শেষ আপডেট: 20th August 2023 04:32
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বেমালুম উবে যাচ্ছে মেঘ। অসম্ভব দ্রুত হারে।
নাসার হাবল স্পেস টেলিস্কোপ (Hubble Space Telescope) এই ব্যাপারটা লক্ষ্য করেছে। সূ্র্যের চারদিকে একবার চক্কর কাটতে নেপচুনের সময় লাগে ১১ বছর। এই ১১টা বছরে নেপচুনের যে যে দিক সূর্যের সামনে আসে সেখানেই বড় রাসায়নিক বদল হয়। উবে যায় বায়ুমণ্ডল। আবার সূর্য থেকে দূরে গেলে ধীরে ধীরে মেঘের বলয় তৈরি হয়।
১৯৮৯ সালে নাসার ভয়জার ২ স্পেসক্রাফ্ট নেপচুনের (Neptune) খুব কাছ থেকে তোলা ছবি পৃথিবীতে পাঠিয়েছিল। সেই ছবিতে দেখা গিয়েছিল নেপচুনকে ঘিরে রেখেছে ঘন ধোঁয়া ধোঁয়া মেঘের কুণ্ডলী। কিন্তু এখন সেই মেঘ উধাও হয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, নেপচুনের মেঘের স্তর গ্রাস করে নিচ্ছে সূর্যের আগুনে রশ্মি এবং চুম্বকীয় ক্ষেত্র।
পৃথিবী থেকে নেপচুনের (Neptune) দূরত্ব ৪৩০ কোটি কিলোমিটার। পুরু বরফের চাদরে মোড়া গ্রহটি রহস্যময়। নেপচুনের বলয় সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের আগ্রহ অনেক দিনের। কিন্তু, উপযুক্ত প্রযুক্তির অভাবে এত দূরের গ্রহের চার দিকের বলয় ভাল ভাবে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয়নি। সেই ভয়েজার ২ মহাকাশযানের তোলা ছবিতে শেষ বার দেখা গিয়েছিল নেপচুনের বলয়। তার পর থেকে আর এই বলয়ের দেখা পাননি গবেষকরা।
তিন দশক আগে নেপচুনের বলয়ের যে ছবি দেখা গিয়েছিল, তা ছিল খুবই অস্পষ্ট। জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ সেই সময় ছবি পাঠিয়েছিল মহাকাশ থেকে। সূর্যের চেয়ে পৃথিবী যত দূরে, নেপচুনের দূরত্ব তার তিন গুণ। সৌরজগতের এক কোণে অন্ধকারময় অঞ্চলে আপন কক্ষপথে ঘোরে এই গ্রহ। বিজ্ঞানীরা জানান, নেপচুনের ভরদুপুর পৃথিবীর গোধূলির সমান। নেপচুনকে অতিকায় তুষারের গোলা (আইস জায়েন্ট) বলেন কেউ কেউ। মহাকাশ থেকে এই গ্রহকে গাঢ় বেগুনি রঙের দেখায়। সেই সঙ্গে এই গ্রহের গায়ে এক প্রকার নীলচে আভাও দেখা যায়।
নাসার বিজ্ঞানীদের দাবি, সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি নেপচুনকে (Neptune) প্রচণ্ড প্রভাবিত করে। এমন এক চুম্বকীয় ক্ষেত্র তৈরি হয় যা নেপচুনের মেঘের বলয়কে শুষে নেয়। ফটোকেমিক্যাল বিক্রিয়ায় নেপচুনের মেঘ উবে যায়।
এই ব্রহ্মাণ্ডে আমাদের ছায়াপথ ‘মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সি’র অন্যান্য নক্ষত্রমণ্ডলের চেয়ে আমাদের সৌরমণ্ডল একেবারেই ব্যাতিক্রমী। অন্যান্য নক্ষত্রমণ্ডলে জন্মদাতা তারা বা নক্ষত্রদের অনেক বেশি কাছে আছে বিশাল আর গ্যাসে ভরা ভারী গ্রহগুলি। তাদের চেয়ে অনেক দূরে রয়েছে ছোট ছোট পাথুরে গ্রহগুলি। যেগুলি আকার, আকৃতিতে আমাদের পাথুরে বুধ, মঙ্গল, শুক্র, পৃথিবীর মতো। বা পৃথিবীর চেয়ে একটু বড় (সুপার আর্থ, মোটামুটি দেড় গুণ বড় হলে)। কিন্তু আমাদের সৌরমণ্ডলে ঘটেছে ঠিক উল্টো ঘটনাটা। এখানে বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস, নেপচুনের মতো সুবিশাল, খুব ভারী আর গ্যাসে ভরা গ্রহগুলি রয়েছে সূর্য থেকে অনেক বেশি দূরে। বরং তুলনায় সূর্যের অনেক কাছাকাছি রয়েছে পৃথিবী, মঙ্গল, শুক্র, বুধের মতো ছোট ছোট পাথুরে গ্রহগুলি। কিন্তু আশ্চর্য ব্যাপার হল দূরে থাকা ভারী গ্যাসীয় গ্রহ যেমন নেপচুনের উপরেও কিন্তু সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মির প্রভাব বেশি। যে কারণেই এমন আজব ঘটনা ঘটে চলেছে।