শেষ আপডেট: 3rd October 2019 10:46
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বয়স এখানে সংখ্যা মাত্র। এ কথা যে তাঁরা শুধু বিশ্বাস করেন তা-ই নয়, জীবনে পালনও করেন সেটা। তাই তো এখানে কারও বয়স ১০০ ছুঁলেই সবাই মিলে উদযাপনে মেতে ওঠে হইহই করে! পার্টি করেন পুরো উদ্যমে, খেলেন মিউজ়িক্যাল চেয়ার, এমনকি ছোটেন মাঠেও! তাঁরা অন্ধ্রপ্রদেশের বিজয়ওয়াড়ার একটি ট্রাস্টের তরফে গড়ে তোলা বৃদ্ধাশ্রমের সদস্য। তাঁরা জীবনের শেষ সময়টাতে যতটা আনন্দ করে নেওয়া সম্ভব, ততটাই করতে বিশ্বাসী। তাই তো ১০১ বছরের মাল্লা ভীব়্যা বলছিলেন, "এখানে ১০ বছর হল আছি। যে আনন্দ পাচ্ছি, সারা জীবনের যন্ত্রণা, লড়াই যেন ভুলিয়ে দিচ্ছে। এত ভাল কখনও থাকিনি।" সম্প্রতি ওই ট্রাস্টের তরফে একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। ১৫ জন ১০০ পার করা বৃদ্ধ-বৃদ্ধাকে সেখানে সংবর্ধনা জানিয়েছেন মন্ত্রী ভেল্লামপাল্লি শ্রীনিবাস রাও। সেই অনুষ্ঠানে আয়োজিত হয়েছিল স্পোর্টসের! ১০০ মিটার দৌড়ে সেখানে জিতেছেন মাল্লা দেবী। শতবর্ষের আরও নয় তরুণ যোদ্ধা অংশগ্রহণ করেছিলেন তাতে। কী উৎসাহ, কী স্ফূর্তি! যেন জীবনের জয়গান গাওয়ার এটাই সময়! ২০০৭ সালে চালু হয় এই বৃদ্ধাশ্রম। বহু বৃদ্ধ-বৃদ্ধার বয়স হওয়ার পরে কাজ করার ক্ষমতা হারিয়ে যায়। কাউকে কাউকে ব্রাত্য করে দেওয়া হয় পরিবার থেকে। সেই সব মানুষদের নিয়েই প্রথমে শুরু হয়েছিল আশ্রম। তার পর থেকে, সেখানে কেউ ১০০ পেরোলেই আনন্দ উৎসবের আয়োজন করা হয়। মানুষগুলোকে খুশি করার জন্য, আনন্দ দেওয়ার জন্য কর্মকর্তারা আয়োজন করেন নানা রকম খেলা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। সদ্য ১০০ ছোঁয়া ভি সীতা মহালক্ষ্মী যেমন বলছিলেন, "আমি এক সময়ে ছেলেমেয়েদের জন্য কী না করেছি! কিন্তু আমার বয়স হয়ে যাওয়ার পরে, আমায় ছুড়ে ফেলে দিল ওরা। একটা বৃদ্ধাশ্রমে ঠাঁই হয়েছিল। সারা দিন বদ্ধ জন্তুর মতো কাটত। অসহনীয় যন্ত্রণায় পার করেছিলাম কয়েকটা বছর। তার পরে এখানে এলাম। এখন আর দুঃখ করার সময় পাই না। এত আনন্দ, এত খুশি-- সব সময়েই মেতে থাকি আমরা। ছেলেমেয়েরা আসে মাঝে মাঝে দেখতে। হেসে কথা বলি, ওই পর্যন্তই।" ১০২ বছরের জে নাগাম্মার অভিজ্ঞতাও একই। কাজের ক্ষমতা ফুরিয়ে যাওয়ার পরে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিল পরিবার। কিন্তু এই বৃদ্ধাশ্রমে এসে ফের জীবন ফিরে পেয়েছেন তিনি। তাঁর আনন্দ কেড়ে নিতে পারেনি কেউ। শতবর্ষের পি ভেঙ্কাইয়া জানালেন, ৩০ বছর আগে তাঁর স্ত্রী ওসন্তানকে হারিয়েছেন তিনি। তার পরে শ্রমিকের কাজ করে কোনও রকমে দিন গুজরান করতেন। কিন্তু এই বয়সে কাজের সুযোগও ক্রমেই কমে আসে। তার পর থেকে বৃদ্ধাশ্রমই ঠিকানা। তাঁর সারা জীবনের পরিশ্রম এবং সুষম খাওয়াদাওয়াই তাঁর এই জিবনীশক্তির রহস্য বলে জানালেন ভেঙ্কাইয়া। তবে বলাই বাহুল্য, শুধু আনন্দ আর খেলা নয়। প্রতিটা বৃদ্ধ বৃদ্ধার চিকিৎসার বিষয়ে অত্যন্ত যত্নশীল এই ট্রাস্ট। নিয়মিত মেডিক্যাল ক্যাম্প চালানো হয় এই বৃদ্ধাশ্রমে এবং অন্যত্রও। পরিবার যাদের থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে, তাদের ছায়া দেওয়া পুণ্যের কাজ-- এমনটাই মনে করেন ট্রাস্ট কর্তারা। আর তাঁদের তত্ত্বাবধানে থাকা বৃদ্ধবৃদ্ধারা বলছেন, "আনন্দই হল জীবনের আসল ওষুধ। ওটা বজায় থাকলে, জ্বরা স্পর্শ করতে পারে না।"