শেষ আপডেট: 8th June 2020 03:48
বাবা স্মার্টফোন কিনে দিতে পারেনি বলে অনলাইন ক্লাস করা হয়নি, আত্মঘাতী হল ছাত্রী
দ্য ওয়াল ব্যুরো: স্কুল বলছে অনলাইনে ক্লাস করতে। যে গরিব পরিবারে কারও স্মার্টফোন নেই, বাড়িতে ইন্টারনেট কানেকশন নেই, তাঁদের কী হবে! সমাজে বৈষম্যের পরিবেশ তৈরি হবে না তো! এমন উদ্বেগ ছিলই শিক্ষামহলে। সেই উদ্বেগ সত্যি প্রমাণিত হতে শুরু করে দিল। অনলাইনে ক্লাস করতে না পেরে আত্মঘাতী হল একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। পুলিশ সূত্রের খবর, পঞ্জাবের মানসা জেলায় গত শুক্রবার আত্মঘাতী হয়েছে ১৭ বছরের ওই কিশোরী। এর আগে কেরলেও একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। আত্মঘাতী ছাত্রীর বাবা পেশায় ক্ষেতমজুর। এমনিতেই অভাব অনটনের মধ্যে দিয়ে সংসার চলে। তার মধ্যে লকডাউনে অবস্থা আরও করুণ। এ অবস্থায় বেশ কয়েকদিন ধরেই অনলাইন ক্লাসের জন্য বাবার কাছে স্মার্টফোনের আবদার করেছিল মেয়ে। তবে ক্ষেতমজুর জগসীর সিংয়ের সামর্থ্য হয়নি মেয়েকে স্মার্টফোন কিনে দেওয়ার। ফলে অনলাইন ক্লাসের সুযোগ হয়নি ওই কিশোরীর। তার জেরেই কিশোরী আত্মহত্যা করেছে বলে জানিয়েছে পরিবার। নিজের বাড়িতেই গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী হয়েছে ওই ছাত্রী। চলতি মাসের প্রথম দিকে এমনই এক ঘটনা ঘটেছিল কেরলের মালাপ্পুরম জেলায়। দরিদ্র পরিবারের সন্তান হওয়ায় দেবিকা বালাকৃষ্ণণের কাছে স্মার্টফোন ছিল বিলাসিতা। নবম শ্রেণির ওই ছাত্রীর বাড়ির টিভিও খারাপ হয়ে গিয়েছিল। ফলে অনলাইন ক্লাসের কোনও ব্যবস্থাই করা সম্ভব হয়নি। পড়াশোনা ঠিকভাবে না হওয়ায় কয়েকদিন ধরে মনমরাও হয়েছিল দেবিকা। তারপর গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করে সে। বাড়ির কাছে পরিত্যক্ত এলাকা থেকে উদ্ধার হয় তার দেহ। সুইসাইড নোটও উদ্ধার করে পুলিশ। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে গত ২৫ মার্চ থেকে লকডাউন জারি হয়েছিল ভারতে। সম্প্রতি ১ জুন থেকে সরকার বিধিনিষেধে ছাড় দিলেও স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে। পড়ুয়াদের যাতে ক্ষতি না হয় সেজন্য অনলাইন ক্লাসে চলছে পড়াশোনা। অগস্ট মাসের আগে স্কুল-কলেজ খোলার সম্ভাবনা নেই বলেই জানিয়েছে সরকার। সরকার যখন অনলাইন ক্লাসের কথা বলেছিল, তখনই শিক্ষাবিদদের অনেকে প্রশ্ন তুলেছিলেন, গ্রাম-মফস্বলের ছেলেমেয়েদের কী হবে? কারণ গ্রামে অনেকের কাছেই স্মার্টফোন নেই। বাড়িতে টিভি নেই। তা হলে কি তাঁরা পঠনপাঠন বন্ধ করে দেবে। তা ছাড়া এর ফলে সমাজে বৈষম্যও তৈরি হতে পারে। যদিও সেই উদ্বেগে কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার কেউই গুরুত্ব দেয়নি। পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, পাঞ্জাবের এই ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন ভাবে দেখা ঠিক নয়। স্কুল কলেজ কবে খুলবে স্থিরতা নেই। সরকারকেই বিকল্প ব্যবস্থার কথা ভাবতে হবে।