শেষ আপডেট: 3rd January 2021 07:09
বাছুরের রক্ত, আফ্রিকার বাঁদরের কোষ দিয়ে তৈরি সম্পূর্ণ ভারতীয় টিকা কোভ্যাক্সিন, দীর্ঘ সুরক্ষার দাবি ভারত বায়োটেকের
দ্য ওয়াল ব্যুরো: একই দিনে কোভিশিল্ডের সঙ্গে সঙ্গে ভারত বায়োটেকের টিকা কোভ্যাক্সিনকেও জরুরি ভিত্তিতে টিকাকরণের অনুমতি দিয়েছে ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল। তারপরেই টুইট করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জানিয়েছেন, “যে দুটি ভ্যাকসিনকে জরুরি ব্যবহারের জন্য ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে, সেই দুটিই ভারতে তৈরি হয়েছে। এটা প্রতিটি ভারতীয়র কাছে খুবই গর্বের বিষয়”। সেরাম ইন্সটিটিউট কোভিশিল্ড তৈরি করলেও তা মূলত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা। অন্যদিকে কোভ্যাক্সিন বানিয়েছে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ বা আইসিএমআর, পুণের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ ভাইরোলজি ও ভারত বায়োটেক। তাই বলা যেতে পারে সম্পূর্ণ ভারতীয় উপায়ে, ভারতে তৈরি এখনও পর্যন্ত একমাত্র ভ্যাকসিন এই কোভ্যাক্সিন। ভারত বায়োটেকের এই কোভ্যাক্সিন কীভাবে তৈরি হয়েছে তার কিছুটা ঝলক অবশ্য আগেই দিয়েছিল ভারত বায়োটেক। টিকার সব উপাদান না বললেও মূল কিছু উপাদানের কথা সামনে এনেছে তারা। যেমন সদ্য জন্মানো বাছুরের রক্তের সেরাম, আফ্রিকার বাঁদরের কোষ এই টিকা তৈরিতে বিশেষভাবে কাজে লেগেছে। কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ সেন্টার ফর সেলুলার অ্যান্ড মলিউকিউলার বায়োলজির গবেষক ভি রাধা বলেছেন, গরুর ভ্রূণের সেরাম বা বাছুরের সেরাম যে কোনও ভ্যাকসিনেরই অন্যতম উপাদান। কোভ্যাক্সিন তৈরিতেও এই উপাদানই কাজে লাগানো হয়েছে। এখন সদ্য জন্মানো বাছুরের রক্ত থেকেই সামান্য সেরাম সংগ্রহ করে নেন গবেষকরা। প্রসবের ১০ দিন পরে বাছুরের রক্ত সংগ্রহ করলে তার মধ্যে প্রয়োজনীয় উপাদান পাওয়া যায়। তবে এই সেরামকে সরাসরি অ্যান্টিবডি তৈরির কাজে লাগাতে পারেন না বিজ্ঞানীরা। কিছুদিন সেরামকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় ল্যাবরেটরিতে রাখা হয়। তারপরেই একে ব্যবহার করে শ্বেতরক্তকণিকা তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়। করোনার ভ্যাকসিন তৈরিতে নানারকম পদ্ধতির ব্যবহার করছেন ভাইরোলজিস্টরা। সার্স-কভ-২ ভাইরাল প্রোটিনকে ল্যাবরেটরিতে বিশেষ উপায় নিষ্ক্রিয় করে সেই দুর্বল ভাইরাল স্ট্রেন দিয়েও ভ্যাকসিন ক্যানডিডেট ডিজাইন করছেন বিজ্ঞানীরা। ভারত বায়োটেকের কাজও এমনই। ভাইরোলজিস্টরা বলছেন, সার্স-কভ-২ ভাইরাল স্ট্রেন নিলেই তো হল না তাকে সংশ্লেষ করার জন্য অন্য কোষের দরকার হয়। সেই কোষ হল আফ্রিকার এক বিশেষ প্রজাতির বাঁদরের যাকে বলে African Green Monkey। এই বাঁদরের কিডনির CCl-81 কোষ নিয়ে ল্যাবরেটরিতে তার কালচার করা হয়েছে। সেই কোষকে এরপর বিশেষ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সার্স-কভ-২ ভাইরাল স্ট্রেনের সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর পরে ভাইরাস সমেত সেই কোষকে ৩৬ ঘণ্টা সংশ্লেষ করা হয়েছে এবং তারপরে নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। এবার এই নিষ্ক্রিয় ভাইরাল স্ট্রেনের সঙ্গে অ্যাডজুভ্যান্ট মিশিয়ে তার ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। অ্যাডজুভ্যান্ট হল ইমিউনোলজিকাল উপাদান যা ভ্যাকসিনের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। এই উপাদান থাকলে ভ্যাকসিন আরও দ্রুত রোগ প্রতিরোধ শক্তি গড়ে তুলতে পারে। এরপর সেই নিষ্ক্রিয় ভাইরাল স্ট্রেন সমেত মিশ্রিত কোষকে ল্যাবরেটরিতে একটি বিশেষ মাধ্যমে (Dulbecco’s Modified Eagle Medium) কালচার করা হয়েছে। অর্থাৎ কোষ মিশ্রণকে পুষ্টি দিয়ে তাকে বাড়িয়ে তোলা হয়েছে যাতে সে নিজেই বিভাজিত হয়ে আরও কোষ তৈরি করতে পারে। সেইসব কোষ হবে এমন যা শরীরে ঢুকলে ভাইরাসের নকল করবে। ফলে তার প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি তৈরি হবে শরীরে। ভারত বায়োটেক জানিয়েছে, কোভ্যাক্সিন টিকা মানুষের শরীরে দুর্দান্ত কাজ করেছে। টিকার দুই পর্যায়ের ট্রায়াল রিপোর্ট সামনে এনে সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, করোনাভাইরাস থেকে দীর্ঘমেয়াদী সুরক্ষা দেবে কোভ্যাক্সিন টিকা। এই টিকার ডোজে তৈরি অ্যান্টিবডি টিকে থাকবে অন্তত ৬-১২ মাস। সক্রিয় থাকবে টি-কোষও। সংক্রমণজনিত জটিল রোগের আশঙ্কা থাকবে না।