকে একহাত নিয়েছেন তিনি। গত মঙ্গলবার টোকিওতে ইন্দো-প্যাসিফিক নেশনসের বৈঠক ছিল। সেখানেই ভারত, জাপান, অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে যোগ দিয়েছিল আমেরিকাও। সেদেশের তরফে উপস্থিত ছিলেন বিদেশসচিব মাইক পম্পেও। ভারতের তরফে উপস্থিত ছিলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তাঁদের মধ্যে বেশ কিছুক্ষণ বৈঠকও হয়। এই বৈঠকে চিনের আগ্রাসন নিয়ে ভারত ও আমেরিকা দু’দেশের মধ্যে বৈঠক হয়েছে বলে খবর। আর তারপরেই টোকিও থেকে ফিরে এক সাংবাদিক বৈঠকে নিজের কথা বলেন মাইক পম্পেও। তিনি বলেন, “ভারতের উত্তর সীমান্তে ৬০ হাজার চিন সৈন্য মোতায়েন রয়েছে। এই বিষয়ে ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার বিদেশমন্ত্রীদের সঙ্গে কথা হয়েছে আমার। চিনের কমিউনিস্ট পার্টি যেভাবে আগ্রাসী মনোভাব নিচ্ছে সেই বিষয়ে আমাদের আলোচনা হয়েছে। সবাই নিজেদের দেশে চিনের আগ্রাসনের বিষয়টা দেখছে।” ফক্স নিউজকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে মাইক পম্পেও বলেন, “দেখুন ভারতের উত্তরে চিন ৬০ হাজার সেনা মোতায়েন করে রেখেছে। যখন অস্ট্রেলিয়া করোনাভাইরাসের উৎপত্তি নিয়ে চিনের কাছে প্রশ্ন করল তখন ওরা অস্ট্রেলিয়াকে ভয় দেখাল। ওরা ওদের ভয় দেখাল। আমাদের বন্ধু দরকার। আমাদের নিজেদের মানুষকে রক্ষা করতে হবে। ওরা এর বিরোধিতা করার চেষ্টা করবে। কিন্তু আমাদের শক্ত হয়ে থাকতে হবে। চিনের কমিউনিস্ট পার্টির আগ্রাসনের মোকাবিলা আমাদের করতে হবে। আর এই বিষয়ে সব দেশকে এক হতে হবে। তাহলে অনেক চেষ্টা করলেও ওরা নিজেদের কার্যসিদ্ধি করতে পারবে না।” গত মঙ্গলবার জয়শঙ্করের সঙ্গে আলাদা করে বৈঠক করেন মাইক পম্পেও। দু’দেশের মধ্যে শান্তি ও সুরক্ষা নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে খবর। এই আলোচনা যথেষ্ট ইতিবাচক হয়েছে বলেই জানিয়েছেন পম্পেও। তারপরে তিনি বলেন, “সব দেশ মিলে আলোচনা করে দেখা হয়েছে এই বিষয়ে আমরা আগে চোখ বন্ধ করে ছিলাম। দশকের পর দশক ধরে পশ্চিমী দুনিয়া চিনের কমিউনিস্ট পার্টিকে সুযোগ করে দিয়েছে। এর আগে চিন আমাদের দেশের কর্মসংস্থান ও টেকনোলজি চুরি করে নিয়েছে। এখন আমাদের জমির উপর আঘাত হানার চেষ্টা করছে।” এছাড়া আরও একটি সাক্ষাৎকারে মাইক পম্পেও জানিয়েছেন, “চিনের বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ে পার্টনার হিসেবে আমেরিকাকে প্রয়োজন ভারতের। চিন এই মুহূর্তে উত্তরে ভারতের বিরুদ্ধে প্রচুর সেনা মোতায়েন করা শুরু করেছে। এই ঘটনায় গোটা বিশ্ব জেগে উঠেছে। পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করেছে। এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে আমেরিকা এই আতঙ্কের বিরুদ্ধে লড়াই করে এক উজ্জ্বল পৃথিবী তৈরি করতে চাইছে।” টোকিওর এই বৈঠকের পরে স্বল্প সময়ের জন্য ভারতে আসবেন মাইক পম্পেও। তাঁর সঙ্গে থাকবেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মার্ক এসপার। ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হওয়ার কথা। আগামী সপ্তাহে আমেরিকার ডেপুটি সেক্রেটারি স্টিফেন বিয়েগানেরও ভারতে আসার কথা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সঙ্গে বৈঠক রয়েছে তাঁর। এইসব একগুচ্ছ বৈঠক থেকেই পরিষ্কার ভারত ও আমেরিকা দু’দেশের মধ্যে সম্পর্কের আরও উন্নতি হতে চলেছে। ভারতের সঙ্গে চিনের সম্পর্ক গত এপ্রিল- মে মাস থেকেই উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে। বিশেষ করে লাদাখে বারবার পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে। গত ১৫ জুন চিনা সেনার হামলায় ভারতের ২০ জওয়ান শহিদ হয়েছেন। ভারতের পালটা জবাবে চিনের অন্তত ৩৫ জওয়ান নিহত হয়েছে বলে খবর। বেশ কিছুদিন পরে এই কথা মেনেছে চিন। যদিও কতজন সেনা নিহত হয়েছে সেই বিষয়ে কিছু জানায়নি তারা। ১৫ জুনের পর থেকে সেনার উচ্চপর্যায়ে ও কূটনৈতিক স্তরে ভারত ও চিনের মধ্যে অনেক বৈঠক হয়েছে। কিন্তু প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা নিয়ে কোনও রফাসূত্র বের হয়নি। বারবার সেনা প্রত্যাহারের প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা ভঙ্গ করেছে চিন। তাই ভারতও নিজেদের সীমান্ত নীতি বদলেছে। ভারতের তরফেও সীমান্তে প্রচুর সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। এমনকি প্রয়োজন পড়লে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ভারতীয় সেনাকে। চিনের সঙ্গে এই সমস্যা নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও তৃতীয় দেশের মধ্যস্থতা বা সাহায্য কিছুই চায়নি ভারত। নয়াদিল্লির তরফে বারবার জানানো হয়েছে, নিজেদের এলাকা সুরক্ষিত রাখার ক্ষমতা ভারতীয় সেনার রয়েছে। কিন্তু তাও বারবার আমেরিকার তরফে সাহায্যের কথা বলা হয়েছে। আমেরিকার সম্প্রতি এই মন্তব্যের জবাবে অবশ্য নয়াদিল্লির তরফে কিছু বলা হয়নি।