শেষ আপডেট: 15th November 2019 03:06
রত্নাকে শোভনের এসএমএস, ফাঁস হতেই পার্থর কাছে ছুটলেন বৈশাখী
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ভাইফোঁটার দিন বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি গিয়েছিলেন প্রাক্তন মেয়র তথা প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক শোভন চট্টোপাধ্যায়। দিদির কাছে ফোঁটা নেন তিনি। তারপরেই নাকি স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়কে মেসেজ করে শোভন বলেন, "সত্যের জয় হল। আজ বৈশাখীর সম্মানের জন্য লড়ে জিতলাম তো? মিউচুয়াল ডিভোর্স দাও।" এই নিয়ে দু'জনের মধ্যে মেসেজে কথা কাটাকাটিও হয়। সম্প্রতি এই মেসেজ কাণ্ড ফাঁস হয়ে গিয়েছে। আর তারপরেই শুক্রবার বিকেলে দেখা গেল বিকাশ ভবনে শিক্ষামন্ত্রী তথা তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছেন বৈশাখী। এদিন দুপুরে মা ফ্লাইওভারে দেখা যায় একই গাড়িতে চড়ে যাচ্ছেন শোভন-বৈশাখী। কিন্তু বিকেলে দেখা যায় বিকাশ ভবনে একাই ঢুকছেন বৈশাখী। প্রশ্ন ওঠে, তাহলে কোথায় গেলেন শোভন? গাড়িতেই কি বসে রয়েছেন তিনি? নাকি বিকাশ ভবনে যাওয়ার আগে অন্য কোথাও নেমে গিয়েছেন কলকাতার প্রাক্তন মেয়র। যদিও বৈশাখী ও পার্থবাবু দু'জনেই দাবি করেছেন তাঁদের মধ্যে কাজের কথা হয়েছে। দল নিয়ে কোনও কথা হয়নি। পার্থবাবুর সঙ্গে কথা বলে বেরিয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে বৈশাখী বলেন, "আমার কলেজের ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলাম। তাঁর সঙ্গে কাজের কথা হল। শিক্ষামন্ত্রী আমাকে বারবার বলেছেন যখনই কোনও দরকার পড়বে ওনার কাছে যেতে। তাই আমি এসেছি। দল নিয়ে কোনও কথা হয়নি। আমি ও শোভনবাবু বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর থেকেই অনেক ঘটনা ঘটেছে। অনেকবার আমাকে অপমানিত হতে হয়েছে। আমার মনে হয় আমার মতো অল্পশিক্ষিতদের বিজেপিতে কোনও দরকার নেই।" অন্যদিকে এই সাক্ষাতের ব্যাপারে পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, "উনি আমার সঙ্গে কাজের ব্যাপারে কথা বলতে এসেছিলেন। ওনার কলেজে কিছু সমস্যা হয়েছে। সে ব্যাপারেই আমার সঙ্গে কথা হয়েছে। উনি কোন দলের হয়ে কাজ করবেন যে ব্যাপারে তো আমি কিছু বলতে পারি না। এ ব্যাপারে মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নেবে। আমি নই।" বৈশাখী ও পার্থ যাই বলুন না কেন এই সাক্ষাৎ ঘিরেও জল্পনা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। কারণ ভাইফোঁটার পরের দিনই রত্না গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এই মেসেজের ব্যাপারে অভিযোগ করেছিলেন। তৃণমূলের একটি সূত্রের খবর, ওইসব মেসেজ দেখে বেজায় চটে যান দিদি। কেন না দিদির বাড়িতে শোভনের ফোঁটা নেওয়াকে যদি বৈশাখীর জয় হিসাবে কেউ তুলে ধরেন, তা হলে তা নেত্রীর জন্য অপমানের বইকি। তিনি শোভনকে ফোন করেন। জানতে চান, কেন এইসব মেসেজ তিনি করেছেন রত্নাকে? যতদূর জানা গিয়েছে, শোভন দিদিকে বলেন মেসেজগুলি তিনি পাঠাননি। তিনি এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না। অন্যদিকে দ্য ওয়াল-কে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, "যেদিন শোভন চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন যে রত্না চট্টোপাধ্যায়কে ডিভোর্স দেবেন সেদিন থেকেই তিনি রত্নার নম্বর ব্লক করে রেখেছেন। কিন্তু তারপরেও ভাইফোঁটার দিন রাতে রত্নার নম্বর থেকে শোভনবাবুর ফোনে বেশ কিছু মেসেজ আসে।” বৈশাখীর অভিযোগ সেইসব মেসেজে তাঁর সম্পর্কে বেশ কিছু অশীষ্ট কথাবার্তা লেখা ছিল। এই গোটা ব্যাপারটা তৃণমূলের কয়েকজন শীর্ষ নেতৃত্বকে জানানো হয় বলেও দাবি করেছেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। মেসেজ যে শোভনবাবুই করেছেন তা নিয়ে নিশ্চিত নন রত্না নিজেও। রাজনৈতিক মহলের একাংশের বক্তব্য, এই মেসেজ কাণ্ড এতদিন তৃণমূলের অন্দরেই ছিল। কিন্তু সম্প্রতি তা ফাঁস হয়ে যাওয়ায় পুনরায় চাপ বেড়েছে শোভন-বৈশাখীর উপর। কারণ দিদির বাড়িতে শোভন ভাইফোঁটা নিতে যাওয়ার পরেই দলের মধ্যে কিছু নেতা মন্ত্রী ‘আশঙ্কা’ করতে শুরু করে দিয়েছিলেন যে ফের মন্ত্রিসভায় কাননকে (শোভনকে ওই নামেই ডাকেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) ঠাঁই দিতে পারেন দিদি। কিন্তু এই মেসেজের কথা জানাজানি হতে শোভনের দলে ফেরার জল্পনা অনেকটাই ঠাণ্ডা হয়ে যায়। সেই ক্ষতে প্রলেপ দিতেই কি পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হলেন বৈশাখী।