মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তার অনিকেত মাহাতো, দেবাশিস হালদার এবং আশফাকুল্লা নাইয়া
শেষ আপডেট: 21st October 2024 14:50
দ্য ওয়াল ব্যুরো: জুনিয়র ডাক্তারদের নবান্ন প্রস্তাব দিয়েছিল, তাঁরা যেন অনশন প্রত্যাহার করে সোমবারের বৈঠকে যোগ দেন। কিন্তু ডাক্তাররা তা মানতে চাননি। বরং জানিয়েছেন, ১০ দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অনশন প্রত্যাহারের প্রশ্নই নেই। তবে হ্যাঁ, সোমবার বিকেল পাঁচটায় নবান্নের বৈঠকে যোগ দিতে যাচ্ছেন ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্টের প্রতিনিধিরা।
পর্যবেক্ষকদের অনেকে মনে করছেন, জুনিয়র ডাক্তারদের অনশন তুলে নেওয়ার জন্য একটা সম্মানজনক এক্সিট রুট দিতে নবান্ন এক কদম এগিয়েছে। বিশেষ করে গত শুক্রবার ডাক্তারদের একাংশ সাংবাদিক বৈঠক করে যেভাবে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের জন্য বার্তা দিতে শুরু করেছিলেন, তাতে একটা ধারণা তৈরি হচ্ছিল যে এবার তাঁরা অনশন থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজছেন। ডাক্তারদের আন্দোলনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে বাম রাজনৈতিক দলগুলির মদত রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছিল। সেদিক থেকে বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসুর মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে খোলা চিঠিও প্রাসঙ্গিক। তিনিও দাবি করেছিলেন, আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠকে বসুন মুখ্যমন্ত্রী।
এখন কৌতূহলের বিষয় হল, এর পরেও ডাক্তাররা কিছু দাবি নিয়ে জেদাজেদি করলে এর ভবিষ্যৎ কী হতে পারে?
নবান্নের এক কর্তার মতে, আন্দোলনকারীদের অধিকাংশই চাইছেন অনশন প্রত্যাহার করা হোক। কিন্তু কিছু মুরুব্বি চাপ দিয়ে তাঁদের অন্ধ গলিতে ঠেলে দিতে চাইছেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে, ডাক্তারদের সমস্ত নায্য দাবি মানতে সরকার প্রস্তুত। কিন্তু স্বাস্থ্য সচিবের অপসারণ ও রাজনৈতিক দাবির কাছে সরকার আর নরম হবে না।
আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের দাবি মেনে এর আগে কলকাতার পুলিশ কমিশনার পদ থেকে বিনীত গোয়েল এবং স্বাস্থ্য দফতরের দুই শীর্ষ পদস্থ কর্তাকে সরিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। হাসপাতালের নিরাপত্তা বাড়ানো-সহ আন্দোলনকারীদের ১০ দফা দাবির একাধিক পূরণের প্রক্রিয়াও শুরু করেছে রাজ্য। কিন্তু সরকার যে রাজনৈতিক দাবি মানবে না সে ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীও স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি পরিষ্কার জানিয়েছেন, দশ দফা দাবির দ্বিতীয় নম্বর তথা স্বাস্থ্য সচিবকে সরানোর দাবি কোনওভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। তা ছাড়া সোমবার বিকেল ৫টায় মিটিং ডাকা হয়েছে। ৫টা মানে ৫টাতেই আসতে হবে।
নবান্ন সূত্রের দাবি, এরপরও ডাক্তাররা নমনীয় না হলে অনশনকারীরাই বিপন্ন হতে পারেন। সে জন্য দায়ী থাকবেন এক শ্রেণির সিনিয়র ডাক্তার ও রাজনৈতিক নেতা। কারণ, আগামী ১৩ নভেম্বর রাজ্যের ৬ কেন্দ্রে বিধানসভা উপ নির্বাচন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবার জেলা সফরে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন। ফলে এদিনের বৈঠকে সমাধান সূত্র বের না হলে আগামী দিনে কিন্তু জট কাটানোর 'এক্সিট রুট' পেতে আরও বড় সমস্যার মধ্যে পড়তে হতে পারে জুনিয়র ডাক্তারদের।
এদিকে নবান্নের বৈঠকে সমাধান সূত্র বের না হলে মঙ্গলবার থেকে রাজ্যের সরকারি ও বেসরকারিক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ধর্মঘটের হুঁশিয়ারি দিয়েছে আন্দোলনকারীরা। এও বলেছে, ওই সময় কোনও রোগীর কিছু হলে তার জন্য দায়ী থাকবে রাজ্য।
পাল্টা হিসেবে তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ এদিন এক ভিডিও বার্তায় আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, বাম বা অতিবামের প্ররোচনায় পা দিয়ে জুনিয়র ডাক্তাররা জোর করে প্রতিবাদ, অনশন জিইয়ে রাখতে চাইছেন। তার জন্যই তাঁরা সোমবারের বৈঠকও জেদ করে ভেস্তে দিতে পারেন। সেক্ষেত্রে আগামীকাল স্বাস্থ্য ধর্মঘট হলে বাংলার কোথাও যদি কোনও রোগীর ক্ষতি হয়, তাহলে নিকটবর্তী থানায় ডাঃ দেবাশিস হালদার, ডাঃ অনিকেত মাহাতোর নামে এফআইআর করার জন্য রাজ্যবাসীর কাছে আবেদন রেখেছেন তিনি।
তাৎপর্যপূর্ণভাবে, আন্দোনকারীদের অন্যতম মুখ জুনিয়র চিকিৎসক কিঞ্জল নন্দ এই বিশৃঙ্খলার মধ্যে নেই বলে দাবি করেছেন কুণাল। তাঁর নামে এফআইআর না করার আর্জিও রেখেছেন। অর্থাৎ কুণাল কৌশলে বোঝাতে চেয়েছেন, এভাবে অনশন চালিয়ে যাওয়া নিয়ে আন্দোলনকারীদের মধ্যেও মতান্তর তৈরি হয়েছে।
বস্তুত, আন্দোলনকারীদের একাংশ এবং সিনিয়র চিকিৎসকদের একাংশও চাইছেন, অনশন কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হোক। আন্দোলনের অন্যতম মুখ এক জুনিয়র চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে রবিবার রাতে দ্য ওয়ালকে জানিয়েছিলেন, "বিশ্বাস করুন, আমরা সহপাঠীর বিচারের দাবিতেই আন্দোলনে নেমেছিলেন। রাজনীতি হোক, সেটা চাইনি।কিন্তু আমাদের কিছু সহপাঠীকে তো মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।"
এখন দেখার, বিকেলের বৈঠকে জট কাটে কি না। না হলে পরিস্থিতি যে আরও জটিল হবে তা বলাই বাহুল্য।